জলফু মাঝি
***জলফু মাঝি***
---আবিদ আল আহসান
জলফু মাঝির নাম শুনেছ?
অনেক বড় মাঝি,
তার নায়েতে যাইতো গাঁয়ের
নেতা-মোড়ল-কাজী,
নাও ছিলো তার জীবন-তরী
নাও ছিলো তার সুখ,
দুখের মাঝেও নায়ের গানে
ভুলতো মাঝি দুখ,
ঘর ছিলোনা জলফু মাঝির
কাপড়ও নেই গায়ে,
সারা জনম ভরেই মাঝি
থাকতো খালি পায়ে,
লুঙ্গিতে তার শত তালী
কোন রকম চলে,
নাইতো খাবার শুধুই রুটি
পাটাতনের তলে,
শুকনো রুটির সাথে নদীর
মিষ্টি পানি খেয়ে,
সারাটা দিন কাটতো মাঝির
বেসুরো গান গেয়ে,
শত-হাজার দুঃখ এসে
বেঁধে রাখতো তা'য়,
সে দুখ যেন সুখের হয়ে
ফুটতো ঠোঁটের বায়,
হাজার শত দুখের মাঝেও
ভাটিয়ালীর সুরে,
নৌকা নিয়ে ছুটতো মাঝি
ঐ দুর-বহুদূরে।
গাঁয়ের নেতা-মোড়ল-কাজী
সব মানুষই তারে
কেমন যেন শ্রদ্ধা করে
বলতে পারছি নারে,
কারণ জান? বর্ষাকালে
যখন গভীর রাতে
ঝড়-বৃষ্টির ভয়ে সবাই
ঘুমন্ত দুনিয়াতে,
সেই সে কঠিন রাতেও যদি
অসুস্থ হয় কেউ,
উতলে ওঠে জলফু মাঝির
ভালবাসার ঢেউ,
নাও নিয়ে আসে ঘরের দ্বোরে
নাওয়ে তুলে তা'য়,
রাতের আঁধার ভেদ করে সে
রোগী নিয়ে যায়,
কোথায় আছেন হেকিম সাহেব
কই ডাক্তারখানা
এসব যেন জলফু মাঝির
ভালো করেই জানা,
শুধু রোগ নয় যেই আপদ আর
যেই বিপদই আসে,
ঝাঁপিয়ে পড়ে জলফু মাঝি
বিপদ-সর্বনাশে,
বুক দিয়ে সে ঠেকায় বিপদ
ঠেকায় দুঃখ-জ্বালা,
তাইতো জলফু 'মাঝি'হলেও
গাঁয়ের প্রদীপালা
অন্য সবার দুঃখ মাঝি
নিজের উপর লয়,
বুঝেনা কেউ জলফু মাঝির
জীবন তরীর ক্ষয়।
শীতের রাতে জলফু মাঝি
ডাঙায় বেঁধে নাও,
পাটাতনেই থাকে শুয়ে
উদোম সারা গাও,
শীতের রাতেও শীত নেই তার
হয়তো দুখের ভারে,
শীত ও গরম বুঝার শক্তি
দেয়নি বিঁধি তারে,
গান ধরে সে রাত বিরাতে
সে কি দুঃখের সুর!
সে সুর যেন হৃদয় ফেড়ে
যায় যে অনেক দূর
কিসের দুখে গান ধরে সে
তা জানেনা কেউ,
হাসির মাঝেও অন্তরে তার
উঠে দুখের ঢেউ,
দেখেনা সেই দুঃখ কেহ
বুঝেনা তার মন,
জলফু মাঝি জলফু মাঝি
নয়তো সাধারণ।
সেদিন গায়ের মোড়ল বাড়ি
ডাকাত এলো রাতে,
খবর পেয়েই জলফু মাঝি
ছুটলো সাথে সাথে,
ভয়-ভীতি সব দাফন করে
হাক ছেড়ে কয় "ওরে,
রঘু ডাকাত এ কাজ করতে
বারণ করেছি তোরে?
তারপরও তুই! আরো আবার
আমার মোড়ল বাড়ি!"
হাক ছেড়ে কয় "গায়ের সবাই
জাগো তাড়াতাড়ি,
দেখ দেখ রঘু ডাকাত
যায় পালিয়ে ঐ"
গায়ের ক'জন জেগে বলে
'রঘু ডাকাত কই?'
দৌড়ে পালায় রঘু ডাকাত
পিছে বৈঠা হাতে,
জলফু মাঝি যায় মিশে যায়
অন্ধকারের সাথে
সকাল হতেই খবর ছড়ায়
জলফু মাঝির ভয়ে,
রঘু ডাকাত পালিয়ে গেছে
আপন জীবন লয়ে।
এমনি ভাবে রাত বিরাতে
সর্ব কাজেই মাঝি,
সকল বিপদ বুকে নিতে
এমনে হতো রাজী,
ধীরে ধীরে মরণ সাগর
গ্রাস করিল তা'য়
হারিয়ে গেলো জলফু মাঝি
নিঝুম নিরালায়।
আজ জলফু মাঝির নৌকা দেখি
ঘাটের সাথে বাঁধা,
ভেঙ্গে গেছে সেই পাটাতন
লেগে আছে কাদা,
চির হাতিয়ার বৈঠা খানি
ভেঙে যেন শেষ,
নেই নেই বীর জলফু মাঝি
হয়েছে নিরুদ্দেশ,
জলফু মাঝি নেই বলে আজ
গ্রামটিও নেই ভাল,
তার মতো আর পারেনা কেউ
জ্বালতে সত্য-আলো,
চোর-বাটপার ভরে গেছে.
বাড়ছে গাঁয়ের দুখ,
জলফু মাঝি আবার আসো
ফিরিয়ে আনতে সুখ।
***অনেক আগে লিখা একটি কবিতা। আজ আবার সংস্করণ করে দিলাম। পড়ে দেখুন, আশাকরি গ্রাম বাংলার কথা মনে পড়বে।
---আবিদ আল আহসান
জলফু মাঝির নাম শুনেছ?
অনেক বড় মাঝি,
তার নায়েতে যাইতো গাঁয়ের
নেতা-মোড়ল-কাজী,
নাও ছিলো তার জীবন-তরী
নাও ছিলো তার সুখ,
দুখের মাঝেও নায়ের গানে
ভুলতো মাঝি দুখ,
ঘর ছিলোনা জলফু মাঝির
কাপড়ও নেই গায়ে,
সারা জনম ভরেই মাঝি
থাকতো খালি পায়ে,
লুঙ্গিতে তার শত তালী
কোন রকম চলে,
নাইতো খাবার শুধুই রুটি
পাটাতনের তলে,
শুকনো রুটির সাথে নদীর
মিষ্টি পানি খেয়ে,
সারাটা দিন কাটতো মাঝির
বেসুরো গান গেয়ে,
শত-হাজার দুঃখ এসে
বেঁধে রাখতো তা'য়,
সে দুখ যেন সুখের হয়ে
ফুটতো ঠোঁটের বায়,
হাজার শত দুখের মাঝেও
ভাটিয়ালীর সুরে,
নৌকা নিয়ে ছুটতো মাঝি
ঐ দুর-বহুদূরে।
গাঁয়ের নেতা-মোড়ল-কাজী
সব মানুষই তারে
কেমন যেন শ্রদ্ধা করে
বলতে পারছি নারে,
কারণ জান? বর্ষাকালে
যখন গভীর রাতে
ঝড়-বৃষ্টির ভয়ে সবাই
ঘুমন্ত দুনিয়াতে,
সেই সে কঠিন রাতেও যদি
অসুস্থ হয় কেউ,
উতলে ওঠে জলফু মাঝির
ভালবাসার ঢেউ,
নাও নিয়ে আসে ঘরের দ্বোরে
নাওয়ে তুলে তা'য়,
রাতের আঁধার ভেদ করে সে
রোগী নিয়ে যায়,
কোথায় আছেন হেকিম সাহেব
কই ডাক্তারখানা
এসব যেন জলফু মাঝির
ভালো করেই জানা,
শুধু রোগ নয় যেই আপদ আর
যেই বিপদই আসে,
ঝাঁপিয়ে পড়ে জলফু মাঝি
বিপদ-সর্বনাশে,
বুক দিয়ে সে ঠেকায় বিপদ
ঠেকায় দুঃখ-জ্বালা,
তাইতো জলফু 'মাঝি'হলেও
গাঁয়ের প্রদীপালা
অন্য সবার দুঃখ মাঝি
নিজের উপর লয়,
বুঝেনা কেউ জলফু মাঝির
জীবন তরীর ক্ষয়।
শীতের রাতে জলফু মাঝি
ডাঙায় বেঁধে নাও,
পাটাতনেই থাকে শুয়ে
উদোম সারা গাও,
শীতের রাতেও শীত নেই তার
হয়তো দুখের ভারে,
শীত ও গরম বুঝার শক্তি
দেয়নি বিঁধি তারে,
গান ধরে সে রাত বিরাতে
সে কি দুঃখের সুর!
সে সুর যেন হৃদয় ফেড়ে
যায় যে অনেক দূর
কিসের দুখে গান ধরে সে
তা জানেনা কেউ,
হাসির মাঝেও অন্তরে তার
উঠে দুখের ঢেউ,
দেখেনা সেই দুঃখ কেহ
বুঝেনা তার মন,
জলফু মাঝি জলফু মাঝি
নয়তো সাধারণ।
সেদিন গায়ের মোড়ল বাড়ি
ডাকাত এলো রাতে,
খবর পেয়েই জলফু মাঝি
ছুটলো সাথে সাথে,
ভয়-ভীতি সব দাফন করে
হাক ছেড়ে কয় "ওরে,
রঘু ডাকাত এ কাজ করতে
বারণ করেছি তোরে?
তারপরও তুই! আরো আবার
আমার মোড়ল বাড়ি!"
হাক ছেড়ে কয় "গায়ের সবাই
জাগো তাড়াতাড়ি,
দেখ দেখ রঘু ডাকাত
যায় পালিয়ে ঐ"
গায়ের ক'জন জেগে বলে
'রঘু ডাকাত কই?'
দৌড়ে পালায় রঘু ডাকাত
পিছে বৈঠা হাতে,
জলফু মাঝি যায় মিশে যায়
অন্ধকারের সাথে
সকাল হতেই খবর ছড়ায়
জলফু মাঝির ভয়ে,
রঘু ডাকাত পালিয়ে গেছে
আপন জীবন লয়ে।
এমনি ভাবে রাত বিরাতে
সর্ব কাজেই মাঝি,
সকল বিপদ বুকে নিতে
এমনে হতো রাজী,
ধীরে ধীরে মরণ সাগর
গ্রাস করিল তা'য়
হারিয়ে গেলো জলফু মাঝি
নিঝুম নিরালায়।
আজ জলফু মাঝির নৌকা দেখি
ঘাটের সাথে বাঁধা,
ভেঙ্গে গেছে সেই পাটাতন
লেগে আছে কাদা,
চির হাতিয়ার বৈঠা খানি
ভেঙে যেন শেষ,
নেই নেই বীর জলফু মাঝি
হয়েছে নিরুদ্দেশ,
জলফু মাঝি নেই বলে আজ
গ্রামটিও নেই ভাল,
তার মতো আর পারেনা কেউ
জ্বালতে সত্য-আলো,
চোর-বাটপার ভরে গেছে.
বাড়ছে গাঁয়ের দুখ,
জলফু মাঝি আবার আসো
ফিরিয়ে আনতে সুখ।
***অনেক আগে লিখা একটি কবিতা। আজ আবার সংস্করণ করে দিলাম। পড়ে দেখুন, আশাকরি গ্রাম বাংলার কথা মনে পড়বে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কৌশিক আজাদ প্রণয় ০৮/১২/২০১৪কবিতার চরিত্রটির মতো কবিতাটিও অসাধারণ। জলফু মাঝি যেন এক আত্মবিশ্বাসের নাম, এক আস্থার নাম। তবে পরিণতিতে কি হল সেটা অস্পস্তই থেকে গেলো। জলফু মাঝি কিভাবে দুঃখী হলেন, কিভাবে নিরুদ্দেশ হলেন তার বর্ণনা পেলে বেশী ভালো হতো কবি।
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ০৬/১২/২০১৪দিল দরিয়া গণবন্ধু জলফু মাঝিকে নিয়ে সুন্দর এই দরদী লেখাটি বেশ ছন্দ দুলিয়ে পড়ার মত কবিতা হয়েছে। কবিতাটি বেশ বড় সে কারণেই কি না জানি না - মাঝেমাঝে ছন্দে ব্যাঘাত লক্ষ্য করা গেছে। আর একটু ঝাড়া-মোছা করলে আরো সুন্দর হবে।
অভিনন্দন কবিকে। -
একনিষ্ঠ অনুগত ০৬/১২/২০১৪বেশ বড় লেখা।। ভালোই লাগলো।।
-
ইসমাত ইয়াসমিন ০৬/১২/২০১৪Oshadharon Likhecho. Amar nani Bari gele ek majhir noukai Chortam tar kotha mone pore gelo. sotti kobitata onek sundor hoeache.
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ০৬/১২/২০১৪আমাদের দেশে এখন এরকম জলফু মাঝি দরকার। দরকার একজন পাঞ্জেরীর। অনেক ভালো লাগলো। অনেক বড় কবিতা । যত বড় তার থেকে বেশী সুন্দর। আর হ্যা কয়েকটা জায়গায় একটু ...........। আপনি কয়েকবার পড়লেই বুঝতে পারবেন।
-
নূরুজ্জামান নাঈম ০৫/১২/২০১৪জলফু মাঝি পড়ে ভাল লাগল।