www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গীতার বিয়ে

দৃশ্য ঃ ১/এক

(আমান আর পিয়াল একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব রেষ্ট হাউজে থাকেন উনারা একই সাথে খাওয়া ওঠা বসা থাকা সেই সুবাদে একে অপরের বেশ ঘনিষ্ট বন্ধু হয়ে পড়ে। পিয়াল ভ্রমন পিয়াসী মানুষ, সুযোগ পেলেই কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায়।)

পিয়াল ঃ কি আমান ভাই- কোথায় যাবেন বলে ঠিক করলেন।
আমান ঃ কোথায় আর যাব - চলেন লাখো-হাটি গিয়ে ঘুরে আসি -ওখানে আমার এক
দুরসম্পর্কের আত্মীয় আছে। ওদের বাড়ীতেও বেড়ানো হবে - গ্রামটাও ঘুরে
দেখা হবে। গ্রামটা বেশ সুন্দর - আপনার ভাল লাগবে।
পিয়াল ঃ এভাবে এ অবস্থায় তাও আবার কারো বাড়ি !
আমান ঃ না পিয়াল ভাই -এটা কোন ব্যাপার না ।

(শিরোমণি বাজার থেকে একটা ভ্যান রিজার্ভ করে রওনা দিল লাখো-হাটির পথে)

দৃশ্য ঃ ২/দুই

(গ্রাম নির্ভর বাংলাদেশে, লাখো-হাটি একটি ছো--সুন্দর গ্রাম। এই গ্রামের মেয়ে গীতা চঞ্চলা চপলা সে যেন এক বলগা হরিণ। ঘরে আয়নার সামনে বসে গুন গুন করে গান গাচ্ছে আর চুল বাধছে এমন সময় তার মোবাইল ফোনটা বেজেঁ উঠলো )

গীতা ঃ হ্যালো-সালা মালাই কুম-আপনি কিডা
আমান ঃ ওয়ালায়কুম আস সালাম
গীতা ঃ আপনি কিডা বলছেন ?
আমান ঃ আমান বলছিলাম ।
গীতা ঃ আমান ভাই ক্যামন আছেন ?
আমান ঃ হ্যা- ভাল আছি। আমি এখন তোমাদের বাড়িতে আসছি- সাথে একজন মেহমান
আছে। তোমার মাকে বলো।

(এই বলে ফোনটা কেটে দিল)
গীতাঃ মা- মাগো- মা

(বলে ডাকতে ডাকতে মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছিল ঠিক তখন মা রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।)

মা ঃ কিরে কি হইলু- এভাবে গলা ছ্যাইড়ি চেচাচ্ছিস ক্যান। কত দিন কইরি বুলিনি
এভাবে চেচাঁবি নি- মেয়ি মানুষ গলার স্বর একটু নিচু করতি কি হয়।

গীতা ঃ আমান ভাই ফোন দিছিলু-বইল্লু আমাদের বাড়ি নাকি এখন আসছে। সাথে নাকি
একজন লোকুউ আছে। জিঞ্চাসা করলাম কিডা-কিন্তু কিছু বইল্লু না- বইল্লু এইডি
তোমার জানার দরকার নি- তোমার মাকে বুল্লিই হবিনি।
মা ঃ আচ্ছা বেহ্যা মেয়িরে তুই বাবা- একতা তোর জিঞ্চাসা করার দরকারডা কি
ছিল। কই গো কইগো তোমরা

(শ্বাশুরীর ডাকে যার যার ঘর থেকে বড় বৌ, ছোট বৌ, ছুটে এল)

বড় বউ ঃ কি হইলু মা ?
মা ঃ শুইনিছো আমান আসছে। সাথে আমার গীতার জন্ন্যি একটা ছেলিও আনছে।
আমান চাকরী বাকরী করে- মেলা লোকের সাতে উঠা বসা- তাই সেদিন
বুলছালাম -আমার গীতার জন্ন্যি একটা ভাল ছেইলি দেখতি ।
ছোট বউ ঃ তাই নাকি মা তাহলি বেশ ভালই হবিনি ।
বড় বউ ঃ চলো চলো যুগাড় যান্তি করি গি বিই বইলি কতা ।
ছোট বউ ঃ হ্য আপা ঠিকি বইলিছেন কতায় আছেনা বিয়ের আপ্যায়নে হয় অদদেক, মেয়ি
দেখি হয় পুরু টেক।

দৃশ্য ঃ ৩/ তিন

(আধা পাকা আধা কাঁচা উচু নিচু রাস্তা )

পিয়াল ঃ আর কত দূর ভাই ( পিয়াল ভ্যানে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।)
ভ্যানওয়ালা ঃ এই তো আর বেশি দূর নাই- সামনে একটা মাট -এর পরেই হলিগা লাখো হাটি
বাজার ।
পিয়াল ঃ (আমানের উদ্দেশ্যে) বাজার থেকে ওনাদের বাড়ি কত দূর ?
আমান ঃ বাজারের পাশেই ।

(ইতি মধ্যে ভ্যানের টায়ার গেল পাংচার হয়ে)

পিয়াল ঃ এবার কি হবে ?
ভ্যানওয়ালা ঃ চিন্তা কইরেন না- দশ মিনিট দাঁড়ান -আমি ঠিক কইরি ফেলছি।

(ভ্যানওয়ালার কাছে ভ্যান সারার সকল টুলস আছে ভ্যানওয়ালা শুধু ভ্যানওয়ালা নয় মিস্ত্রিও বটে।)

দৃশ্য ঃ ৪/চার

(গীতা ঘরে খাটের একটি কোনে দুই ঠ্যাংঙের মধ্যে মাথা দিয়ে ভারাক্রান্ত মনে চুপ চাপ বসে আছে। এমন সময় তৃপ্তি, কথা, শান্তা তিন বান্ধবীর প্রবেশ ।)

তৃপ্তি ঃ কিরে গীতা- এভাবে মন খারাপ কইরি বইসি আছিস ক্যান?
শান্তা ঃ শুনলাম- তোর বিইর জন্ন্যি মুখ দেখতি আসছে ।
গীতা ঃ কতই তো আইলু গেলো- তাতে কি হইলু ?
কথা ঃ দ্যাখ- এ আসলে কপাল- সব মেয়ি তো চাই- আর আল্লা আল্লা করে -এই দ্যাখাই যেন শেষ
দ্যাখা হয়- কিন্তু কপালে না থাকলি কি হবে।
গীতা ঃ হ্য- কিন্তু আমাকে যে কেউ দেখতি আসছে- একতা ভাবতিই আমার শরিলে কাঁটা দিয়ে
উঠে- গায়ের পশম গুলো খাড়া হইয়ি যায়- কেমন যেন সব হিমশীতল হইয়ি আসে-
দেহের রক্ত কনিকা গুলু জমাট বাইধি যায়- নিঃশ্বাস নিতি গেলিও কষ্ট হয়। অজানা এক
ভয় বুকের মদ্যি ধড়ফর ধড়ফর করে। নারীর কূলে জন্ম নিইয়ি নিজিকে খুব ছোট মনে
হয়।
তুপ্তি ঃ ঠিকি বুইলিছিস- সাইজি গুইজি নিজিকে পুঞ্জিভূত কইরি এমন ভাবে উপস্থাপন করতি
হয় -যাতে কিনা বর পক্ষের পছন্দ হয় ।
কথা ঃ পছন্দ হলি বিই হবে- না হলি না। এ যেন বাজারের পণ্য।
তৃপ্তি ঃ শুধু কি তাই- তার পর আবার যৌতুক । এই দিতি হবে সেই দিতি হবে । এযেন মামু বাড়ীর
মুয়া। পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থার জাল থ্যাইকি- কবে যে আমরা বাইরি আসতি পাইরবো।
স্বপ্না ঃ দ্যাখ (কথা) এইডি আমাদের সমাজের ব্যাধি -এইডি তো আর একদিনে হইনি ধীরে ধীরে
হইয়িছে- এইডি সারাতিও সময় লাইগবে। তাই একুন থ্যাইকি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতি
হবে- আগি আসতি হবে সবাই কে । আর আমাদের নারী সমাজকে সু-শিক্ষ্যায় শিক্ষিত
হতি হবে- তার পরেই না এই ঘৃন্য সমাজ ব্যবস্থা থেকে বাইর হয়ি আসতি পাইরবো।
তৃপ্তি ঃ আরে দ্যাখলি তো হয় তার সাতে চলে নানান রকমের ফূসরৎ -নাস্তা দিয়ার উদ্দেশ্যে
কিবা অন্য কোন ছুইতনু হাতে যাতি হয় তাদের কাছে। ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী
সালাম দিইয়ি শুরু হয় পরের লাইন গুলু। সালাম দেওয়াটা ঠিক হইলু কিনা- সালামের
উচ্চারন ঠিক আছে কিনা ইত্যাদি দিইয়ি চলে পাত্রী নির্ণয়ের প্রক্রিয়া। আরম্ভ হয়
অহেতুক প্রশ্ন পালা তুমার নাম কি? কোন ক্লাসে পড়াশুনা কইরছু? তুমারা কয় ভাই
বুন? আর সবাই কে কি করে? তুমার বাবার নাম কি ? মাঝে মাঝে এমন আস্তে কতা
বলে- কানে আসে কি আসে না এই কইরি মেয়ির শ্রবণ শক্তি মাপা হয়। শুরু হয়
দ্যাখার পালা । (তৃপ্তি কথাকে নিয়ে বিষয় গুলো অভিনয় করে দেখাচ্ছে) তুমার মুখটা
উঠাও- ঘুমটা ফেল- তুমার চুলটা দ্যাখি- একটু হাসোতো দ্যাখি- তুমার হাতটা দ্যাখি
এবার দাঁড়াও দ্যাখি- একটু হাটোতো দ্যাখি ।
কথা ঃ হাইরে অবলা নারী ! আমরা আইজ অবধি এই কুপ্রথার জাল ছিন্ন কইরি বাইরে আসতি
পারিনি। সেই আমরাই আইজ গলা ফাঁটিয়ে সমঅদিকারের কতা বলি-অদিকার
সংরক্ষনের কতা বলি- সম্মানের কতা বলি- নারী নেতৃত্বের কতা বলি নারী মর্যাদার
কতা বলি- এতে কইরি কি নারীর সম্মান ক্ষুন্য হচ্ছেনা ? মর্যাদা হানি হচ্ছে না ?

(এর মাঝে ছো- মেয়ে টুম্পার প্রবেশ )
টুম্পা ঃ ছো- মনি- ছো- মনি আব্বা তুমাকে ডাকছে।
গীতা ঃ এই তুরা বস -আমি আসছি। চলো মা --

(এই বলে গীতা আর টুম্পা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল)

দৃশ্য ঃ ৫/পাঁচ

মা ঃ বৌমা যাও, ঔতো গীতা ঘর থেকে বাইরে আইয়িছে।
ছোট বৌ ঃ যাচ্ছি মা--
(এই বলে ছোট বৌ গীতার রুমের দিকে গেল, তৃপ্তি, স্বপ্না, কথা ওরা জটলা হয়ে কি
যেন গল্পে মত্তছিল ভাবীর প্রবেশে সবাই হন্তদন্ত হয়ে ভাবীর দিকে দৃষ্টি ফেরালো। )
কি ব্যাপার কি এমন গল্পে তুমরা মত্ত্ব হ্যা ।
তৃপ্তি ঃ কিছু না ভাবী ।
ভাবী ঃ শুইনিছো তুমরা- গীতার বিইর লোক আসছে ।
স্বপ্না ঃ হ্যা ভাবী শুইনিছি ।
কথা ঃ শুনলাম ছেলি নাকি নিজিই আসছে ।
ভাবী ঃ হ্য- তবে তুমাদের একটা কতা বলি ।
তৃপ্তি ঃ কি কতা বলেন ভাবী ?
ভাবী ঃ শনো বিই বুলি কতা- ওরা যখন ্‌আইসবে তুমরা যেন ওদের সামনে যায়ুনা ।
(কথা টি বলেই ভাবী চলে গেলেন)
স্বপ্না ঃ হ্য- আমি গেলি হবিনি ।
তৃপ্তি ঃ আমি গেলিও বা কি ? আমরা তো এত সুন্দর না -যে মেয়ি বাদ দিই আমাদেরকে দ্যাইখি
পছন্দ কইরি ফেইলবে। তবে (কথা)তুই যেন সামনে যাইসনি।
কথা ঃ হ্য- হ্য- খাইয়ি তো আর লোকের কাজ নি- যে বেচা গরুর দাত ধইরি দ্যাখছে ।
স্বপ্না ঃ দ্যাখতিও তো পারে ।
কথা ঃ ছেলি তো পাগল না- যে বিবাহিত মেয়ি দ্যাখি পছন্দ কইরবে।
তৃপ্তি ঃ হতি ও তো পারে ।
কথা ঃ তাহলি ছেলিকে বিই দেওয়া লাইগবে নানে পাবনায় পাটালি হবিনি।

দৃশ্য ঃ ৬/ছয়
(শহীদুল্লা গীতাদের বাড়ী/বড় বাড়ীর কৃষান । বাড়ীর সামনে গাছ থেকে ডাব পাড়ছিল সেই মূহুর্তে দুর থেকে দেখে আমান ভাই ও তার সাথে একজন ভদ্র লোক সহ এদিকেই আসছে। সেটা দেখে তাড়াতাড়ির গাছ থেকে নেমে আসে)

শহীদুল্লা ঃ সালা মালাইকুম ।
আমান ঃ ওয়ালাইকুম আস সালাম ।
শহীদুল্লা ঃ ক্যামন আছেন ভাই?
আমান ঃ (মাথা ঝাকিয়ে) হু আপনি কেমন আছেন?
শহীদুল্লা ঃ জ্যি ভাই- আপনাদের দুয়াই খুব ভালই আছি।
আমান ঃ তাই নাকি ( আমান শহীদুলের সাথে পিয়ালের পরিচয় করিয়ে দিল।)
পিয়াল ঃ এই দিকে কোথায় কি করছিলেন?
শহীদুল্লা ঃ ডাব পারছিলাম ।
পিয়াল ঃ ডাব খাবে কে ?
শহীদুল্লা ঃ ক্যানো আপনেরা
পিয়াল ঃ তাই নাকি ।

(এই বলে সবাই অ-হাসি দিল। গল্প করতে, করতে বাড়ির মূল ফটকে প্রবেশ করলো। এলাকায় বাড়ীটি, বড় বাড়ী হিসাবে পরিচিত। বাড়ীটি অনেক দিনে পুরাতন।)

আমান+পিয়াল ঃ আস সালামু ওয়ালাইকুম ।
গীতার বাবা+ গীতার বড় ভাই ঃ ওয়ালাইকুম আস সালাম ।
বাবা ঃ ক্যামন আছো তুমরা ?
আমান+পিয়াল ঃ জি ভাল আছি ।
বাবা ঃ পথে কোন অসুবিদা হয়নীতো ?

(পিয়াল বলতে যাচ্ছিল পথি মধ্যে ভ্যান প্যাংচার হওয়ার কথা কিন্তু আমান তার মুখ চেপে ধরায় সে আর কিছু বলতে পারেনি।)

আমান ঃ না চাচা- তেমন কোন অসুবিধা হয়নি?
বাবা ঃ তুমার বাবা মা ক্যামন আছে ?
আমান ঃ জি চাচা ভাল আছেন। আপনার শরীর এখন কেমন ?
বাবা ঃ আগের চাইয়ি একুন ্‌ইকটু ভাল । তো একুন ঘরে যাও হাত মুখ ধও- বিশ্রাম নেও
পরে কতা হবে । কইরে তুরা- পানি টানি দে- হাত মুখ ধুয়ার ব্যবস্থা ট্যাবস্থা কর।
বড় ভাই ঃ বাবা আপনারঅস্তির হওয়া লাইগবেনা- আমি দেখছি ।

( বাড়ীর ভিতর মস্ত বড় উঠান, উঠানের কোনে কেউ বসে নারকেল কাটছে, কেউ মাছ কুটছে, কেউ মুরগী পরিস্কার করছে। সারা বাড়ীতে সাড়া পড়েছে কেমন যেন সাজ সাজ রব উঠেছে)
দৃশ্য ঃ ৭/সাত
বাবা ঃ কই গো--
মা ঃ কি হইলু?
বাবা ঃ ছেলি তো দ্যাখলাম-মাশাল্লা- দ্যাখতি শুনতি খুব সুন্দর । আমার গীতার সাথে বেশ
মানাবিনী।
মা ঃ সারা জীবন তুমার এই একটা স্বভাব- গাছে কাঁটাল থাকতি তুমি গোঁপে তেল দিই বইসি
থাক।
বাবা ঃ ক্যানো-কি হইয়িছে ?
মা ঃ তুমার মেয়িকে পছন্দ কল্ল্যি তো হয়।
বাবা ঃ কইরবেনা মানে- আমার মেয়ি কি দেখতি শুনতি খারাপ ।
মা ঃ কিন্তু !
বাবা ঃ দ্যাইখি নিয়ু- আমার গীতা মাকে দ্যাখলি ছেলির অ-পছন্দ হবে নানে।
মা ঃ পছন্দ হলি তোর সব হচ্চেনা ।
বাবা ঃ ক্যান পছন্দ হলি আর বাধা থাকছে কোথাই ।
মা ঃ ছেলির দায় দাবি বুইলি একটা কতা । শহরের ছেলি চোক উদের উপরের দিকে
যদি তেমন কিচু চাইয়ি বসে। মনে নাই তোমার সেই দিনের কথা ।
ফ্ল্যাশব্যাক ।
বাবা ঃ বিই বইলি কতা -কোন কিছু রাখ ডাক না কইরি সরা সরি বুইলি ফেলাই।
ছেলে গ্যার্ডিয়ান ঃ কি কইলেন বিয়াই ।
বাবা ঃ আপনাদের কোন দাবী দাওয়া আছে কিনা?
অতিথী ঃ আত্মীয়তা করমু যখন হ্যাতে ছোট খাট ব্যাপার নিয়ে বাজবে না।
বাবা ঃ তার পরেও ছেলির কোন দাবী দাওয়া আছে কিনা ?

(দাবী দাওয়ার বিষয় নিয়ে গ্যার্ডিজিয়ান কিছু না বলে, সাথে থাকা একজন কে বলতে বলে, অন্য এক আরেক জনকে বলতে বলে এক অপরকে ঠেলা ঠেলি করে। এক পর্যায়ে গ্যার্ডিয়ান ঘটক সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে)

গ্যার্ডিয়ান ঃ (ঘটকের উদ্দেশ্যে) আমনে কইলেই তো হয় মোগো তো আমনে ভাল কইর্রাই জানেন।
ঘটক ঃ মোগো পোলার কোন চাওয়া পাওয়া নাই। বিয়ার সময় মাইয়ারে হাজাইয়া গুজাইয়া দেবেন
এই যা- যা কিছু দেবেন হ্যাতো আমনেগো মাইয়ারই থাকপো। একটা ফ্রিজ দেবেন হ্যাতে
নতুন বউ এক ফির রানবে ফ্রিজে রাইকা তিন ফির খাইবে। নতুন বাসা নিতে কি কি লাগে
হ্যাতো আমনেরা জানেন শিকখিত মানুষ বুঝাইন্যা লাগে না । একলা একলা আমনাগো
মাইয়া ঘরে থাকপে- পোলাতো ব্যানে উটঠা অফিসে চইল্লা যাইবে সময়টা কাটাইবে
বা ক্যামনে- একটা রঙ্গিন টেলিভিশন, সিডি মিডি দেলে- চালাইয়া দেইখা দেইখা সময়টা
পার হরতে পারবে। এ্যতে তো মোগো কোন লাভ লছ নাই । হ্যাতো আপনের মাইয়ার কথা
ভাইবা কইলাম । আর একটা মটর সাইকেল দেলে আমনেগো জামাই, মাইয়া লয়া ঘোরতে
ফেরতে পারতে। মানে কইবে ব্যা-ার শ্বশুর দিছে হ্যাতে আমনার মুখটাও অনেক বড়
হইবে। এহন তো মোবাইলের যুগ জামাই মাইয়ারে দুইটা মোবাইল দেলে হ্যাতে হেরা
হগল সময় কথা বার্তা কইতে পারতে । কোন হানে আছে- ক্যামন আছে- কোন ঝামেলাই
পড়ছে কিনা- কোন কিছু লাগবে কিনা এই সব কিছু আর কি। জামাই মাইয়া বইলা একটা
কতা আছে না - দেওয়ার কি কোন শ্যাষ আছে মাইয়ার সুখ বইল্লা কথা।
বাবা ঃ ঠিক আছে শুনলাম তো এবার ভেবে দেখি


ফ্ল্যাশইন্ড।
মা ঃ এমন যদি কিছু হয়।
বাবা ঃ নাগো না- কতায় বলেনা ঞ্ছস্বর্ণকারে সোনা চেনে শুকুরে চেনে কচুঞ্জ আমান ছেলেটা কেমন ।
তা তুমি জানো না ?
মা ঃ হ্য- তা জানি
বাবা ঃ তবে আবার চিন্তা কি ?
দৃশ্য ঃ ৮/আট

(তাদের আন্তরিকতা আতিথীয়তা এবং সহিঞ্চু আচরণে মুগ্ধ হবারই কথা কিন্তু এ বাড়ীতে প্রবেশের পর থেকে অতিব্রু আতিথীয়তা পিয়ালের মনকে একটা ভয় একটা সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেয়)
পিয়াল ঃ এত কিছু দেখে আমার মনে কেমন যেন হচ্ছে ।
আমান ঃ কেন- কি মনে হচ্ছে ?
পিয়াল ঃ এদের এই অতিব্রু আতিথীয়তা-আমার কাছে মনে হচ্ছে এর মাঝে অন্তরনিহিত কোন
কারণ আছে ।
আমান ঃ কি যে বলেন না পিয়াল ভাই- এর মাঝে আবার অন্তরনিহিত কি কারণ থাকতে পারে। এক
আত্মীয় আর এক আত্মীয়ের বাসায় গেলে একটু আপ্যায়ন করবে না। এটা একটা রীতি বলে
কথা- তারপর আমি অনেক দিন পরে এলাম-সাথে আপনি আছেন -এইটুকু না করে কি
পারে। আর বোঝেনিতো গ্রামের মানুষ সাধারণত একটু অতিথী পরায়ন হয়।আপনি একটু
বসেন আমি আসছি ।

(কথাটি আমান গায়ে নিলো না ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল, এমন সময় টুম্পা প্রবেশ করলো)

পিয়াল ঃ বাবু- শোন- শোন- এই দিকে আসো তোমার নাম কি ?
টুম্পা ঃ আমার ভাল নাম আলিফা খানম টুম্পা ।
পিয়াল ঃ বা! বেশ সুন্দর নাম তো তোমার। তবে তোমার খারাপ নামটা কি ?
টুম্পা ঃ পুটি - আমার ছোট মনি পুটি বুইলি ডাকে ।
পিয়াল ঃ তোমার ছোট মনি আবার কে
টুম্পা ঃ চেনোনা- আমার ছোট ফুফিকে- যার সাতে তুমার বিই হবে । যাকে তুমি দ্যাখতি
আইয়িছো ।


(মায়ের ডাকে টুম্পা ঘর থেকে চলে গেল। ও কথা শুনতেই পিয়ালের মাথায় চক্কর দিয়ে দিয়ে উঠলো। মেয়েটা কি বলল, আসলে আমি যা ভেবে ছিলাম ঠিক তাই । আমানকে আমি এই কথায় বুঝাতে চেয়েছিলাম। আসলে ও কি বিষয়টা বুঝলনা। নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করলো। তবে কি ও সব জানে, জেনে শুনে আমাকে। ছি! শেষ পযর্ন্ত আমানও আমার সাথে !এমন চিন্তাই সে উদবেলিত হয়ে পরলো। তবে এখন কি করি ইচ্ছে করছে দৌড়ে পালায় কিন্ত এটাতো সম্ভব নই। গলা বুক শুকিয়ে আসছে এক নিমিষেই শরীর ভিজে গোসল হয়ে গেল )

দৃশ্য/ ৯/নয়
গীতার বড় ভাই ঃ টুম্পার মা টুম্পার মা
টুম্পার মা ঃ এভাবে গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছো ক্যানো ?
টুম্পার বাবা ঃ সমস্যা- টুম্পার মা- সমস্যা।
টুম্পার মা ঃ ক্যানো -কি হইয়িছে ?
টুম্পার বাবা ঃ আরে চুয়াডাঙ্গার সেই ছেলি ফোন দিয়িছিলু। যে ছেলির সাথে গীতার বিই প্রায় পাঁকা
সেই বিই ভাইঙ্গি গেল শুধু যৌতুকের জন্ন্যি। বাবা কনু ছেলির বিতে কানা পয়সা
যৌতুক নিই নি । মেয়ির বিই দেবে তাও টিকি পয়সা যৌতুক দেবে না। যার
ইচ্ছা বিই কইরবে- না হলি না কইরবে। আমার বাবার মত যদি এই সমাজের প্রতিটি
বাবা এমন কঠর হইতু- তাহলি এই যৌতুক নামের অবিশাপ থ্যাইকি মুক্তি
পাতাম।
টুম্পার মা ঃ যে বিই একবার যৌতুকের কারণে ভাইঙ্গি গেল। তারা আবার ফোন দিয়িই কি বল্লু
টুম্পার বাবা ঃ ওরা উদের ভুল বুঝতি পাইরিছে- এখন ছেলি যৌতুক ছাড়াই গীতাকে বিই
কইরবে। ওর বাবার ও স্‌েই একি কথা আগামী কাইল আসতি চাচ্ছে বিইয়ের
দিনখান করতি ।
টুম্পার মা ঃ যৌতুকের কারণে যে বিই একবার ভাইঙ্গি গেল। তাদের সাথে আবার।
টুম্পার বাবা ঃ না টুম্পার মা না মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমরা সাদারণত সবাই এক ভুলের মধ্যে
আছি। একুন থেকি আমাদের কে সংশোদন হতি হবে । যুব সমাজকে আগিয়ি
আসতি হবে- তবেই এই সমাজে একদিন যৌতুক মুক্ত সমাজ হিসাবে প্রতিষ্ঠা
পাবে। ভুল যখন উরা বুঝতি পাইরিছে যৌতুক নেওয়া এবং দেওয়াএটা একটা
সামাজিক অপরাধ তাদের একবার সংশোদন হবার সুযোগ না দিলি কি হয়।
টুম্পার মা ঃ বাবা জানে এই কতা?
টুম্পার বাবা ঃ বাবার সাতেও উদের কতা হইয়িছে । কিন্তু এখন ভাবছি আমানদের নিইয়ে। আমান
ছুরাডা কষ্ট কইরি-দ্যাখি শুইনি একটা ভাল ছেলি নিয়ি আইলু আর এখন কিভাবে।
আমান ঃ চিন্তা নাই - মিয়া ভাই - চিন্তা নাই ।
টুম্পার বাবা ঃ আরে আমান তুমি
আমান ঃ জি মিয়া ভাই আমরা দুজন দরজার ওপারে দাড়িঁয়ে আপনাদের সব কথা শুনেছি।
আসলে আমারা এখানে বিয়ের উদ্দেশ্যে আসিনি এসেছি নিছক বেড়াতে । কিন্তু
এসে দেখি এই অবস্থা আমরাওবেশ চিন্তাই পড়ে গিয়েছিলাম ।
টুম্পার বাবা ঃ তাই নাকি বাঁচালি ভাই বাঁচালি । তা না হলি কি যে হইতু ।
টুম্পার মা ঃ বেড়াতে যখন আইসিছো ভাই -তাহলে কিন্তু আর যাতি পাইরছু না ।
আমান ঃ ভাবী আপনি থাকতে বলেন আর না বলেন এসেই যখন পড়েছি
তখন গীতার বিয়ে না খেয়ে আর যাচ্ছি না।
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ৭৫০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৪/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast