www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

লেখক ও পাঠক

বহু লেখকেরই মনে অভিমান জমে মাঝে মাঝে। তার এতো পাঠক সারাদিন তার লেখায় ভিড় করে থাকে, লাইক, কমেন্টে সমৃদ্ধ করে, কিন্তু অর্থ ব্যয় করে বইটি কেনে না। অভিমান হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার চেনা এক লেখক বন্ধু আছেন, তার লেখা পড়লে মনে হয় হারিয়ে যাই। লেখা পড়ে, আমায় কোনো সমুদ্রের ঢেউ এর দোলায় ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়, আটকাতে ইচ্ছেও করে না। তার লেখা বই হাতে গোনা মানুষে কিনেছে। অভিমান হবে না বলুন?
আমি লিখি সখে, আমি আজও শিখি, প্রতিনিয়ত। কতো প্রকার শব্দের ভাঙ্গন আছে! তার কত প্রকার ব্যবহার আছে, পড়তে পড়তে আরো শিখে চলেছি। এতো ভালো ভালো লেখা এনারা লিখেছেন, আমার মনে হয় আমার মনের সব রকম ভাবনা, চিন্তা, কল্পনা সব এনারাই লিখে ফেলেছেন আর এনাদের লেখায় নিজের গল্প পড়ি। আমি আর কি লিখবো, তাও লিখি, ভালোলাগে লিখতে। আমি লিখি নিজের জন্য, সারাদিন অনেকটা খেয়ে ফেললে পেট আঁইঢাঁই করে, বমি হলে একটু হালকা হই আর কি! তাই আমার লেখায় কমেন্ট বা লাইক এনাদের থেকে আরো কম, এনাদের কুড়ি জন পাঠক হলে আমার দুজন। আমার এই ভালো, দুজনের তো ভালো লাগে! আমার একটুও খারাপ লাগে না কেউ না পড়লে, সত্যি। আমি জানি মানুষের সময় কত কম। সবাই ছুটছে একটু টাকা আয়ের জন্য, পেটের দায়। আমি মিশি নিম্নমধ্যবিত্য মানুষগুলোর সাথে, যারা সকাল হলেই বাজার করে কোনো মতে মুখে কিছু গুঁযে ছোটে নাহলে ট্রেনে বা বাসে, একটু লেট মানেই বসের অপমান সহ্য করে সারাদিন অসহ্য খাটুনি। বিকালে ছুটি নয়, ছুটি বেশ রাত করেই হয়। রাতে ফেরতা পথে বাসে বা ট্রেনে ঘাড় বেঁকিয়ে ঘুম এসে যায় চোখে। নিজেকে টানটে টানটে বাড়ি এসে দেখে ছেলে পড়াশুনা ছেড়ে বাংলা সিরিয়ালে মন মজিয়েছে। রাতে ঘুমাবার আগে বউ কে একটু সোহাগ করে যে একটু কাছে টেনে নেবে তারও উত্তেজনা হারিয়ে ফেলে। এতো কাজের ফাঁকে একটু ফেসবুক খুলে প্রিয় বন্ধু বা বান্ধবির হাত পা ব্যাকানো বা সারা গায় ট্যাটু আঁকা ছবিতে একটু লাইক মারবে নাকি সে গল্প কবিতা পড়তে বসবে। তার মাথা ধরে যাবে আরো বরং। এতখানি লেখা পড়ে তার কি দুটো টাকা আয় বাড়বে, এক পাতার লেখা তাও পড়ে ফেলা যায় মাথায় চাপ বাড়িয়ে। আর কবিতা তার মাথায় ঢুকবে! মনে হয়? আমার তো সেই পুরানো কবিতার লাইনটা মনে পড়ে যায়,
--- " ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পুর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি"।

আরেকদিকে, উচ্চবিত্ত মানুষ (পুরুষ বা নারী), ব্যবসায়ী, ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে বহুদিন। খিদে বেশি,তাই তাগিদও বেশি, কবিতা কি আরেকটা অর্ডার এনে দেবে! না। কবিতা বলতে বোঝেন সুন্দরি সেক্রেটারিটি কে। আর গল্প, শুধুই মুল্যবান সময় নষ্ট। পদ্য আর গদ্য থেকে প আর দ উভয়তেই এ-কার বসিয়ে চলে যান। লেখা গুলো পড়ে থাকে শুধু কিছু পড়ুয়াপ্রেমি মানুষের কাছে। হাতে গোনা যায় তাদের।
৩১ডিসেম্বর, নিম্নবিত্তরা বাড়িতে খাসির মাংশ আর উচ্চবিত্তরা ক্লাব, পার্টি, ডিস্কো, কেউ নিজের বৌ-বাচ্ছা নিয়ে চিড়িঁয়াখানা কেউবা বছরের শেষরাতে উষ্নতা খোঁজে। এখানে কবিতা, গল্প, সাহিত্যের খোঁজ হারিয়ে যায়।
কিন্তু লিখতে ভালোবাসি যে! কি করি।পেশা নয় নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এভাবেই বছর শেষ থেকে নতুন বছর শুরু করতে চাই। সবাই ভালো থেকো বন্ধুরা, নতুন বছর আরো ছন্দময় হোক আশা করি।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৯২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast