www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শিশুর খাদ্য

শিশুর খাদ্য
পিতৃস্নেহ সকল প্রাণীরই জীবনের অংশ। সকল প্রাণি চায় তার নিজের বংশ রেখে যেতে। কিন্তু পৃথিবী কারো জন্যই কুসুমাস্তীর্ণ নয়। জীবন সংগ্রামে সদা ব্রত প্রাণী কূল তাই তাদের বাচ্চাদের রক্ষার জন্য এত মরিয়া। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য বাচ্চাদের আপণ বক্ষে ধরে রাখে। বাচ্চারা ধীরে ধীরে বড় হয়, খাবারের জন্য মায়ের বক্ষের মাংশ খাওয়া শুরু করে। যখন মা মরে যায়, তারা বাহিরে বেরিয়ে এসে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

মুনুষের পিতৃস্নেহ আরো অতুলনীয়। মানব শিশুর জন্ম হয় অত্যন্ত অসহায় অবস্থায়। তাদের জন্ম দেয়ার জন্য মায়ের কষ্টের কোন তুলনাই হয়না। বাবারাও কষ্ট করেন নিঃস্বার্থ।

শিশুদের খাদ্য ও পুষ্টির দিকে নজর দিতে হলে মায়ের পুষ্টি, শারীরীক ও মানসিক অবস্থার দিকে প্রথমে খেয়াল দেয়া প্রয়োজন। যা পূর্ণরূপে পৃথিবীর কোন দেশেই নেই। এজন‌্য আজ মানুষের এত অসুখ বিসুখ। বাচ্চার হঠাৎ মৃত্যু, কম ওজন বা বেশী ওজন, বৃদ্ধি না হওয়া, ডায়বেটিস, হার্টের অসুখ, ক্যান্সার অনেকাংশেই মায়ের ও শিশুর খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। ৬ মাস হতে ৩ বছর পর্যন্ত শিশুরা যেসব খাবারের প্রতি আগ্রহী হয়, তা তারা পরিবেশ হতে শেখে। তারা পর্যবেক্ষণ করে পরিবারে কোন খাবারকে সবাই বেশী গুরুত্ব দেয়। বড়রা না বুঝলেও শিশুরা সুক্ষভাবে তাদের পরিসংখ্যান করে থাকে। মানুষ বাদে অন্য প্রাণিরাও একইভাবে তাদের খাদ্যাভ্যাস গড়ে। সঠিক পুষ্টি শুধু দামী খাবারে থাকেনা, অনেক সহজপ্রাপ্য বস্তুর খাদ্যগুণ দামী খাবারের চেয়ে বেশী।

সভ্যতার ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা অর্জন করলেও অজ্ঞতা, কুসংস্কার অন্যসব প্রাণিথেকে বেশী। আমাদের দেশে বর্ধমান জনসংখ্যার ওজন হ্রাসের বিশ্ব রেকর্ড, অসংক্রাক ব্যাধির ক্রমবৃদ্ধি জাতিকে দিন দিন অসুষ্থ, অসুখী ও ভারসাম্যহীন করছে। তাই সুস্থ সবল জাতী গঠনের জন্য অবশ্যই আমাদের খাদ্য ও পুষ্টি জ্ঞান প্রয়োজন।

মাতৃদুগ্ধ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রত্যেক শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এসময় শিশুর অন্য খাদ্যের প্রয়োজন নেই। নির্ভরযোগ্য গবেষণার ফলে এটি এখন সবাই বিশ্বাস করে যে, এই ছয়মাস মাতৃদুগ্ধ পান শিশুর বৃদ্ধির জন্য বেশ জরুরী। এর পর সঠিক খাবারের পাশাপাশি শিশুর দুগ্ধপান দুই বছর পর্যন্ত চালানোর প্রয়োজন বলে মনে করা হয়। এরপর ও তা মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী চাইলে বন্ধ বা চালিয়ে যেতে সমস্যা নেই।
মাতৃদুগ্ধ পানের বিভিন্ন উপকারীতার মধ্যে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্রয়োজনীয় খাদ্যগুণ, বৃদ্ধি ও মায়ের রোগ প্রতিরোধ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অনেক মা অবশ্য শিশুর সাথে আন্তরিকতা বৃদ্ধি, সম্পর্কের গণিষ্টতার কথা তুলে ধরেন। শালদুধ কম চিনি সমৃদ্ধ, কম চর্বিযুক্ত, অতিরিক্ত আমিষ সমৃদ্ধ, সঠিক তাপমাত্রার একটি শিশুখাদ্য। যা রোগের প্রতিশেধক এর মত কাজ করে। মাতৃদুগ্ধে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন থাকে। আর ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুর শারীরীক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এমনকি কিডনির উপর চাপ পড়ে। শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করলে নিজেকে নিরাপদ মনে করে ও মানসিকভাবে শক্তিশালী মনোভাব নিয়ে বেড়ে ওঠে। এতে শিশুর ডায়েরিয়া হয়না। অন্যদিকে মায়ের গর্ভাশয়ের , স্তনের ক্যান্সার, ডায়বেটিস ও অস্থির প্রদাহর মত ভবিষ্যৎ রোগ সমূহ হতে মুক্ত থাকেন।


শক্ত খাবার

শিশুকে প্রথম কখন কি খাবার দেয়া হয়, এটি নির্ভর করে স্থানীয় আচার সংস্কৃতির উপর । আমাদের দেশে মুখে ভাত অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়। বিশেষভাবে হিন্দু সংস্কৃতি অনুযায়ী এটি একটি পরিপূর্ণ অনুষ্টান। তবে পিতামাতার উচিত শিশুকে কোন চামচ দিয়ে খাওয়ানো বা নিজে থেকে খেতে দেয়া। শিশুকে উৎসাহিত করাঃ যা খাবার তাকে দেয়া হয়েছে তা শেষ করা বা যখন মনে হয় তার জন্য পর্যাপ্ত হয়েছে এমন সময় শেষ করা। আমার ব্যক্তিগত দেখা হলো, আমার ফুপু তার ছেলেমেয়েদর জোর করে খাওয়াতেন, খেতে চাইতনা তারপরও। আমাদেরকে হাড়ি দিয়ে শব্দ করতে বলতেন। তারা আসলে যতটুকু খেত সব জোর করে। এটিকে ফুসি (Fussy) ইটিং বলা হয়। এর জন্য উন্নত দেশে বিশেষজ্ঞ আছেন। আসলে এভাবে শিশুরা খাওয়ার প্রতি অনাগ্রহী ও ভীত হয়ে পড়ে, যা তাদের শারীরীক, মানসিক গঠনে উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।

যখন দেখা যাবে, শিশু তার খাবার দেখার পর আনন্দিত, তাদের খাবারের যায়গায় যেতে চাইবে, মুখ হা করবে তখন বোঝা যাবে যে শিশু খাবারের জন্য আগ্রহী। এমন সময় শিশুকে খাবার দেয়া উচিত। প্রথম বছর শিশুকে মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি ফরমূলা মিল্ক দেয়া যেতে পারে। আট মাসের পর তার খাদ্য দুগ্ধপানের পূর্বে খাওয়ানোর চেষ্টা করা উচিত। এসময় আয়রনের জন্য মাংশ , চিকেন ও মাছ, শক্তির জন্য শাকসবজি দেয়া যেতে পারে। অবশ্যই শিশুকে প্রথমে অতি অল্প পরিমাণ দিতে হবে কারণঃ কোন খাবারের প্রতি তার এলার্জি থাকতে পারে। গরুর দুধে অনেক ভালো উপাদান থাকলেও দুই বছরের পূর্বে এটি শিশুর কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। এসময় বেশী খাওয়ানোর চেয়ে ভালো খাবার অল্প দেয়াই ভালো। অবশ্য এসময় শিশুদের ডাক্তারের সাথে আলাপ করে বিস্তারিত জেনে নেয়া আবশ্যক। সরকারী মাতৃসদন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্টানে বিনামূল্যে পরামর্শ কেন্দ্র রয়েছে। আমাদের দেশে অনেক পিতা-মাতারা বাচ্চাদের মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য যেমন মধু, চকলেট, চিনি, বিস্কুট ইত্যাদি দিয়ে থাকেন। এটি একটি মারাত্মক ভুল। ক্রিসপ, কোমলপানীয় একেবারে দেয়া যাবেনা। কারণ শিশু যদি একবার মিষ্টির মিষ্টির প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ে তাহলে সে আর সাগরের সাধারণ খাবার খেতে চাইবে না। মিষ্টির অতিরিক্ত ফেট শিশুর জন্য ক্ষতিকর। অবশ্য ঘরে যে সাধারণ খাবার থাকে তা থেকে শিশু যদি ইচ্ছা করে সামান্য সবার সাথে সাথে খেতে সমস্যা নেই। শিশুদের পাকস্থলী ছোট তাই একসাথে বেশি খাবার খেতে পারে না অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বাজারে যে সকল আকর্ষণীয় খাদ্য চিপস, সিরিয়েল, বার থাকে এগুলোতে অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ ও চিনি থাকে তা শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনে উচ্চ রক্তচাপে হয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

অস্ট্রলিয়ার ডেকিন ইউনির্ভাসিটির গবেষণা মতে, শিশুর স্বাদে প্রচুর পরিমাণ চিনি ও লবণ যদি ১-৪ বছরের মধ্যে পেয়ে থাকে, তবে তার এ টেস্ট পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব, ফলে শিশু ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের ঝুকিতে থাকে। তার এ সব রোগের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। এজে‌ন্য ভালো বুদ্ধি হলো শিশুকে টাটকা খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। যেমনঃ শাকসবজি, ফল, ডিম, রান্না করা মাছ ও মাংশ এবং যেগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে কম লবণ ও চিনি থাকে; যা লবণ ও চিনি গ্রহণের পরিমাণকে কমিয়ে আনতে পারে। প্রথম
মাসে ভেজিটেরিয়ান পুষ্টকর খাবার গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়। তবে শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য যদিও নিরামিষভোজী পরিকল্পিত খাদ্যে প্রচুর পরিমাণ আমিষ থাকে, তারপরও শিশুখাদ্যে কোয়ালিটি আমিষ আবশ্যক, যেমন লাল মাংশ। এসময় শিশুদের শুধু বি ১২ নয়, পোটিন , জিংক , ক্যালসিয়াম ও আয়রনের মত খাদ্যগুণ প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম দুধ ও দুধ জাতিয় খাদ্যে, জিংক ডিম ইত্যাদি। প্রথম কয়েক বছর শিশুর জন্য বেশ ক্রিটিক্যাল সময় । বিশেষ ভাবে প্রথম বছর যখন শক্ত খাবার খেতে শুরু করে। এসময় আবশ্যই পরিকল্পনা মাফিক খাবার দিতে হয় কারণ ছোট পাকস্থলি দ্রুত পূর্ণ হয়ে যায় এবং সঠিক খাবার না দিলে শারীরীক সমস্যা সুষ্টি হয়।

আমাদের শিশু যখন কোন খাবার খেতে চাচ্ছেনা আমরা তখন এটি নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ি। আর শিশুরা এটিকে একটি স্ট্রেটিজি বানিয়ে নেয়। কি করলে শিশু আপনার কাছে গুরুত্ব পাবে তা শিশুরা ভালোভাবে জানে। তাই শিশু কি চাচ্ছে আর তার কি প্রয়োজন তার মাঝে একটি ভ্যালেস্স রাখতে হবে। সে যেন না খেয়ে প্রতিবাদের পুরস্কার পাওয়ার পরিবর্তে আপনার কথা শুনার পুরস্কার পায় , এটি নজরে রাখতে হবে। তবে এক্ষত্রে একেবারে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাবের পরিবর্তে একটি মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উত্তম।

নতুন খাবার খেতে না চাওয়া মানুষের একটি সাধারণ সমস্যা। আপনি কোন খাবার খাননি , যত ভালোই হোক আপনি খাবেন কিনা, ইতস্থত করবেন? শিশুদের শিক্ষার একটি বড় শিক্ষা হলো খাদ্য খাওয়া শেখা। তরল খাবার হতে শক্ত খাবার খেতে শুরু করা একটি বড় পরিবর্তন। এতে অবশ্যই কিছু সমস্যা হবে। শিশুরা খাবার খাওয়ার পূর্বে, খাবারের বর্ণ, গন্ধ, অনুভূতি এমনকি স্বাদ কেমন হবে তাও ভেবে নেয়। এমনকি কেমন শব্দ হচ্ছে কোন খাবার খেতে, তাও বিবেচনা করে থাকে। এজন্য খাবার খাওয়ানো প্রচুর ধৈর্য্য ও অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন। সামান্য সংখ্যক শিশুরাই ভালোভাবে খায়, বাকী আমাদের সবার একই অবস্থা। সকল পিতা মাতাই এটি পার করেন যে তাদের বাচ্ছা খাবার খেতে আগ্রহী নয়। এজন্য ভিন্ন খাদ্য সম্মিলিত পরিবেশে সবাই খাচ্ছেন এসময় চেষ্টা করা উত্তম। শিশু সবসময়ই খাদ্য পছন্দ করেনা কারণ হতে পারে কোন বিশেষ বর্ণের খাদ্য সে পছন্দ করে। যেমন, সাদা ব্রেড, আলু ইত্যাদি। শিশুকে যে খাবার পছন্দ নয়, তা খাওয়াতে হলে, তার পছন্দের খাবারের সাথে অল্প অল্প মিশিয়ে বা অন্যভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৬২১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৪/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast