www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমার মা আমার পৃথিবী

যখনো নিজে উপলব্ধি করতে শিখিনি নিজের অস্তিত্বটুকু, তখনো ছিলে তুমি আমার । শ্বাস নিতাম তোমার হৃদপিণ্ড দিয়ে, খাবার খেতাম তোমার মুখে। আর এ অবাক পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য অবলোকন করেছিলাম মায়া ভরা তোমার চোখ দিয়ে। যেন অনন্তকাল তুমি আর আমি ছিলাম একাকার। আমার এক ছোট্ট পৃথিবী ছিল । যার চৌদ্দ সীমানায় কারো প্রবেশাধিকার ছিল না। নির্মম পৃথিবীর শত বিপত্তি থেকে তুমি রক্ষা করছিলে আমার সেই ছোট্ট পৃথিবীকে। সহ্য করেছো কতো অত্যাচার নিপীড়ন। নিজের অস্তিত্ব যখন জানান দিতে শিখেছি তখন প্রথম দেখেছি তোমাকে। খোদার আরশ কাঁপানো কষ্টের পরেও আমাকে দেখে যখন তোমার মুখে সেই হাসি টুকু দেখি আমার হাসতে খুব ইচ্ছে করেছিল তখন। কিন্তু হাসতে পারি নি। কেঁদেছিলাম চিৎকার করে। তখন আমার মুখে হাসি প্রকাশের কোন ভাষা ছিল না। মমতার প্রথম পাঠ শিখিয়েছ তুমি। বুকে আগলে রেখে, আদর সোহাগে ভরিয়ে দিয়েছিলে আমার জীবন। আমি কথা বলতে পারতাম না, তুমি আমার মুখে বোল ফুটিয়েছ। আমি হাঁটতে পারতাম না , তুমি হাঁটতে শিখিয়েছ। প্রচণ্ড শীতে নিজের কাপড় মুড়িয়ে জড়িয়ে রেখেছ আমাকে । আর গরমে সারাটা রাত নিজে না ঘুমিয়ে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে করে ঘুম পারিয়েছ আমাকে। আমার শরীরে একটুখানি অসুখ হলেই অস্থির হয়ে উঠতে তুমি। খাবার দাবার ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করতে নামাজের পর। রাত জেগে কান্নাকাটি করতে আল্লাহর কাছে। নিজে না খেয়ে তুলে দিতে আমাদের পাতে। এটা ওটা কত রকম বায়না ছিল। ছিল কতরকম আবদার।সামর্থ্যের বাইরে হলেও চেষ্টা করতে পূরণের। আমাদের পাতে ভাত দিয়ে পাতিলে আর অবশিষ্ট না থাকলে বলতে “আমি পরে খাবো তোমরা খেয়ে নাও”। পরে দেখতাম পাতিলটাই ধুয়ে মুছে তোলে রাখছ মাচায়। এই বুঝি মা। তখন বুঝতাম না। তুমি ছিলে আমার প্রথম খেলার সাথী। মাটি দিয়ে কত না হাঁড়ি পাতিল বানিয়ে দিতে আমাকে। বিভিন্ন রঙের টুকরো কাপড় দিয়ে বানিয়ে দিতে শখের পুতুল। তুমি ছিলে আমার প্রথম শিক্ষক। শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি প্রথম তোমার হাতে । আমার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে তোমার ভালবাসা আর ভালবাসা। তোমার ভালবাসায় আমার জীবন আজ ধন্য।
তুমি শুধু ভালবেসেছ তা নয়, দূরেও ঠেলে দিয়েছ একটা সময়। ভালোবাসার বুকে পাথর চাপা দিয়ে। আমাদের সুশিক্ষার জন্যে, মানুষ হিশেবে গড়ে তোলার জন্যে। তোমাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগতো না আমার। বার বার ছুটে আসতাম তোমার বুকে। বায়না ধরতাম এটা ওটা অনেক কিছুর। তুমিও না, পূরণ করতে আমার সব বায়না। সিকেই রাখা খাবার পেড়ে তুলে দিতে আমার পাতে। সকাল সন্ধ্যা বানিয়ে খাওয়াতে হরেক রকম পিঠে পুলি। তোমার সেই ভালবাসার ছোঁয়া পাইনি আজ কতটি বছর। যার গায়ে পিঁপড়া কামড় দিলে নিজেই চিৎকার করে উঠতে উফ্। যেন সাপে দংশিল তোমায়।
আজ বাস্তব জীবনের এমন এক দ্বারপ্রান্তে না পারছি তোমার খবর রাখতে, না পারছি তোমার সেবা করতে। তোমার কি মনে আছে মা শেষ কবে ভালবাসায় আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে? জীবনের তাগিদে আমি আজ তোমার থেকে অনেক দূরে। কিন্তু আমাদের আত্মা খুব কাছাকাছি। আসলে আমার জীবনে আমি যাদেরই ভালবেসেছি কখনো বলতে পারিনি আমি তোমাকে ভালবাসি। কখনো লজ্জায়, কখনো সাহসের অভাবে কখনো জড়তায়। তোমার মত আরেকজনকেও আমি ভালবাসতাম মা। আমার সমস্ত শ্রদ্ধায়। কিন্তু কখনো বলা হয় নি। সে সুযোগ আমার হয়নি। তিনি বাবা।
আমি আজ আমি হয়েছি কারণ তোমরা। আমি আজ এ সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছি, কারণ তোমরা। মা আমার অস্থিত্ব, মা আমার জীবন , মা আমার বেহেস্ত। মা আমার পৃথিবী।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৩৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৫/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ১০/০৫/২০২০
    Respect mother
 
Quantcast