www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রানিং লেট

মামার বাড়ি বেড়িয়ে দিল্লী থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে ফিরছিল সোহিনী । রাজধানী আজ তিন ঘণ্টা দেরীতে রান করছে । সোহিনীর সামনের বার্থে বছর ত্রিশের এক যুবক । খাবার খেয়ে ম্যাগাজিনের পাতায় চোখ রেখে কতক্ষণ আর সময় কাটানো যায় ? সামনের যুবকের সাথে চোখাচোখি হতেই সে বলল - " আমি প্রিয়াংশু লাহিড়ী ।" দিল্লীতে অফিসের কাজে এসেছিলাম । আপনি ?"
- " আমি সোহিনী, সোহিনী মজুমদার । মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছিলাম ।"
- " কোলকাতায় কোথায় থাকেন ?"
- " কসবা ইষ্ট কোলকাতা টাউনশিপ ।"
আর কথা বাড়াতে ইচ্ছা হল না সোহিনীর । এগারোটা বেজে গেছে । পর্দাটা টেনে শুয়ে পড়ল । প্রথম দিকে ঘুম আসছিল না তার । শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে । ঘুম ভাঙ্গতেই হাত ঘড়িটার দিকে চোখ পড়ল । ছ'টা দশ । উঠে বসে পর্দা সরাতেই দেখল সামনের টেবিলে চায়ের সরঞ্জাম রেডি । প্রিয়াংশু ফ্রেস হয়ে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিচ্ছে ।
- " গুড মর্নিং ম্যাডাম । "
- " গুড মর্নিং । "
- " ট্রেন প্রায় দশ ঘণ্টা লেট রান করছে । বেলা বারোটার আগে এলাহাবাদ পৌঁছাবে না ।"
প্রিয়াংশুর কথা শুনে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল সোহিনী । কখন যে সে কোলকাতায় পৌঁছাবে কে জানে ? বাড়ির সবাই যে চিন্তায় থাকবে সেটা সে বেশ বুঝতে পারছে । খবর দেবারও উপায় নেই । মোবাইলটাও সে ফেলে এসেছে মামার বাড়িতে । বিরক্তির সাথে নিজের অজান্তেই মুখ থেকে কথাগুলো বেরিয়ে এল - " কি ঝামেলায় পড়লাম । মোবাইলটাও দিল্লীতে ভুল করে ফেলে রেখে চলে এসেছি । "
সোহিনীর কথা কানে আসতেই প্রিয়াংশু বলল -
- " দরকার হলে আমার মোবাইলটা ব্যাবহার করতে পারেন । "
- " থ্যাংক ইউ "।
ট্রেন সন্ধ্যাবেলায় ধানবাদ পৌঁছালো । দশটার আগে কোলকাতায় কিছতেই পৌঁছাতে পারবে না । রানিং লেট আরও বাড়লে আরও রাত হবে । টয়লেট থেকে একটু ফ্রেস হয়ে এল সোহিনী ।
- " ষ্টেশনে কি কেউ আপনাকে রিসিভ করতে আসবে ?"
- " হ্যাঁ, ভাই আসবে । "
প্রিয়াংশু নিজের মোবাইল নাম্বারটা ম্যাগাজিনের পাতায় লিখে দিয়ে সোহিনীকে বলল - " বাড়ি পৌঁছে কিন্তু একটা ফোন করবেন ।"
প্রিয়াংশুর অনুরোধে দ্বিধা স্বত্বেও বাড়ির ল্যান্ড-ফোন নাম্বারটা প্রিয়াংশুকে দিল সোহিনী । প্রিয়াংশু তার মোবাইলে নোট করে নিল ।
রাত এগারোটায় রাজধানী এক্সপ্রেস কোলকাতায় পৌঁছাল । নির্দিষ্ট কোচের সামনে ভাই সোহমকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সোহিনী । প্রিয়াংশুকে বিদায় জানিয়ে সোহিনী ভাইয়ের সাথে ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে এসে ট্যাক্সিতে চেপে বসল । ট্যাক্সি বেশ কিছুটা যাবার পর তার মনে পড়ল প্রিয়াংশু তার মোবাইল নাম্বারটা যে ম্যাগাজিনের উপর লিখে দিয়েছিল সেটা সে ট্রেনেই ফেলে এসেছে । তার বুকের ভিতরটা কেমন যেন চিনচিন করে উঠল ।

দু'দিন কেটে গেল । বাড়ির ল্যান্ড-ফোন বেজে উঠলেই কান খাড়া করে থাকে সোহিনী । মনের কথা সে কাউকে বলতে পারছে না । সে ভাবতে থাকে সে না হয় ভুল করে ম্যাগাজিনটা না আনার জন্য ফোন করতে পারছে না, কিন্তু প্রিয়াংশু তো ল্যান্ডফোনে একটা ফোন করতে পারতো ? পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই পাশের ঘরে মায়ের গলা শুনতে পেল সোহিনী । ল্যান্ডফোনে মা বলছে - " হ্যাঁ, এটা সোহিনীদের বাড়ি । আপনি কে বলছেন ? কি বললেন ? প্রিয়াংশু ?"
মায়ের কথাগুলো শুনতে পেয়ে সোহিনী তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে ছোঁ মেরে মায়ের হাত থেকে রিসিভারটা কেঁড়ে নিল । একটা লজ্জা মাখানো হাসি ছড়িয়ে পড়ল তার সারা মুখে । ফোনের অপর প্রান্তে থাকা প্রিয়াংশুর পক্ষে সেটা নিশ্চয়ই আঁচ করতে অসুবিধা হবার কথা নয় ।।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৮৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ওহ । চরম কাহিনী ।
  • subhendu das ২২/০৯/২০১৩
    din din lekhar haat shanitotoro hochhe.....carry it on....
  • Înšigniã Āvî ২২/০৯/২০১৩
    খুব ফ্রেশ খুব টাটকা এক গল্প পড়লাম,
    খুব ভাল লাগলো ।
    • জয়শ্রী রায় ২২/০৯/২০১৩
      আমার গল্প ধারাবাহিক ভাবে ভালো লাগছে জেনে আমি খুব আনন্দিত এবং উৎসাহিতও । আপনাকে কিভাবে যে ধন্যবাদ জানাবো ভেবে পাচ্ছি না । ভালো থাকবেন ।
  • সহিদুল হক ২২/০৯/২০১৩
    এ ভাবেও কেউ কেউ প্রেমে পড়ে বৈকি।ভালই লাগলো গল্পটা।
    • জয়শ্রী রায় ২২/০৯/২০১৩
      নিশ্চয়ই । ট্রেনের রানিং লেটও কখনও কখনও প্রেম তৈরি করে দিতে পারে । ভালো লাগার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ।
  • দেবদাস মৈত্র ২২/০৯/২০১৩
    ট্রেন দেরিতে রান করছে আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লেখিকা এক সুন্দর ছোট্ট রোমান্টিক জায়গা তৈরি করেছেন । বেশ ভাল । ছোট গল্পের আসরে এই গল্প খুবই মানানসই । ছোট গল্পের ছোট ক্লাইম্যাক্সও আকর্ষণীয় ।
  • Shubhajit majumdar ২২/০৯/২০১৩
    O ki darun laglo tomar lakhata amar monta vora galo my sweet @jaya
  • shubhajit majumdar ২২/০৯/২০১৩
    O monta vora galo darun likha6o sweet @jaya
 
Quantcast