www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভুলো মন

বেশ কিছুদিন ধরে রোহিণী খুব চিন্তায় আছে। চিন্তার কারণটাও বেশ গুরুতর। গত দু মাস ধরে ও লক্ষ্য করেছে যে ওর স্বামী, সৌরভ ভীষণ রকম এম্নিসিয়া মানে ভুলে যাওয়ার রোগে ভুগছে। একবার অফিস যাওয়ার সময় ব্রিফকেসটাই ভুলে চলে গেল, যাও বা একটু পরে ফিরে এল ব্রিফকেস নিতে তখন আবার মোবাইল ফোনটা ফেলে গেল; আবার বাড়ি ফিরে মোবাইল নিয়ে যখন বেরল তখন রোহিণী দেখল যে সৌরভ ওর অফিসের চাবিটাই নিতে ভুলে গেছে। আরেকবার তো বাজার করতে বেরল গাড়ি নিয়ে কিন্তু লিস্ট মিলিয়ে বাজার করা হয়ে গেলে সে বাসে করে বাড়ি ফিরে এল। পরে গাড়িটা ট্র্যাফিক পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছিল ওদের। সৌরভের মুখেই ও শুনেছে যে অফিসেও এই ভুলে যাওয়ার জন্য বসের কাছে প্রায় রোজই বকা খেতে হয় তাকে।
কি করবে বুঝতে না পেরে রোহিণী ওর বোনের পরামর্শে ডাঃ সৌম্যদীপ ঘোষালের কাছে গেল। সব কথা শুনে ডাঃ ঘোষাল তার নাকের ডগা থেকে বাই-ফোকাল চশমাটা খুলে সেটা রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে বললেন, "আমার মনে হয় এই এম্নিসিয়ার কারন হল অফিসে কাজের অত্যাধিক চাপ। কিন্তু সেটা কি কমানোর উপায় আছে?" তারপর রোহিণীর উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার বললেন, "এই রোগ কিন্তু কোন ওষুধে সারবে না।"
রোহিণী খুব চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করল, "তাহলে ডাক্তারবাবু?"
ডাঃ ঘোষাল একটু হেঁসে বললেন, "একটা উপায় আছে। সেটা হল প্রাক্টিকাল মেথড। যখনই আপনার স্বামী কিছু করবেন, তখন আপনাকে একটু পাশে পাশে থাকতে হবে। ওনাকে সবসময় মনে করিয়ে দেবেন 'ভালো করে দেখে নাও, কিছু ভুলে যাচ্ছ না তো?' এই ভাবে কিছু দিন করলেই বুঝতে পারবেন যে ওনার স্মৃতিশক্তিতে কোন পরিবর্তন আসছে কি না। আর সেই মত আমাকে ইনফরমেশন দিতে থাকবেন। কেমন?"
পরের দিন সকালে যখন সৌরভ অফিসের জন্য বেরচ্ছে তখন রোহিণী ডাঃ ঘোষালের কথাই পালন করল। বলল, "তুমি কিছু ভুলে যাচ্ছ না তো?"
সেই শুনে সৌরভ একটু ম্লান হেঁসে ব্রিফকেসটা হাতে তুলে নিল।
তারপর রোহিণী বলল, "আর মোবাইল ফোন?"
সৌরভ পকেটে হাত দিয়ে মোবাইলটা বের করে রোহিণীকে দেখাল আর তারপর সেটা আবার পকেটস্থ করল।
রোহিণী সৌরভকে আরও বিভিন্ন জিনিষ মনে করাতে লাগল যেমন অফিসের চাবি, ডাইরি, গাড়ির চাবি ইত্যাদি। আর দেখল দুয়েকটা বাদ দিয়ে আর সবই সৌরভ নিতে ভুলে গেছে।
এই ভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল। রোজ রোহিণী সৌরভকে মনে করিয়ে দেয়। আর সে লক্ষ্য করল যে সৌরভের স্মৃতিশক্তির বেশ উন্নতিই হচ্ছে। অফিস যাওয়ার সময় সে আর মোবাইল, ব্রিফকেস ইত্যাদি নিতে ভুলে যাচ্ছে না। মনে মনে বেশ খুশিই হল রোহিণী।
আরও এক সপ্তাহ পর এক বুধবার সকালে সৌরভের ব্রেকফাস্ট সেরে অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি।
রোহিণী বলল, "তুমি কিছু ভুলে যাচ্ছ না তো?"
সৌরভ ভালো করে চেক করল; পকেটে মোবাইল ফোন আছে, হাতে ব্রিফকেস আছে, কবজিতে ঘড়ি আছে। সব কিছুই ঠিক আছে, কিছুই ভলে নি ও। তবুও যেন সৌরভের মনে হচ্ছিল যে 'কি যেন একটা ভুলে যাচ্ছি।' তাই আবারও ভালো করে দেখে নিল ও। না, সেদিন কিছুই ভুলে যায় নি সে। তাই প্রফুল্ল মনে সৌরভ অফিসে বেরিয়ে গেল।
ও বেরিয়ে যাওয়ার পর রোহিণী ঠিক করল যে ডাঃ ঘোষালের সাথে একবার গিয়ে দেখা করে আসব। একটা ধন্যবাদও পাওনা আছে ওনার। সবে ব্রেকফাস্ট করে সে বেরনোর জন্য তৈরি হচ্ছে, তখনই ডোর বেলটা বেজে উঠল। ভয়ে বুকটা শিউরে উঠল রোহিণীর, 'এখন তো কারুর আসার কথা নয়। তাহলে কি সৌরভ আবার...'
ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দিল রোহিণী। সামনে দাঁড়িয়ে আছে সৌরভ।
রোহিণী জিজ্ঞেস করল, "তুমি আবার কি নিতে ভুলে গেলে?"
"না, না কিছুই নিতে ভুলিনি আজ," ম্লান হেঁসে বলল সৌরভ, "সব আছে।"
রোহিণী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "তাহলে? ফিরে এলে যে?"
সৌরভ একই রকম ম্লান হেঁসে বলল, "না, মানে গতকাল আমার চাকরিটা চলে গেছে। আমার যে আজ অফিস যেতে হবে না, সেটা ঠিক মনে ছিল না।"



(এই অনুগল্পটি চীন দেশের গল্পকার লিন হুয়ায়ু-র লেখা ‘এম্নিসিয়া’ গল্পের অনুবাদ)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৬৮৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/০২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পাপিয়া অধিকারী ২৩/০২/২০১৬
    হা হা।

    অসাধারণ!
  • রুবি ২৩/০২/২০১৬
    হা হা হা।
    চিনা গল্পের অনুবাদ খুব ভাল লাগল।
  • হাসান কাবীর ২১/০২/২০১৬
    ভালো লেগেছে।
    • অভিষেক মিত্র ২২/০২/২০১৬
      ধন্যবাদ দাদা।

      আমি একটা ই ম্যাগ বানাচ্ছি। যদি সম্ভব হয়, তাহলে আপনার একটি গল্প বা প্রবন্ধ [email protected] এ পাঠিয়ে দেবেন।
      • হাসান কাবীর ২৬/০২/২০১৬
        চেষ্টা করবো দাদা, ছোট গল্প চলবে?
  • সাইদুর রহমান ২১/০২/২০১৬
    ভালো লাগলো গল্পটি।
  • ভালো ভালো
  • ধ্রুব রাসেল ১৭/০২/২০১৬
    অনেক ভাল লাগলো।
  • শিবজিত ১৬/০২/২০১৬
    ভাল হএছে লেখা।। আর এরকাম চাই ।।
  • Sathi Dutta ১৬/০২/২০১৬
    একি! দারুণ লাগলো,
  • তপন দাস ১৬/০২/২০১৬
    প্রথমে ভেবেছিলাম অফিস ছুটি থাকবে কিন্তু একেবারে চাকরীটা চলে গেল!




    হায় রে!
  • রুমা ঢ্যাং ১৬/০২/২০১৬
    বাহ বেশ ভালো।
  • SWAPNOPRIYA ১৬/০২/২০১৬
    বাহ দারুণ তো
  • মাহাবুব ১৬/০২/২০১৬
    পড়ে মজা পেলাম, ধন্যবাদ, লিন হুয়ায়ু এবং আপনাকে।
    ভালো থাকবেন।
  • ফাটাফাটি গল্প। খুব আনন্দ পেলাম।
  • pradip kumar ray ১৬/০২/২০১৬
    ভাল
  • গাজী তৌহিদ ১৬/০২/২০১৬
    অনেক সুন্দর হয়েছে!
    • অভিষেক মিত্র ১৬/০২/২০১৬
      ধন্যবাদ দাদা।

      আমি একটা ই-ম্যাগ বানাচ্ছি। আপনার একটা কবিতা বা গল্প বা প্রবন্ধ কি দিতে পারবেন? সম্ভব হলে [email protected] এ পাঠিয়ে দেবেন।
  • ভালো
    • অভিষেক মিত্র ১৬/০২/২০১৬
      ধন্যবাদ দাদা।

      আমি একটা ই-ম্যাগ বানাচ্ছি। আপনার একটা কবিতা বা গল্প বা প্রবন্ধ কি দিতে পারবেন? সম্ভব হলে [email protected] এ পাঠিয়ে দেবেন।
      • গাজী তৌহিদ ১৬/০২/২০১৬
        ইনশাল্লাহ দাদা
  • দারুণ !! খুব ভালো লাগল । স্বাগত আমার লাইনে ।
  • আজিজ আহমেদ ১৬/০২/২০১৬
    শেষটা ফাটাফাটি। হা...হা...হা...
    তুমি কি শান্তনুর লাইনে যাচ্ছো?
    বেশ ভাল লাগলো। অনুবাদ বলে মনে হয় নি।
    • অভিষেক মিত্র ১৬/০২/২০১৬
      ধন্যবাদ আজিজ দা।
      আমি হাঁসির গল্প খুব ভালো লিখতে পারি বলে মনে হয় না। আসলে ট্রাই করি নি কোনদিন।
 
Quantcast