www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হলুদিয়া পাখি-২

সময় বয়ে চলে তার আপন গতিতে রুখবে কে তারে । কালের পরিক্রমায় জীবন থেকে খসে যায় অনেক গুলো দিন। তবুও তার ফোন আসেনা। প্রতিক্ষা, প্রতিক্ষা, প্রতিক্ষার ক্ষন সেতো দীর্ঘতর তা ফুরাতে চাইনা । জীবন চলার পথে প্রয়োজনে অ-প্রয়োজনে অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে হয়। সব মানুষকে কি সবাই মনে রাখে । আকাশে অনেক তারাই ফোটে একটি তারা যদি আকাশ থেকে খসে পড়ে আকাশ কি তা মনে রাখে? রাখে না। হয়তো তেমনি আমাকে কেউ মনে রাখেনি ভুলেই গেছে। এমন শত চিন্তার মন যখন উদ্বিগ্ন ঠিক তখন ফোনটা বেঁজে উঠলো । রিসিভ করতেই একটি মায়া-ময়ি মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসলো । বুকের মাঝে কেমন যেন ছ্যাৎ করে উঠলো ।
- হ্যালো আস সালামু অলাইকুম
- অলাইকুম আস সালাম, কে বলছেন প্লিজ ।
- জী আমি হলুদিয়া পাখি বলছিলাম ।
- মানে ?
- জী হ্যা আমি ঝিনাইদহ থেকে ববি বলছিলাম।
- আচ্ছা, এতদিন পড়ে বুঝি মনে পড়লো ।
- তা ঠিক নয়, বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না। সেদিনের পর থেকে প্রতিদিন, প্রতিক্ষন, আপনার কথা ভেবেছি, সব সময় আপনার কথা মনে করেছি, আপনার মুখ্যচ্ছবি আমার চোখের সামনে সর্বক্ষন ভেসেছে, বেজেছে আপনার কন্ঠ ধ্বনি। আপনি না খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন। আপনার মত তো আমি পারিনা। সেদিন বাসের মধ্যে আপনি যখন প্রসঙ্গ ক্রমে কথা বলছিলেন। সবাই কেমন যেন অবাক চিত্তে থ হয়ে আপনার কথা শুনছিল। আমার ও না বেশ ভাল লাগছিল। আর আপনি বলছেন আমি আপনাকে ভুলে গেছি । আপনার মত মানুষকে কি এত সহজেই ভোলা যায়। ভোলা যায় আপনার লেখা সেই কবিতার চরণ গুলো। যা আপনি পুরুষ মানুষ হয়ে মেয়েদের প্রকৃত সামাজিক অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন। যা আমি মেয়ে হয়ে কিনা তা ভুলে যাবো। আপনাকে ভুলে যাওয়া তো আর সহজ বিষয় নই।
- এই বুঝি তার প্রমান।
- আমি জানতাম আপনি বিশ্বাস করবেন না ।
- আচ্ছা ঠিক আছে। এবার বলুন আমার লেখা হলুদিয়া পাখির বিষয়টা আপনি কি ভাবে জানলেন।
- অনেক ভেবেছি আপনার সাথে কথা বলবো, কিন্তু !
- এতে আবার কিন্তু কি ?
- আপনার মোবাইল নাম্বারটি পাব কোথা থেকে ।
- কেন ? আমি তো আপনাকে সেদিন একটা কার্ড দিয়েছিলাম, তাতেই তো সব আছে।
- আপনার দেওয়া সে কার্ডটি আমি আমার ব্যাগের পকেটে রেখেছিলাম কিন্তু সেটা আর পরে খুজে পাইনি । তাই ইচ্ছে থাকা সত্তেও আপনাকে ফোন দিতে পারিনি ।
- তবে এখন পেলেন কোথা থেকে ।
- ভাগ্য, ভাগ্য আমাকে জোগাড় করে দিয়েছে ।
- সেটা না হয় হলো,তবে কি ভাবে জানলেন আমার লেখা হলুদিয়া পাখির বিষয়টি ।
- সে এক লম্বা কাহিনী বলবো ?
- জী বলুন ।
- আপনি আমদের ঝিনাইদহ সাহিত্য পত্রিকা “মুক্ত আলোর” কথা জানেন নিশ্চয়। পত্রিকাটির সাথে হয়তো আপনার সক্ষতাও রয়েছে।
- আসলে আপনি যেভাবে বলছেন সে ভাবে পাক্ষিক “মুক্ত আলোর” সাহ্যিত পত্রিকার সাথে আমার তেমন কোন সখ্যতা নেই তবে এটা জানি যে ঝিনাইদহ থেকে একটি সাহ্যিত পত্রিকা ছাপা হয়।
- তবে এটা নিশ্চয় জানেন যে, এই পত্রিকাতে আপনার লেখা ছাপা হয়েছে।
- তাই নাকি ? এটা তো জানি না ।
- আপনি জানেন না
- না
- জী হ্যা এই পত্রিকাটিতে আপনার লেখা ছোট গল্প হলুদিয়া পাখি ছাপা হয়েছে।
- সত্য বলছেন?
- তবে কি আমি মিথ্যা বলছি ।
- না তা বলছি না, কিন্তু !
- কিন্তু কি ? আমার চাচাতো ভাই রিয়াল তিনি এই পত্রিকাটি নিয়মিত রাখেন । আমি পত্রিকাটি নিয়মিত না পড়লেও প্রায়সয় পড়ে থাকি। সেদিন পত্রিকাটি পড়তেই দেখি আপনার লেখা হলুদিয়া পাখি । লেখাটি পড়ে আমার ভিষণ ভাল লাগে যা আপনাকে ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারবোনা। আপনার লেখা নিয়ে যে সমালোচনা করবো, এমন যোগ্যতা আমার নেই, তবে এই টুকু বলতে পারি আপনি অ-সাধারন লেখেন। আপনার লেখার হাত বেশ। আপনার মোবাইল নাম্বারটার জন্য পত্রিকা অফিসে গিয়েছিলাম । উনারা দিতে পারলেন না। বলল আপনার সাথে নাকি উনাদের কোন যোগ যোগ নাই । তবে একটি নাম্বার দিয়েছিল। নাম্বারটি আমান ভাইয়ের। তিনিই নাকি আপনার এই লেখাটি পত্রিকা অফিসে জমা দিয়েছিল। আমি পরে কোন একসময় তাকে ফোন দিয়েছিলাম। তার কাছ থেকেই আপনার নাম্বারটি সংগ্রহ করেছি। করেই আজ আপনাকে ফোন দিলাম ।
ইতিমধ্যে ফোনটা কেটে গেল। আসলে কেটে গেল ? নাকি কেটে দিল ? নাকি মোবাইল এ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স শেষ হয়ে কেটে গেল ? যদি তাই হয় তাহলে আমার ফোন ব্যাক করা উচিৎ কিন্তু তাতে যদি তার সমস্যা হয়। এমন নানা টানা-পোড়েনে পড়ে, পরে আর ফোন দেওয়া হয়ে উঠেনি । পরে ওদিক থেকে আর কোন সাড়া মেলেনি। এমনি ভাবে বেশ কিছু দিন কেটে গেল। এক সময় আমি সেই নাম্বারে ফোন দিয়েছিলাম। যে নাম্বার থেকে ববি আমাকে সেদিন ফোন দিয়েছিল। ফোন করতেই একটি পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসল। কন্ঠেই আচঁ করলাম ভদ্র লোকটি হয়তো ববির বাবা নই তো তার ভাই। হতচৌকিত হয়ে পড়লাম । কথা না বলে কেটে দিলে কেমন হয়। অ-ভদ্রতা হবে নিশ্চয তাতে হয়তো বিষয়টা আদারওয়াইজ নিলেও নিতে পারে । তাই কথা না বলে পারলাম না পরে রং নাম্বার বলে শালিনতার সহিত ফোনটা রেখে দিলাম । তার পর থেকে আমি আর যোগাযোগ করার অ-মূলক চেষ্টা করিনি। বেশ কিছু দিন হল আমি আমার মাঝে বেশ আ-মূল পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। কেন যেন কিছুই ভাল লাগেনা সব সময় অ-স্বস্তি বোধ করি। কোন কাজে মন বসেনা নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়। বুকের মাঝে ব্যাথা অনুভূত হয়। নিঃশ্বাস নিতে গেলে মনে হয় বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান কমে গেছে। নিঃস্ব একা বলে মনে হয়। মনে হয় এই নশ্বর পৃথিবীতে আপন বলে আমার আর কেউ নাই। দুরের বাঁশির সুরও মাঝে মাঝে কেমন যেন বে সুরা বলে মনে হয়। কোকিলের কুহু ডাক কানে লাগে। সব কিছুর মাঝে কি যেন খুঁজে ফেরে। মেলাতে চেষ্টা করি আধো আলো আধো ছায়ার মত সেই মুখ। খুজে ফিরি আমার সেই হলুদিয়া পাখিকে । নদীতে যে, ঢেউ উঠে, সে দোষ কি নদীর নাকি ঢেউয়ের। আমি বলব এ দোষ কাহারও নয় এ দোষ সময়ের এ দোষ বাতাসের। উপরোক্ত তথ্য বলে দেয় যে আমি প্রেমে পড়েছি । ভালবেসে ফেলেছি হলুদিয়া পাখিকে।

চয়ন আর আমি (আমান) যদিও একে অপরের ঘনিষ্ট বন্ধু কিন্তু এ বিষয় নিয়ে ওর সাথে আমার তেমন কোন আলাপ হয়নি। ববি যে সেদিন আমার কাছ থেকে চয়নের সেল নাম্বারটি নিল। চয়নের সাথে তার যোগাযোগ হয়েছে নাকি, না। এটা জানার দরকার কিন্তু কিভাবে চয়ন তো আবার একটু চাপা প্রকৃতির অনেক কিছুই আছে যা ও বলতে চায় না । থাক ওর কাছে এসব জানতে চাওয়ার দরকার নেই। তার চেয়ে এই ভাল ববির কাছে ফোন দিলে সব জানা হয়ে যাবে।
- হ্যালো আস সালামু অলাইকুম
- অলাইকুম আস সালাম, কেমন আছেন ?
- জি হ্যা ভালো। তো আমান ভাই আপনি কেমন আছেন।
- এই তো আছি কোন মতে, দিন কেটে যাচ্ছে সকালে সূর্য্য উঠছে সন্ধ্যায় ডুবছে। আবার রাত পেরিয়ে সকালে হচ্ছে, সন্ধ্যায় ডুবছে এর মাঝে কখনো মেঘ, কখনো রৌদ্রুর, কখনো খড়া রৌদ্রু তাপ আবার কখনো বৃষ্টি, মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া এই আর কি। যে ভাবে দিন বয়ে যায় তার আপন গতিতে, ঠিক সেভাবেই। থাক ও সব কথা যার জন্য ফোন দিয়েছি সেটা বলি । সেদিন যে চয়নের নাম্বার নিলেন ওর সাথে কি আপনার যোগাযোগ হয়েছে।
- জি হ্যা ।
- ব্যাস আমি সার্থক
- বিষয়টা ঠিক বুঝলাম না।
- প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে। এমনটাই আমার আশা ছিল। চয়ন আর আমি এক অপরের ঘনিষ্ট বন্ধু দীর্ঘ দিন আমরা একি সাথে আছি। আমি ওর সম্পর্কে যতটা জানি আমার মনে হয় ওর কোন আপন জন এতটা জানে বলে মনে হয় না। প্রথম থেকেই চয়ন কেন যেন নারী বিদ্বেষী ভাবাপন্না মানুষ। কিন্তু ওকে দেখে তা বোঝা যায় না। লেখক হিসাবে লিখতে হয় তাই লেখে। হলুদিয়া পাখি গল্পে রয়েছে আমার একটা বিশেষ চরিত্র। গল্পের পটভূমি, কাহিনী, বিষয় আলেখ্য সম্পর্কে আমি পুরাপুরি জ্ঞাত। গল্পের উল্লেখিত কাহিনীর সাথেও আমি অনেকটাই জড়িত ছিলাম। গল্পটি লেখা সময় সম্পাদকীয়তার দায়িত্বে পালন করেছিলাম। গল্পটি আমি বহুবার পড়েছি। লেখাটিতে রয়েছে লেখকের নিজস্ব চাওয়া এবং পাওয়ার আকুলতা। বন্ধু হয়ে বন্ধুর জন্য কিছু করতে পারবনা এমনটা কি হয়। কিন্তু কি করবো আপনার ঠিকানা তো আমি জানতাম না তবে কি করে যোগযোগ করব। এমন ভাবনা যখন মগ্ন ঠিক তখন এরকম একটা আইডিয়া মাথায় আসলো। ভাবনা অনুযায়ী লেখাটি পত্রিকা অফিসে জমা দিলাম ছাপা হলো। এর পর আমার চাওয়াটা পূণ্য হল। এই আর কি,

তুই যে আমার হলুদিয়া
একখান পরাণ পাখি।
ফোন না দিলে বলনা পাখি
কেমন করে থাকি
পাখি কেমন করে থাকি ।।

মনের আকুতি যখন সুরের জালেবন্দি করে আন মনে চয়ন বসে বসে গলা ছেড়ে গায়ছিল ঠিক তখন মোবাইল ফোনটা বেঁজে উঠলো । ফোনটি রিসিভি করতেই ভেসে আসলো সেই চেনা কন্ঠ চেনা সুর ।
- কেমন আছেন ।
- জি ভাল। আপনি কেমন আছেন?
- যেমনটি রেখেছেন ঠিক তেমনি আছি।
- তার মানে, তবে কি আমি ইচ্ছে করলে কাউকে ভাল রাখতে পারি ।
- অবশ্যই,
- তাই নাকি, সে যায় হোক আপনাকে কটা প্রশ্ন করি।
- অবশ্যই
- হলুদিয়া পাখি গল্প; লেখক হিসাবে লেখার দরকার তাই লিখেছেন নাকি সেটা আপানার নিজস্ব অভিব্যক্তি।
- কেন? আমি লেখক, তাই বলে আমি কি মানুষ না আমার নিজস্ব চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে না।
- অবশ্যই থাকতে পারে। তবে আর একটা প্রশ্ন করি। আপনি যে গল্পে হলুদিয়া পাখির রূপকৃর্তি গেয়েছেন। আসলে আমি কি অতটা সুন্দর ।
- আমার কাছে মনে হয়েছে তাই ।
- আপনারা কবি মানুষ অনেক কিছুই আছে যা আপনারা খুব সহজে বলতে পারেন। যা আমরা পারিনা। আপনার ভালবাসাকে আমি অবহেলা অবজ্ঞায় দুরে ঠেলে দেব এরকম দুঃসাহস আমার নেই। আপনার মত মানুষের ভালবাসা পাওয়া সেত আমার জন্য সৌভ্যাগের ব্যাপার কিন্তু এর পরেও একটা কথা থেকে যায়। (যে পাত্রের যতটুকু ধারন ক্ষমতা তার ততটুকুই পাপ্য হওয়া উচিৎ) কারণ অনাকাঙ্খিত পাওয়া বিড়ম্বনা-ই বয়ে আনে। বহমান সময়ের রকমারি জীবন দেখেছি অনেক, তাই তো এই ভাবালুকতা !
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬১২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast