মতি মিয়ার চানাচুরের গল্প(১)
- চানাচুর লিবেন....ঝাল চানাচুর...... চানাচুর মাখা লেন......চানাচুররররররর....
পূর্বের কামরা থেকে নতুন কামরায় প্রবেশ করেই সুরেলা কথা কন্ঠে হাক ডাকতে শুরু করলেন মতি মিয়া।বয়স সাইত্রিশ কি আটত্রিশ হবে।ছিপছিপে গড়নের শরীর। পড়নে একটা ময়লা শার্ট,দেখে মনে হবে যেন অনেক দিন ধুয়ে দেয়া হয়নি শার্টটি আর তাতে যুগ যুগান্তরের ময়লা ধুলো মিশে আছে,মিশে আছে দারিদ্রতা, সমাজের ধনী গরীবের বৈষম্য। আর সাথে রয়েছে লুংগী। কোমড়ে গামছা পেচানো অনেকটা বেল্টের মত করে।হাত দুটো শীর্ণকায়,শিরা গুলো স্পষ্ট, বুকের দিকে শার্টের বোতাম খোলা আর তা দিয়ে পাজরের হাড় দেখা যাচ্ছে। পায়ের মাংসপেশী গুলো আটোশাটো, অনেক হাটাহাটির ফসল তবে সেগুলোও যথেষ্ট জীর্ণশীর্ণ। কাধে কাপড়ের বেল্ট দিয়ে একটা ভাড়া ঝুলানো আর তাতেই তার সকল ব্যবসার সামগ্রী।
কামড়ায় প্রবেশ করেই সে পুরো কামড়ায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।গোটা পঞ্চাশেক যাত্রী রয়েছে পুরো কামড়ায়। সে একবার হাক দিয়েই ধীরে ধীরে সামনে এগুতে থাকে।এগুতে এগুতে দুপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় কেউ জদি ডাকে!এগুতে এগুতে এবার সে শুধু, "চানাচুর " বলেই হাক দেয়।তবে এবারের হাক গুলো একটু নিচু স্বরে দেয় সে।আশে পাশের লোকজন যারা তার স্বর শুনতে পায় তারা তার দিকে তাকায়।সেও সতর্কতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে,পাছে কেউ ডাকে।কামড়ায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে অনেক।কেউ বাদাম বিক্রি করছে,কেউ তিলের খাজা আবার কেউ আমড়া।হালের খাবার পপকর্ন ও রয়েছে।তবে সে জানে সে অনেক এগিয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে।আজ প্রায় পনেরো বছর ধরে সে এই ব্যাবসায়,অন্তত তার অভিজ্ঞতা তাই বলে। তবে তার ধারে কাছে জদি কেউ থেকে থাকে তাহলে সেটা বাদাম ওয়ালা।হঠাৎ সে পিছনে থেকে ডাক শুনতে পায়।
- এই চানাচুর!
সে পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেল মাঝ বয়ষ্ক এক লোক,হাত উচিয়ে রয়েছে।তার বুঝতে অসুবিধে হল না কে তাকে ডাকছে।সে লোকটির নিকট পৌছাতেই লোকটা তার ভাড়া থেকে খানিক চানাচুর তুলে নিয়ে মুখে চালান করে দিল।আর বলতে লাগল,
- কিরে,কত কইরা?
-দশ ট্যাকা!
- কি কস!পাঁচ টাকার নাই?
-না!জিনিস পাতির যা দাম বাড়ছে!
-ভাল কইরা দে দেখি ১০ টাকার।
এরপর মতি মিয়া নিপুন দক্ষতায় বানানো শুরু করল।সব উপকরন চোখের নিমিষেই প্লাস্টিকের ডিব্বা মতন একটা পাত্রে চালান করে দিচ্ছে সে,শেষে সরিষার তেল আর বিট লবন দিয়ে গ্লাসের ঢাকনা লাগিয়ে এক হাতে দিয়ে ধরে অন্য হাতের তালুতে বাড়ি দিয়ে সুরেলা তাল সৃষ্টি করতে করতে ঝাকাতে থাকল।তার এই কর্মযজ্ঞ আশেপাশের অনেকে এক নজরে দেখতে থাকল,যেন কোন জাদুকর জাদু দেখাচ্ছে মঞ্চে!তারপর সে একটা কাগজের ঠোংগা তে চানাচুর মাখাগুলো ঢেলে লোকটার হাতে তুলে দিল,সাথে একটা শক্ত কাগজের কার্ড।তারপর লোকটার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বুকের বা পাশের পকেটে থাকা টাকার বান্ডিলে ঢুকিয়ে রাখল।টাকার বান্ডিল টা বেশ মোটাতাজা দেখায়,দু-
তিনটে একশ টাকার নোট,দুটো পঞ্চাশ টাকার নোট আর বেশির ভাগ বিশ আর দশ টাকার নোট।আর সবগুলো একসাথে ভাজ করলে বান্ডিলটা বেশ স্বাস্থ্যবান দেখায়,না জানি কত টাকাই আছে তাতে! টাকাগুলো পকেটে রাখলে টাকার ভাড়ে পকেট হা করে থাকে!
এরপর সে আবার মৃদু স্বরে হাক দিতে দিকে এগুতে থাকে।কামরার শেষ দিকে চলে এসেছে সে। পিছু ঘুরে পুরো কামড়ায় একবার চোখ বুলিয়ে নিল।নাহ! কেনার মত কেউ নেই।আজ বেচা বিক্রি ভাল না।সে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ট্রেনের দরজার কাছে দাড়ালো। দেখল এক যুবক দরজার দুই হাতল ধরে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছে।বাতাসে তার চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।না জানি দরজায় দাঁড়িয়ে উদাস মনে প্রিয়তমার কথা ভাবছে সে কিংবা বিচ্ছেদের! কিন্তু মতি মিয়ার ভাবনায় সেই যুবকের কোন স্থান নেই।সে ভাবলেশহীন ভাবে বাইরের দিকে দেখতে লাগল।গাছগুলো কেমন মুহূর্তেই পিছনের দিকে চলে যাচ্ছে।সে আইন্সটাইনের সময়ের আপেক্ষিকতা বুঝে না,তবে সময়ের গুরুত্ব ঠিকই বুঝে।প্রতিটা মুহূর্ত তার জন্য কত মূল্যবান সে জানে।কিভাবে সময়ের মধ্যে বেশি বিক্রি করা যায় সেই চিন্তা তার।তবে আজকে আর ভাল লাগছে না তার।মেয়ের কথা মনে পড়ছে বার বার।জুথিকা তার মেয়ের নাম।গতকাল থেকে ভীষণ জ্বর জুথিকার।সকালে কাজে বের হওয়ার সময় জুথিকা ঘুমাচ্ছিল।জ্যোৎস্না বেগম কে অবশ্য বলে এসেছে মেয়ের খেয়াল রাখতে।জ্যোৎস্না বেগম, মতি মিয়ার স্ত্রী। মতি মিয়া জানে জ্যোৎস্না বেগম জুথিকার যত্নের কমতি রাখবে না কিন্তু তাও সে প্রশান্তি পাচ্ছে না।মেয়ের কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে এখনি।মেয়ের জন্য ওষুধ কিনতে হবে।কামড়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে চিন্তা করল পরের স্টেশনে নেমে ফিরতি ট্রেনে উঠে পড়বে।
পূর্বের কামরা থেকে নতুন কামরায় প্রবেশ করেই সুরেলা কথা কন্ঠে হাক ডাকতে শুরু করলেন মতি মিয়া।বয়স সাইত্রিশ কি আটত্রিশ হবে।ছিপছিপে গড়নের শরীর। পড়নে একটা ময়লা শার্ট,দেখে মনে হবে যেন অনেক দিন ধুয়ে দেয়া হয়নি শার্টটি আর তাতে যুগ যুগান্তরের ময়লা ধুলো মিশে আছে,মিশে আছে দারিদ্রতা, সমাজের ধনী গরীবের বৈষম্য। আর সাথে রয়েছে লুংগী। কোমড়ে গামছা পেচানো অনেকটা বেল্টের মত করে।হাত দুটো শীর্ণকায়,শিরা গুলো স্পষ্ট, বুকের দিকে শার্টের বোতাম খোলা আর তা দিয়ে পাজরের হাড় দেখা যাচ্ছে। পায়ের মাংসপেশী গুলো আটোশাটো, অনেক হাটাহাটির ফসল তবে সেগুলোও যথেষ্ট জীর্ণশীর্ণ। কাধে কাপড়ের বেল্ট দিয়ে একটা ভাড়া ঝুলানো আর তাতেই তার সকল ব্যবসার সামগ্রী।
কামড়ায় প্রবেশ করেই সে পুরো কামড়ায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।গোটা পঞ্চাশেক যাত্রী রয়েছে পুরো কামড়ায়। সে একবার হাক দিয়েই ধীরে ধীরে সামনে এগুতে থাকে।এগুতে এগুতে দুপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় কেউ জদি ডাকে!এগুতে এগুতে এবার সে শুধু, "চানাচুর " বলেই হাক দেয়।তবে এবারের হাক গুলো একটু নিচু স্বরে দেয় সে।আশে পাশের লোকজন যারা তার স্বর শুনতে পায় তারা তার দিকে তাকায়।সেও সতর্কতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে,পাছে কেউ ডাকে।কামড়ায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে অনেক।কেউ বাদাম বিক্রি করছে,কেউ তিলের খাজা আবার কেউ আমড়া।হালের খাবার পপকর্ন ও রয়েছে।তবে সে জানে সে অনেক এগিয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে।আজ প্রায় পনেরো বছর ধরে সে এই ব্যাবসায়,অন্তত তার অভিজ্ঞতা তাই বলে। তবে তার ধারে কাছে জদি কেউ থেকে থাকে তাহলে সেটা বাদাম ওয়ালা।হঠাৎ সে পিছনে থেকে ডাক শুনতে পায়।
- এই চানাচুর!
সে পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেল মাঝ বয়ষ্ক এক লোক,হাত উচিয়ে রয়েছে।তার বুঝতে অসুবিধে হল না কে তাকে ডাকছে।সে লোকটির নিকট পৌছাতেই লোকটা তার ভাড়া থেকে খানিক চানাচুর তুলে নিয়ে মুখে চালান করে দিল।আর বলতে লাগল,
- কিরে,কত কইরা?
-দশ ট্যাকা!
- কি কস!পাঁচ টাকার নাই?
-না!জিনিস পাতির যা দাম বাড়ছে!
-ভাল কইরা দে দেখি ১০ টাকার।
এরপর মতি মিয়া নিপুন দক্ষতায় বানানো শুরু করল।সব উপকরন চোখের নিমিষেই প্লাস্টিকের ডিব্বা মতন একটা পাত্রে চালান করে দিচ্ছে সে,শেষে সরিষার তেল আর বিট লবন দিয়ে গ্লাসের ঢাকনা লাগিয়ে এক হাতে দিয়ে ধরে অন্য হাতের তালুতে বাড়ি দিয়ে সুরেলা তাল সৃষ্টি করতে করতে ঝাকাতে থাকল।তার এই কর্মযজ্ঞ আশেপাশের অনেকে এক নজরে দেখতে থাকল,যেন কোন জাদুকর জাদু দেখাচ্ছে মঞ্চে!তারপর সে একটা কাগজের ঠোংগা তে চানাচুর মাখাগুলো ঢেলে লোকটার হাতে তুলে দিল,সাথে একটা শক্ত কাগজের কার্ড।তারপর লোকটার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বুকের বা পাশের পকেটে থাকা টাকার বান্ডিলে ঢুকিয়ে রাখল।টাকার বান্ডিল টা বেশ মোটাতাজা দেখায়,দু-
তিনটে একশ টাকার নোট,দুটো পঞ্চাশ টাকার নোট আর বেশির ভাগ বিশ আর দশ টাকার নোট।আর সবগুলো একসাথে ভাজ করলে বান্ডিলটা বেশ স্বাস্থ্যবান দেখায়,না জানি কত টাকাই আছে তাতে! টাকাগুলো পকেটে রাখলে টাকার ভাড়ে পকেট হা করে থাকে!
এরপর সে আবার মৃদু স্বরে হাক দিতে দিকে এগুতে থাকে।কামরার শেষ দিকে চলে এসেছে সে। পিছু ঘুরে পুরো কামড়ায় একবার চোখ বুলিয়ে নিল।নাহ! কেনার মত কেউ নেই।আজ বেচা বিক্রি ভাল না।সে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ট্রেনের দরজার কাছে দাড়ালো। দেখল এক যুবক দরজার দুই হাতল ধরে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছে।বাতাসে তার চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।না জানি দরজায় দাঁড়িয়ে উদাস মনে প্রিয়তমার কথা ভাবছে সে কিংবা বিচ্ছেদের! কিন্তু মতি মিয়ার ভাবনায় সেই যুবকের কোন স্থান নেই।সে ভাবলেশহীন ভাবে বাইরের দিকে দেখতে লাগল।গাছগুলো কেমন মুহূর্তেই পিছনের দিকে চলে যাচ্ছে।সে আইন্সটাইনের সময়ের আপেক্ষিকতা বুঝে না,তবে সময়ের গুরুত্ব ঠিকই বুঝে।প্রতিটা মুহূর্ত তার জন্য কত মূল্যবান সে জানে।কিভাবে সময়ের মধ্যে বেশি বিক্রি করা যায় সেই চিন্তা তার।তবে আজকে আর ভাল লাগছে না তার।মেয়ের কথা মনে পড়ছে বার বার।জুথিকা তার মেয়ের নাম।গতকাল থেকে ভীষণ জ্বর জুথিকার।সকালে কাজে বের হওয়ার সময় জুথিকা ঘুমাচ্ছিল।জ্যোৎস্না বেগম কে অবশ্য বলে এসেছে মেয়ের খেয়াল রাখতে।জ্যোৎস্না বেগম, মতি মিয়ার স্ত্রী। মতি মিয়া জানে জ্যোৎস্না বেগম জুথিকার যত্নের কমতি রাখবে না কিন্তু তাও সে প্রশান্তি পাচ্ছে না।মেয়ের কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে এখনি।মেয়ের জন্য ওষুধ কিনতে হবে।কামড়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে চিন্তা করল পরের স্টেশনে নেমে ফিরতি ট্রেনে উঠে পড়বে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ১৬/০৮/২০২৩টাটকা তাজা স্বাদে ভরা