www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শতাংশ জীবন-৩ (টুকটুক হাঁটা)

সময় বড়ো অস্থির। আপন গতিপথে নিজস্ব আবেদনকে তুলে ধরে সে ক্রমাগত চলে যায়। কোন অন্ধকারের বাঁধা তার পথরোধ করতে পারে না। নদীর সাথে সময়ের নাকি মিল খুঁজে পেয়েছিলো প্রাচীন বোদ্ধাগণ। তাই, তাদের কাছে সময় ও নদীর স্রোত তুলনীয় হয়েছিলো। নদীতে চর পড়ে, নদীর গতিপথ বাঁক নেয়; মানুষের নিষ্ঠুর অবহেলা আর অত্যাচারে নদী শুকিয়ে যায়, নদীর জীয়ন শক্তি কমে কমে হয়তো একদিন মরনকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়। অতএব, নদীর সাথের সময়ের আর তুলনা করা যথার্থ হবে না। সময় চির যৌবনা, প্রবাহমান। হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গটাকে সময়ের সামনে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করলেও, তা অবরুদ্ধ হবে না; বা বাঁক নিয়ে অন্য পথে গমন করবে না। তার সরল গতি সাবলীল শক্তিতে এগিয়ে যায় সম্মুখ পানে। সময় বড়োই মায়া-মমতাহীন।

একদিন দুগ্ধস্বাদ নিতে গিয়ে অনুভূত হলো, মায়ের স্তনে চিরতার তিক্ততা। দু'বছরের পাজি সন্তানের শক্ত দাঁতের কামড় তাঁর কাছে কষ্টকর মনে হলো। হাতে তুলে দিলো চিকন নলওয়ালা পিতলের বদনা। খুবই সুন্দর জিনিষ। কোমরে ঘুঙুর বাঁধা দুরন্ত ছেলেটা ধুলো ধুসরিত হয়ে ঘরে ফিরে প্রথমে খুঁজে নিতেম ঢাকনা দেয়া 'দুধের বদনা' (এখনকার মতো দুধের বোতল ছিলো কি না, জানিনা)। সারাদিন এ ঘর, ও ঘর। মায়ের আচলে মুখ ঢেকে লুকোচুরি খেলা।

সারাদিনের বিবিধ খেলা শেষে, যখন পশ্চিম দিগন্তে লাল-নীল-সবুজাভ আভা বিস্তৃত সীমানা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যখন যখন চরের চারণভূমি হতে রাখাল বালকেরা দিনান্তে গরু-বাছুর লয়ে ঘরে ফিরে। তাদের ক্লান্ত উদাস কন্ঠে দিবসের শেষ গানের সুরের রেশটুকু গুনগুনিয়ে প্রতিধ্বনিত হয়। ঠিক তার প্রাক্কালে আমার মা একটি বড় 'পিড়ি' (কাপড় কাঁচার জন্য ব্যবহৃত হতো) উঠোনে এক কোনে রেখে দিতো। পাশে থাকতো গরম পানির পাত্র। স্বর্গ থেকে প্রাপ্ত সত্তর হাজার রেশমী কাপড়ের জন্মদিনের পোষাক পরিধান করে পিড়িতে দাঁড়িয়ে হাঁক দিতেম মিহি গলার সর্বোচ্চ উচ্চগ্রামে, মা....

আমার এই ডাকের জন্যই বুঝি অপেক্ষা করতেন। গামছা হাতে সাবান নিয়ে এসে, চিরাচরিতভাবে যে কথাটি বলতেন শাসনের সাথে, তা প্রতিদিনই প্রায় একই রকম ছিলো। ' কি অবস্থা করিছিস! রাজ্যির সব ধুলাবালি গায়ে করে নিয়ে এসেছিস, কাল থেকে খেলা বন্ধ।'

গামছা দিয়ে ডলে ডলে গায়ের ময়লাগুলো পরিস্কার করতেন। মনে হতো, বাদামী বাঙালি দেহটাকে ঘসে ঘসে প্রাশ্চাত্যের ইংলিশম্যান করে দিবেন। নাক, কান, পায়ের পাতা ঘসে জ্বালা ধরিয়ে দিতো। তারপর, ঘরে এনে শরীর মুছে, এক খাবলা সরিষা তেল মাথার তালুতে রেখে সেখান থেকে হাতের তালুতে নিয়ে সারা শরীর তৈলমর্দন করে তারপর পৃথিবীর বস্ত্র পরায়ে দিতেন।

খাওয়ার পর বিছানার যাওয়ার সাথে সাথেই শুরু হতো গল্প শোনার পালা। ডালিম কুমারের গল্প, কাঞ্চন মালার গল্প। কাঞ্চন মালার গল্পের মাঝে মাঝে পয়ার সুরে গীত গেতেন। গল্পের সময় কন্ঠস্বর স্বাভাবিক থাকলেও, গীতের সময় কেমন একটি মিহি সুরের আওয়াজে বলতেন।

কঙ্কন দিয়ে কেনা দাসী হইলো রাজার রাণী
কাঞ্চন মালা কান্দে দেখো ফেলে চোখের পানি .....
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৪৭৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/১১/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসাধারণ। আমার মায়ের সাথে আজ ফোনে কথা হয়নি। আপনার লিখা মাকে ফোন দিতে উৎসাহিত করেছে। ধন্যবাদ।
    • কবীর হুমায়ূন ০৪/১২/২০২০
      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। মা জীবনের পরম প্রাপ্তি। হারানোর পরই এ ধনের মূল্য বুঝা যায়। প্রাণ খুলে কথা বলার একজনই পৃথিবীতে থাকেন, সে হলো মা। সকল কষ্টের কথা, আনন্দের কথা নির্দ্বিধায় প্রকাশ করা যায় মায়ের কাছে। আপনার মা সুস্থতার সাথে আ্মাদের মাঝে বেঁচে থাকুক দোয়া করি।
  • ফয়জুল মহী ১৪/১১/২০২০
    Good post
 
Quantcast