www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

জোৎস্না আজ নিস্প্রভ- (১)

জোৎস্না আমার সহপাঠী ছিল।নামটা যেমন জোৎস্না ছিল তেমনি মেয়েটির চেহারাতেও সত্যিই ছিল পূর্ণিমার চাঁদের আলোকদূতী।এক কথায় সে এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে ছিল।সে আকাশী স্কার্ট ও সাদা স্কুল সার্ট পরে একটি কালো দামী ব্যােগে ব‌ই খাতা নিয়ে স্কুলে আসত। যে যখন তাকে দেখত প্রত্যোকেই একবার ফিরে তাকাতে বাধ্য হত বিশেষ করে তার ফুটফুটে পরিস্কার কোমল গালে কালো বড় তিলটির জন্য।জোৎস্নাকে স্কুলের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা খুবই ভালবাসত। সে পড়াশুনাতেও খুব ভালো ছিল।শুনেছি আমাদের অশোক স্যাযর জোৎস্নার জন্য দিবানা ছিলেন।তিনি জোৎস্নার বাড়িতেও বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন,কিন্তু সমাজের সংস্কার আর জোৎস্নার বয়স কম থাকায় আশোক স্যা রের বাড়ি জোৎস্নার আলোকে আলোকিত হতে পারেনি।
আসলে একজন সুন্দরী মেয়ের যে সকল রঙরূপ বা গুণ থাকবার কথা জোৎস্না তাতে টুইটুম্বুর ছিল।আসলে কাউকে ভালোলাগা বা ভালোবাসা জিনিসটা দশম শ্রেণীতে পড়লেও ঠিক ঠাক ভাবে বুঝতেই পারতাম না।আর যদি বুঝতে পারতাম তাহলে হয়তো জোৎস্নার সাথে কমপক্ষে একটা ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক র‍‍‌ক্ষা করতাম।জোৎস্নার বাবার একটি মুদী দোকান ছিল তাদের বাড়ির পাশের বাজারে।বাবার সরকারি চাকরি নাহলেও পরিবার তাদের ভালোই চলত-তা মেয়ের বেশভূষা ও চলাফেরা দেখেই অনুমান করা যেত।জোৎস্না ও আমি, আমার দুজনেই ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত একই বিদ্যাালয়ে একই শ্রেণীতে পড়তাম।আবার আমারা পরস্পরকে 'তুই' বলেই সম্বোধন করতাম-আমাদের মধ্যে প্রেম জাতিয় কিছু না থাকলেও আন্তরিকতা কম ছিল না।সে সপ্তাহের অধিকাংশ দিন‌ই বিদ্যা লয়ের কাছে অবিনাশের দোকান থেকে ভাজা মটর কিনে আমাদের খাওয়াতো।অন্যহদের কথা বলতে পারি না,কিন্তু আমি অত্যাোন্ত তৃপ্তি সহকারে জোস্নার দেওয়া মটর ভাজা খেতাম।এক একটি মটর কাগজের ঠোঙা থেকে তুলে মুখে ঢিল মারতাম আর মনে মনে জোৎস্নাকে ধন্যবাদ জানাতাম।কিন্তু যতটুকু মনে পড়ে জোৎস্নাকে  খাওয়ানোর জন্য কোন দিনই কিছুই বলিনি।হয়তো বা কাউকে ভালো কাজের জন্য অথবা কোন কিছু ভাগ করে খাওয়ানোর জন্য ধন্যবাদ জনাতে হয় এই কথায়‌ই জানতাম না নতুবা তাকে ধন্যবাদ জানানোর
প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতাম না।
গতকালকের দিন আর আজকের দিন কখনো এক রকম হয় না।আবার গতদিনের আমি এবং আজকের দিনের আমিত্বের মধ্যে পার্থক্য বুঝা না গেলেও ভবনার পরিবর্তন অনবরত ঘটেই চলছে।মানুষের চাওয়া পাওয়া অনেকটাই বদলাতে থাকে সিঁড়ির মতো।সাল ১৯৯৪ আমরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসি।পড়াশোনায় আমি চিরকালই মধ্য ম মানের ছিলাম,কখনো খুব ভালো বা খুব খারাপ এই দুই তালিকায় পড়িনি।তবুও মাধ্যমিক পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে কোন ক্রমে পাশ করি -তাই একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পাই।কিন্তু খুব খারাপ লাগছিল জোৎস্না পাশ করতে পারেনি।অবশ্য এর জন্য জোৎস্না তেমনটা দায়ী ছিল না-এক শিক্ষক পাত্র মেয়েকে সামাজিক কারণে বিয়ে দিতে না পারায় তার মা বাবার মাথায় মেয়েকে অসময়ে বিয়ে দেবার ভূত চেপে বসে।ক্রমে অজান্তেই জোৎস্নার পড়ায় অবহেলার বাড়তে থাকে;কেউ আর জোৎস্নাকে পড়ার কথা বলে না।একের পর এক পার্টি আসে জোৎস্নাকে দেখে কথা বলে,মিষ্টি খায়,পান চিবায় এবং যাবার সময় মেয়েটির মনে শ'পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বড় বড় দাগ কেটে ফিরে যায়।একের পর এক লোক আসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার জন্য।(চলবে)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৩০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৩/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ০।।০ ১৮/০৪/২০১৭
    অনেক অনেক সুন্দর লিখন ।। শুভ কামনা নিরন্তর
  • ভালো।
  • রাবেয়া মৌসুমী ২৫/০৩/২০১৭
    সব টুকু পড়ে নেই,তার পর..
  • ভেবোনা বন্ধু সব ঠিক হয়ে যাবে!

    অনেক অনেক স্বান্তনা রইল।
    • মধু মঙ্গল সিনহা ২৫/০৩/২০১৭
      হ‍্যাঁ,।ভালো লাগলো।
      • শুভ কামনায়
        তোমারই গুণমুগ্ধ!!
  • মধু মঙ্গল সিনহা ২৫/০৩/২০১৭
    সুপ্রভাত।
 
Quantcast