www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

করোনায় একজন প্রবাসী।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩১তম পর্ব।

মিশরে গণবিক্ষোভে পতন গঠে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের এতে সৌদি আরব বিচলিত হয়ে পড়ে। এর পর জনগণের অংশ গ্রহনে প্রথমবারের মত ভোটে বিজয় হয় মুসলিম ব্রাদাহুড়, প্রেসিডেন্ট হয় মুরসি। তখন হতে সৌদি আরব শুরু করে মুরসির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর এই তথ্য গোপনও থাকেনি এবং অন্যান্য দেশেও ইসলামি দলগুলো দমনে মরিয়া হয়ে উঠে সৌদি আরব। আর তুরস্ক সব দেশে ইসলামি দল এবং ব্রাদারহুড়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় চলে।এইজন্য ২০১৪ সালে জাতীসংঘের স্থায়ী সদস্যপদে তুরস্কের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে সৌদি আরব। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এই দুই দেশ একই লক্ষ্যে মাঠে নামলেও কিছুদিন পর শুরু হয় বিভক্তি। বাশার আল আসাদকে হটানোর লক্ষ্য কাজ করে বিরোধীদের সাহায্য করতে গিয়ে তুরস্ক উদারপন্থীদের সমর্থন দেয় আর সৌদি আরব কট্টরপন্থীদের সমর্থন দেয় এই নিয়ে আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরী হয় সৌদি ও তুরস্কের।

এরপর ২০১৭ সালে কাতারকে নিয়ে চুড়ান্ত বিভেদ তৈরী হয়। তুরস্কের সর্বাত্মক সাহায্যে ছোট দেশ কাতার অবরোধে ঠিকে থাকে এবং আরো উন্নতি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। এর মধ্য আসে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ, সেখানেও একে অপরের বিরোধী অবস্থান নেয়। এতকিছুর পরও টানেলের শেষ পান্তে দেখা দেয় আলোর ঝলকানি আর তা হলো তুরস্কে ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ। ভূমিকম্পে তুরস্কের প্রতি সৌদির সহমর্মিতা সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। এর পর আসে জি২০ সম্মিলন বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিধর বিশ দেশের এই সম্মিলন আয়োজন করে সৌদি আরব। তবে করোনা মহামারীর কারণে এই সম্মিলন ভার্চুয়ালি আয়োজন ছিলো আর তখন ফোন করেন সৌদি বাদশাহ তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে সেই সময় বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় দুই দেশের মত বিরোধ দুর করে একে অপরের সম্পর্ক জোরালো করার আলাপ হয়। ঠিক এর একদিন পর রাজ পরিবারের সদস্য সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন দুই দেশের সম্পর্ক এখন খুবই চমৎকার ও আন্তরিক।

এইসব আলাপ আলোচনাকে দুই দেশের সম্পর্ক গভীর করারই আভাস। তবে চিন্তার কথা হলো এত বছর দেশ দুইটি প্রচণ্ড বৈরি থাকার পরও এখন কেন বন্ধুতা গভীর করতে চাইছে। এর কয়েকটি কারণঃ
মধ্যপাচ্য, আফ্রিকা ও ককাসের বহু দেশে তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধি। এবং তুরস্কের সাথে যেখানেই বিরোধে জড়িয়েছে সৌদি কোথাও সফল হতে পারিনি সৌদি আরব। বরং তাদের চোখের সামনে কাতারকে টিকে থাকতে সাহায্য কিভাবে করেছে দেখেছে সৌদি।লিবিয়ায় খলিফা হাফতারকে যুদ্ধ বিরতিতে বাধ্য করেছে এবং আজারবাইজানকে আর্মেনিয়ার সাথে জিততে নিখুঁতভাবে সাহায্য করেছে তুরস্ক। এইসব দেখে সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে তুরস্কের সাথে বৈরতা নয় বন্ধুত্ব বুদ্ধিমানের কাজ তাই সম্পর্ক জোরালো করার উদ্যোগ নিয়েছে। মোটকথা মধ্যপাচ্যে তুরস্ক একটা পাক্কা খেলোয়াড হয়ে উঠেছে তাদের সাথে বৈরতা তৈরী করে পথ চলা কঠিন।

মধ্যপাচ্যে তুরস্কের এখন শক্ত অবস্থান। এবং গ্রীসের সাথে সমুদ্র নিয়ে ঝামেলায় ফ্রান্স শক্তভাবে গ্রীসের পক্ষ নিলেও ইউরোপ তুরস্কের বিরুদ্ধে কোন কঠিন পদক্ষেপ নিতে চিন্তা করছে। আমেরিকায় জো বাইডেনের জয় এই অঞ্চলে রাজনীতি বদলে দিবে। ট্রাম্প শাসন আমলে ইসরায়েল এবং সৌদি আরব এই অঞ্চলে ছিল সর্বসেবা এবং এই দুইদেশ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র আর ট্রাম্প ছিলো ইরানের উপর খুবই কঠোর যা সৌদি আরবের মনোকামনা। জিতেই জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি করার, আর এমন হলে এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বেড়ে যাবে এবং সৌদি প্রভাব পড়বে হুমকির মুখে। জো বাইডেন তুরস্ককে কাছে টানবেন কারণ রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে হলে তুরস্ককে কাছে না টেনে উপায় নেই কারণ তুরস্কের সাথে রাশিয়ার খুবই দহরম-মহরম। এইটাকে ট্রাম্প গুরুত্ব না দিলেও ঝানু রাজনৈতিক বাইডেন এইটাকে গুরুত্ব দিবেন। ট্রাম্পের আমলে বিশ্বে আমেরিকার যেতটুকু প্রভাব কমেছে বাইডেন তা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন কারণ তাই তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো তাই বাইডেন তুরস্ককে দুরে সরিয়ে রাখবেন না। এই কারণে হয়তো সৌদি আরব আগেভাগেই তুরস্কের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে তৎপরতা শুরু করেছে। আর এই দুই মুসলিম দেশের সম্পর্ক উষ্ণ হলে মুসলমানদের রাজনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধিও পাবে।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩২তম পর্ব।

গত বিশে নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি বাদশা সালমান তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন করেন। এই উষ্ণ আলোচনায় দুই দেশের মধ্য বৈরিতা কমিয়ে সম্পর্ক গভীর করার কলাকৌশল নিয়ে আলাপ করেন। ওআইসি সম্মিলনের ফাঁকে মিলিত হন দুইদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরাও, এর কয়েক দিন পর সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান কাতারের উপর অবরোধ তুলে নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই ঘটনায় বিশ্লেষকগণ মনে করছেন সৌদি আরব আমেরিকায় পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকেও পরিবর্তন করবে। তবে এটা সুরাজনীতির সুবাতাস নয় বরং এটা সৌদির নিষ্ঠুর রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার কূটকৌশল । এমনিতে ছায়া যুদ্ধে তুরস্কের সাথে একের পর এক হেরে নাস্তানাবুদ সৌদি আরব তাই সমঝোতা করতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে মুসলিম বিশ্বে এমকি মধ্যপাচ্যেও সৌদি আরবের প্রভাব ব্যাপকভাবে কমেছে। এর শুরু হয়ে ছিল মিশরের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে সেই দেশের সেনাবাহিনীকে নিষ্ঠুর সমর্থন দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা দান করে এক নির্মম স্বৈরশাসককে। এতে সৌদি রাজ পরিবারের কুমতলব ধরা পড়ে এবং সৌদি আরব বিশ্বে হয় ধিকৃত ও ক্ষুণ্ণ হয় সম্মান। এরপরও সৌদি আরব অনেক অনেক ভুলের রাজ্য গঠে তুলে।

কাতারের উপর অবরোধ, ইয়েমেনে যুদ্ধ যেখানে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে,জামাল খাসোগি হত্যা সবই করেছে রাজতন্ত্রী সৌদি স্বৈরাচারী সরকার। একের পর এক অপরিপক্ব কাজ করে চলেছে সৌদি। সিরিয়ায় এখন স্বৈরাচারী আসাদকে টিকিয়ে রাখতে তার পাশে দাড়িয়েছে, লিবিয়ায় চরম যুদ্ধবাজ খলিফা হাফতাফের পরম বন্ধু সৌদি সরকার । সর্বশেষ ফিলিস্তিনের দীর্ঘকালের স্বপ্ন স্বাধীন ফিলিস্তিনকে কবর দিয়ে সৌদি আরবের মদদে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে তিনটি মুসলিম রাষ্ট্র সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এর প্রতিটি কাজের বিপরীতমুখী রয়েছে তুরস্কের সরকার বরঞ্চ সৌদি জোট তুরস্কের কূটনীতি ও সমরনীতির কাছে চরম হুমকির মুখে পড়েছে । তবে সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসে আমেরিকার নির্বাচনে, তাই বাধ্য হয়ে সৌদির নীতিতে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে শুধু রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য।

জো বাইডেন সৌদির নির্বাসিত সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার বদলা নিবেন বলেছেন এবং ইয়েমেনে যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন, এমনকি নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রী সৌদিকে কোন ছাড় দিবেন না তিনি ইরানে পরমাণু চুক্তির ঘোর সমর্থক। তাই সৌদি পিন্সের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে তিনিই তুরস্কের সাথে বিরোধে জড়িয়েছে তাই এখন তাড়াতাড়ি তুরস্ককে ভাগে আনার চেষ্টা। সৌদি বাদশাহ সালমান নিজেই এরদোয়ানকে ফোন করে দুই দেশের মধ্যে সংলাপ করার পথ মুক্ত রাখার উপর জোর দেন। সৌদি আরব ও তুরস্কের মধ্যে এমন বৈরি সম্পর্ক আগে কখনো ছিলো না এর জন্য দায়ী সৌদি যুবরাজ । তিনিই সৌদির পররাষ্ট্র নীতি আমূল পরিবর্তন করেন এবং তুরস্কের মুখামুখি দাঁড়ান। তুরস্ক কাতারে শুধু মানবিক সাহায্যই পাঠায়নি সেখানে স্থাপন করেন সামরিক ঘাটি যার কারণে ছোট দেশ কাতার দখল করতে পারিনি যুবরাজ।সৌদির সাথে বিরোধপূর্ণ কোন দেশেই সুবিধা করতে পারিনি এই রাজতন্ত্রী।

তাই ক্ষুব্ধ হয়ে ডাক দেন তুরস্কের পণ্য বর্জনের যাহ ছেলেমানুষি ছিলো এবং সৌদি জনগণকে তুরস্কের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে ব্যবহার করেন টিভি চ্যানাল উসমানিয় খেলাফতের সমালোচনা করে সৌদি পাঠ্যপুস্তকে এটির দখলদারিত্ব বর্ণনা করা হয়। অথচ উসমানিয়া খেলাফত নিয়ে প্রতিটি মুসলিম গর্ববোধ করেন এবং সৌদিকে পশ্চিমা ভাবধারায় নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে এর মাঝে সৌদিতে শুরু হয় ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩৩তম পর্ব।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের ভিতরেও নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে এমন অবস্থায় রাজতন্ত্রই বিপন্ন হওয়ার ঝুকি রয়েছে। তাই রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে নিজের নীতি নমনীয় করতে হচ্ছে তাই তুরস্কের সাথে সম্পর্ক গঠতে এই তোড়জোড়। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন উচ্চ বিলাসী ও স্বৈরাচার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তুরস্কের বিশ্বাস করা কঠিন তাঁর এই পরিবর্তন কোন আদর্শগত কারণ নয় শুধু মাত্র স্বার্থের কারণে কন্ঠ নিচু করা। এই জন্য তুরস্ক সন্দহ প্রবণ থাকবে এবং ধীরে চলো নীতি গ্রহহণ করবে। তুরস্কের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলেন সৌদি বাদশাহ ফোন দিলেও সম্পর্কের নতুন মাত্রা এখনি যোগ হচ্ছে না আমাদের দেখতে হবে তারা কোথায় যেতে চায় এবং কি করতে চায় তবে আমরা সৌদির সাথে উষ্ণ সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। তুরস্ক বলেন গণতান্ত্রিক সরকার বিপ্লবীদের সমর্থন দেয় আর স্বৈরশাসন সমর্থন দেয় স্বৈরাচারকে। এখন তুরস্কের সাথে সম্পর্ক চাইলে মুসলিম ব্রাদারহুড় সম্পর্কে সৌদি আরবের অবস্থান বদলাতে হবে কারণ সৌদি আরব ব্রাদারহুড়কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে কালো তালিকাভুক্ত করে রেখেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইসলামি দল পশ্চিমা দুনিয়াতেও সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। তাই তুরস্ক ও কাতার মুসলিম ব্রাদারহুড়ের সবচেয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষক। অনেকে মনে করে ব্রাদারহুড় সৌদি রাজতন্ত্র উৎখাতে মদদ দিবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং আরব বসন্তের সময় এমনই কথা ছিল। এরদোয়ান কখনোই ব্রাদারহুড়ের ব্যাপারে এক বিন্দুও ছাড় দিবে না আর জো বাইডেন বিশ্বে গণতন্তকামীদের সমর্থন করলে ব্রাদারহুড়কে বাদ দেওয়াও সম্ভব নয়। পরশ্পর বিপরীত-মেরুতে থাকলেও তুরস্ক চায় সৌদির সাথে উষ্ণ সম্পর্ক রাখতে নাইজার বৈঠকে তুর্কী পররাষ্ট্র মন্ত্রী এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন আর সম্পর্ক ভালো হলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উন্নত হবে। তবে এই দুই দেশের সম্পর্ক উষ্ণতায় বাধার কারণ হতে পারে আরব আমিরাত। একসময় আরব আমিরাত সৌদির সব কথায় সায় দিলেও এখন তার উল্টোও করতে পারে এইটা অনেক বিশ্লেষকের ভয় কারণ শেখ জায়েদ সৌদি যুবরাজের প্রধান পরামর্শ দাতা।

বর্তমানে আমিরাতের পররাষ্ট্র নীতি সৌদির চেয়েও আরো বেশী আগ্রাসী আরো বেশী তুর্কী বিরোধী। আমিরাত কখনো চায় না সৌদি তুর্কী সম্পর্ক উষ্ণ হোক, আমিরাত আবার কাতারেরও ঘোর বিরোধী। আমিরাতের কূটনীতিক ইউছুপ আল ওথাইবা সম্প্রতি ইসরায়েলের সাথে বলেছেন তুরস্ক ও কাতারের সাথে সৌদি জোটের বিবাদ অতি তাড়াতাড়ি মিটবে বলে মনে হয় না। আমিরাত মধ্যপাচ্যে রাজনৈতিক ইসলাম সম্প্রসারণের ঘোর বিরোধী তারা চায় পশ্চিমা ধাচের রাজনীতি দিয়ে মধ্যপাচ্যে প্রভাব বিস্তার করার জন্য। তাই সৌদির সাথে সম্পর্ক উষ্ণে সবচেয়ে বড় বাধা সৌদি যুবরাজের এই উপদেষ্টা তারপরও সম্পর্ক সৌদি জোরদার করলে আমিরাত মেনে নিতে পারে বলে অনেকে মনে করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করে মধ্যপাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরাতে হলে জো বাইডেনকে অবশ্যই আমিরাতের ব্যাপারেও কঠোর হতে হবে। পর্দার আড়ালে যতই বাধার স্তর থাকুক সম্পর্ক উষ্ণ হতেই পারে তবে এরদোয়ান নিজ দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে কিংবা আঞ্চলিক প্রভাব বাদ দিয়ে কখনোই সম্পর্ক গঠতে যাবেন না। অক্সফোর্ডের একজন গবেষক মনে করেন এরদোয়ান সম্পর্ক উষ্ণ করতেই চাইবেন কারণ আরব বসন্তের আগে দুই দেশের ছিল দহরম মহরম আর এরদোয়ান হলো একজন বাস্তববাদী নেতার সেরা উদাহরণ ।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩৪তম পর্ব।

সৌদি জোট ছোট্ট দেশ কাতারকে অবরোধ দিয়ে ভেবে ছিল কাতারের খেলা শেষ অবরোধ দেওয়ার সময় ভুলে যায় কাতারে রয়েছে মার্কিনী সেনা ঘাটি। কাতার সব উপেক্ষা করে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে আগের চেয়ে আরো কোমর শক্ত করে তাই এখন সৌদি জোট বুঝেছে কাতারের এরচেয়ে বেশী কিছু করা সম্ভব নয়। তাই এখন সৌদি জোটকে নিজের হাত কামড়ানো ছাড়া কিছুই করার নাই শুধু তারা নয় খোদ ট্রাম্পই আগে সৌদি জোটকে প্ররোচনা দিয়ে এখন তিনিও হাত কামড়াচ্ছেন। কয়েক দিন আগে ইউএস কাতার ডায়লগে মার্কিনী পররাষ্ট্র মন্ত্রী পম্পেই একটি জমকালো বিবৃতি পাঠ করেন আর এতে বলেন আঞ্চলিক বিরোধ মিটমাট করার ক্ষেত্রে কাতারের ভূমিকা চমৎকার এবং সব দেশের মধ্য সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে পম্পের এই আহ্বান একেবারে ফেলে দেওয়ার মত নয় আগেও একবার সৌদি সফর কালে একই আহ্বান জানিয়ে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মূলত ওই সফরের উদ্দেশ ছিলো উপসাগরীয় দেশগুলির বিরোধ মীমাংসা করা।

মার্কিন আরেক কূটনীতিক সফরে নিশ্চিত করে বলেন যে কুয়েতের উদ্যোগে যে আলোচনা চলছে তাতে সামনে একটা ভালো ফল আসতে পারে কেননা সবাই এখন নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে তবে অদ্যাবধি কোনো ভালো ফল আসেনি, যদিও যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে এই বিরোধ অল্প দিনের রেষারেষি ফল নয় অনেক দীর্ঘ দিনের রেষারেষির ফলে আসে ২০১৭ সালে মে মাস। সৌদি আরব জোট করে কাতারের উপর অবরোধ চাপিয়ে দেয়, আকাশ, জল ও স্থল সব পথ বন্ধ করে দেয় কাতারের। অবরোধ আরপের আগে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহারাইন ও মিশর তেরটি শর্ত মানার অনুরোধ করে তেল সমৃদ্ধ কাতারকে। কাতার তাদের অন্যায় আবদার না মেনে খুব সতর্কভাবে আরো নতুন বন্ধু বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এতে কাতারের প্রতিদ্বন্দ্বীও বসে থাকেনি সৌদি জোটের এক সময়ের শত্রু ইরাক,ইসরায়েল ও তুরস্কের সাথে সম্পর্কের হাত বাড়ায় এতে উপসাগরে সমস্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে বহুমুখী এবং মধ্যপাচ্যের সংকট হয়েছে গভীরতম।

উপসাগরীয় এই সংকটে সম্প্রতি সম্পাদিত আবরার চুক্তি স্বাক্ষরে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে আরব আমিরাত ও বাহারাইনের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক সম্প্রসারিত হয়েছে। এই চুক্তি যদি যথাযথ সফল হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র দুইটা সফলতা দেখাবে একদিকে ইরান বিরোধী জোট সম্প্রসারিত এবং অন্যদিকে পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপক সফলতা। মার্কিনী পররাষ্ট্র মন্ত্রী পম্পেও মনে করেন কাতার এবং তার বিরোধীদের মধ্য চূক্তি হলে উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি নেমে আসবে। তিনি হয়তো জানেন না এই অঞ্চলে সমস্যা, সংকট ও রাজনীতি অন্য অনেক কিছুর গভীরে গ্রথিত। প্রথমে আমেরিকা এই অঞ্চলের সমস্যাকে এত গুরুত্বের সাথে নেয়নি এবং মিটমাট করারও দরকার মনে করেনি। আমেরিকা এই আচরণ এই নয় যে তারা মধ্যপাচ্য হতে দুরে সরে যাচ্ছে বরং অন্য বিষয়ের প্রতি তাদের অগ্রাধিকার ফুটে উঠে তবে সমাধান রয়ে গিয়েছে অধরা। মধ্যপাচ্য বিবাদমান সব দেশেরই আমেরিকা প্রধান মিত্র কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কেন এই বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে আমেরিকা সাহায্য করছে না।

কিন্তু মজার বিষয় হলো কাতারে সৌদি জোটের অবরোধের সাথে সাথে দ্রুত সময় এগিয়ে আসে তুরস্ক ও ইরান। সহযোগিতার অংশ হিসাবে এই দুই দেশ কাতারের জন্য খুলে দেয় আকাশ পথ, নৌপথ ও স্থলপথ এবং তুরস্ক পাঠায় সেনাদল। এই পর্যায় ইরান কাতারের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে সমঝোতা করে জ্বালানির এবং খুব দক্ষতার সাথে গ্যাস ও তেল ক্ষেত্র নিয়ে দুই দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে কাতারের মনে একটা ভয় সবসময় কাজ করে তা হলো ইরানের সাথে বেশী মাখামাখি পছন্দ করবে না দুনিয়ার মোড়ল আমেরিকা ।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩৫তম পর্ব।

মধ্যপাচ্যে সবচেয়ে বড় আমেরিকার সেনাঘাটি রয়েছে কাতারেই তাই আমেরিকাকে একটুতো তোয়াজ করে চলতেই হবে। এদিকে তুরস্ক এই কাতারের সাথে সম্পর্ক গভীরতম হতে গভীরতম করেছে। ২০১৭ সালে অবরোধ দেওয়ার পর জুন মাসে ইরানের মত তুরস্কও জাহাজ ভর্তি করে খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠায়। এর জবাবে কৃতজ্ঞ কাতার তাদের দেশে তুর্কী সেনাঘাটি সম্প্রসারণে অনুমতি দেয়। তাই তুরস্ক ও কাতার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বেড়েই চলেছে। এইভাবেই একটু একটু করে হয়ে যায় একে অপরের বহৎ বিনিয়োগকারী। সম্প্রতি কাতার তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পনর বিলিয়ন ডলার মজুত করেছে। করোনা মহামারীতে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে যাতে তুরস্কের কোন রকম বেগ পেতে না হয়। এর বিপরীতে ক্রমশ ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহারাইন ও মিশর। আর এই ঘনিষ্ঠতার মূলে রয়েছে তাদের ইরান ভীতি। আব্রাহাম চুক্তির মধ্যে দিয়ে মধ্যপাচ্যের ধনী ও শক্তিধর দেশের কয়েকটা ইচ্ছা পূরণ হলো তা হলো প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা বৃদ্ধির জন্য সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ইসরায়েলের সাথে কাজ করা।

ইসরায়েলের সাথে আরব আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটা কারণ হলো সামরিক চুক্তি করা। আর ইসরায়েল এই সময় চায় তার পর্যটন খাতে ও হাইটেক সেক্টরে আমিরাতের বিনিয়োগ । ভূ- রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে দেখলে আব্রাহাম চুক্তি যেমন ইরানের বিরুদ্ধে তেমনি তুরস্কের বিরুদ্ধেও। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের আগুয়ান নীতি সিরিয়া ও লিবিয়া থিয়েটারগুলির এক প্রধান খেলোয়াড। তারা এখন ক্ষমতার চালাকের আসনে বসার জন্য এক দিকে ইরান ও আরেক দিকে সৌদি ও আমিরাতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় লিপ্ত। আর কাতারতো তুরস্ক ছাড়া কিছুই বুঝে না। এইসবে মধ্যপাচ্যে ফাওয়ার হাউজ নামে পরিচিত দেশগুলোর একটা মাথা ব্যাথার বড় একটা কারণ। কাতার এবং তুরস্ক নিজের মধ্য অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা চুক্তি করেই ক্ষান্ত হয়নি দুই দেশের পররাষ্ট্র নীতিও নতুন করে সাজিয়েছে এই অঞ্চলে যেত গণআন্দোলন হবে তাতে সমর্থন দিবে। এর সোজা অর্থ মুসলিম ব্রাদারহুড়কে সাহায্য করা, যার নাম শুনলে মধ্যপাচ্যের রাজা বাদশাহরা স্বপ্নেও কেঁপে উঠেন কারণ এইদলটির বিজয় মানে রাজতন্ত্রের মৃত্যু হওয়া

এই একটা ইস্যুতে বিভক্ত মুসলিম দেশগুলো। আফ্রিকার লিবিয়া হতে ইয়েমেন পর্যন্ত দুইভাগে বিভক্ত। দুইভাগ কোনো না কোনোভাবে অন্যকে মদদ দিয়ে চলেছে এর উদাহরণ হলো লিবিয়া । সেখানে জাতীয় সংঘের স্বীকৃতি পাওয়া সরকারকে সমর্থন করছে তুরস্ক আর হাফতাফের মত জঙ্গী নেতাকে মদদ দিতে মরিয়া চেষ্টা করছে আরব আমিরাত। সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট বশীর ছিলো তুরস্ক ও কাতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ২০১৪ সালে তাকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। আর সেনাবাহিনীর পিছনে দ্রুত টাকার বাণ্ডিল নিয়ে এগিয়ে আসে সৌদি আর আরব আমিরাত এতে সুদানে আমিরাত ও সৌদি বিরোধী সমস্ত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সোমালীয়াতে একই কাজ করতেছে এরা সবাই, সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক ও কাতার আর বিরোধীদের মদদ দিচ্ছে সৌদি জোট। ইয়েমেনে সৌদির কারণে যুদ্ধ এবং দুর্ভিক্ষ চলছে এইভাবে গত কয়েক বছর ধরে চলছে মধ্যপাচ্যের রাজনীতি। একে অপরে বিরুদ্ধে লড়াই করছে রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে বাহিরের দেশ দুনিয়ার মোড়ল আমেরিকা সমাধান করতে পারলেও করছে না এবং বিপরীত মুখী মদদ দেয় আর এইসব মুসলিম দেশ তা লুফে নেয়। আমেরিকা এখনো সমাধানের দিকে নজর দিচ্ছে না এবং আদৌ দেয় কিনা বলা যায় না।
(চলবে)।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩০১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/১২/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Splendid writing..
  • বেশ ভালো লেগেছে।
  • nice post
 
Quantcast