www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রমজান ও এ সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

রমজান মাস এসে গেল। অনেক বরকতময় এবং ফজিলতপূর্ণ এই রমজান মাস। মহান রাব্বুল আলামিন মানুষের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য এই রমজান মাস দয়া করে দান করেছেন। আল্লাহতাআলা ভাল করেই জানেন মানুষের Tendency (অভ্যাস বা ক্রিয়া) গুলোকে। মানুষ সহজে তার ক্রিয়াগুলোকে কিংবা অভ্যাসগুলোকে Modify (পরিবর্তন) করতে পারেনা। আসলে এটা তার দোষ নয়, জিতেন্দ্রিয় সমস্যা। আবার শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ তার মনুষ্যত্বকে বলিদান করে। এটা এক অর্থে শয়তানের সাফল্য। মানুষ এমন এক প্রকার প্রাণী খারাপ অভ্যাসগুলোকে সে ভালর পাল্লায় অনেক সময় বিচার করতে চায়। যখনি এ প্রকার চিন্তা ধারাগুলো তার ভিতরে Grow (জন্ম) লাভ করে, তখনি সে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন এবং মানুষ হত্যার মতো জঘন্যতম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আরেকটি ব্যাপার হলো মানুষ পরিচিতি পাওয়ার জন্য খারাপ প্রক্রিয়াগুলোর দিকেই বেশি মনোনিবেশ করে। কিন্তু সে একবারও ভেবে দেখেনা যদি এই সমস্ত খারাপ প্রক্রিয়ার দিকে না যেয়ে যদি ভালর মধ্যেই বেশি মনোনিবেশ করতো তাহলে সুনাম নামের একটি আকর্ষণীয় শব্দ তার জীবন-দর্শনে লিপিবদ্ধ হতো। তার পরিচতিরি মাত্রা দ্বিগুন বেড়ে যেতো। যেমন ধরা যাক- আমি সিগারেট খাই, এটা পুরুষ্যত্ব। সমাজে দশজন সিগারেট খায়, আমিও খাই। দশজন মদ খায়, আমিও খাই। দশজন গাঁজা খায়, আমিও খাই। দশজন সন্ত্রাসী করে, আমিও করি। দশজন আরেকজনের ভূমি দখল করে, আমিও করি (এই বিষয়ে একটি হাদিস । হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা.) বর্নিত- তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কারও জমি জবরদস্তি কেড়ে নেবে কিয়ামতের দিন সপ্তস্তর জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। বোখারী-২২৭৫) দশজন হারাম উপার্জন করে, আমিও করি। দশজন সুদ খায়, আমিও খাই। কিন্তু যদি আমরা এটা ভাবি- আমরা মুসলিম, আমরা হযরত মুহাম্মদ (স.) এর উম্মত। তিনি কথনও সিগারেট খাননি। মদ খাননি। কোন সন্ত্রাসী বা লুটপাট করেননি। কারো ভূমি দখল করেননি। হারাম উপার্জন করেননি। এখন কথা হচ্ছে তিনিকি নাম কামাননি।
তিনি-তো হয়েছেন আল-আমিন। তিনি হয়েছেন চরিত্রবান। তার এই সমস্ত গুনাবলির জন্য সকলে তাকে Respect (সম্মান) করে। তাহলে, যারা নাম কামানোর জন্য ঐ সমস্ত খারাপ প্রক্রিয়ার দিকে ছুটছে তাদের বলবো, রাসূল (সা.) যে ভাল দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সে মতে আমরা জীবনটাকে গড়ি। তাহলেই আমরা ইহকাল ও পরকাল এ দুটোই পাবো।

এখন আশা যাক রমজানের উদ্দেশ্য :

কেন এই রমজান?

আমাদের কলুষিত আত্মাকে ও দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গকে পবিত্র করার জন্য এবং ৩০ (ত্রিশ) দিনের যে সিলেবাস দেয়া হয় সেই মোতাবেক কার্য করে বাকী ১১ (এগার) মাস তা বাস্তবায়ন করার জন্যই এই রমজান। শুধুমাত্র ১ (এক) মাস সব কিছু থেকে বিরত থাকবো পরবর্তীতে আবার আগের অভ্যাসে ফিরে যাবো এর জন্য রমজান দেয়া হয়নি। রাসূল (সা.) বলেছেন, (রোজা রেখেও) কেউ যদি মিথ্যা কথা বলা ও তদনুরূপ কাজ পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু পানাহার ত্যাগ করায় (অর্থ্যাৎ উপবাসী ও পিপাসা থাকার) আল্লাহর কো্ন প্রয়োজন নেই (বোখারী-১৭৬৯)। এখন আমাদের দেশে Tendency (প্রবণতা বা ঝোঁক) হয়ে গেছে রমজানের ৩০ (ত্রিশ) দিন পাকা মুসল্লি হবো, আর বাকী ১১ (এগার) মাস শয়তানের গোলামি করবো। এটা কিন্তু রমজানের উদ্দেশ্য নয়। রমজান মানুষের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া। শুধুমাত্র পহেলা বৈশাখের মত এক দিন পান্তা ভাত ইলিশ খাবো, আর বাকী সময় যা ইচ্ছা তা করবো তা কিন্তু নয়। রমজান একমাত্র সময় যার মধ্যে দিয়ে মানুষ তার সমস্ত অপকর্ম ছেড়ে দিতে পারে, যদি সে চেষ্টা করে। তাই রমজানকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী এর যথার্থ জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

রমজানে যা যা আপনি ত্যাগ করতে পারবেন :

যারা ধুমপায়ী, তারা খুব সহজেই ধুমপান এই রমজানে ছেড়ে দিতে পারবে। শুধুমাত্র আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবেসে। মনে মনে আমাদের এটাই ভাবা উচিৎ, একটা সিগারেট আমাকে জীবনে কি দিল! কিন্তু আল্লাহ আমাদের রমজান দিয়েছেন, রাসূল (সা.) তার আদর্শ আমাদের দিয়েছেন। মনে-প্রাণে যদি এটা আমি বিশ্বাস করি তাহলে সিগারেট ছেড়ে দেয়া কোন ব্যাপার না । মদ ও অন্যান্য মাদকদ্রব্যও ঠিক একইভাবে আপনি ত্যাগ করতে পারবেন, শুধুমাত্র আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালবেসে। এখানে একটি হাদিস উল্লেখযোগ্য-
হাদিসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এর সামনে মে’রাজের রাতে ইলিয়া নামক স্থানে দুটি পিয়ালা আনা হল। একটি শরাবের অপরটি দুধের। তিনি দুটির দিকেই দৃষ্টিপাত করে শেষে দুধেরটি নিয়ে নিলেন। তখন জিবরাঈল (আ.) বললেন, সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি আপনাকে স্বাভাবিক বস্তুর দিকে চালিত করেছেন। যদি আপনি শরাবের পিয়ালা নিতেন, তবে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত (বোখারী-৫১৭০)। এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় আমাদেরকে সব সময় স্বাভাবিক বস্তুর দিকে দৃষ্টিপাত করতে বলা হয়েছে। যেটা আমাদের জন্য মঙ্গলদায়ক।
আপনি মুখকে বলুন- তুমি কার সৃষ্টি, সে কিন্তু জবাব দিবে আল্লাহর। সেটা আপনি আমি কিন্তু শুনতে পাবোনা। তেমনিভাবে জিব, কান, চোখ, হাত, পাঁ, গোপন অঙ্গ সবগুলোকে যদি প্রশ্ন করেন একই উত্তর পাবেন। তাকে আপনি খারাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করছেন কিন্তু অবশেষে সে আল্লাহর পক্ষেই কথা বলবে। কেননা সেটি আল্লাহর সৃষ্টি। ধরুন আপনার একজন কৃতদাস আছে। যখন অন্য কেউ আপনার সম্পর্কে কোন খারাপ কথা বলে তখন কিন্তু সে কৃতদাস আপনাকে সব বলে দিবে। ঠিক তেমনি হলো আমাদের শরীরের অঙ্গগুলো। এগুলো আল্লাহর দাস। মানুষ অপকর্ম করলে তাকে ব্যবহার করলে সে আল্লাহর কাছে অপকর্ম সম্পর্কে সাক্ষী দিবে। তাতে রেজাল্ট- প্লাস-মাইনাস জিরোই হবে। এখন যদি রমজানে তাদের হেফাজত করে ভাল কর্মের দিকে আকর্ষণ করেন, তাহলে তাকে সেই কর্মের দিকে আকর্ষণ করবে। মুখকে যদি বলা যায় গীবত করবে না, হাতকে যদি বলা হয় কোন খারাপ কাজ করবে না, চোখকে যদি বলা হয় কোন খারাপ নজর দিবেনা, গোপনাঙ্গকে যদি বলা হয় কোন অসামাজিক কার্যকলাপে যাবেনা, অন্তরকে যদি বলা হয় তুমি শয়তানের প্র্ররোচনা হতে মুক্ত থাকো। সদা ভাল কাজ করো। কারও কোন ক্ষতি করোনা। কারণ আমার রাসূল (সা.) কারও কোন ক্ষতি করেননি। রমজানের একমাস এই Tendency বা ঝোঁক যদি মনে প্রাণে বিশ্বাস করা যায় তাহলে বাকী এগার মাস, তার পরে মৃত্যুর আগে সকল মাস, বছর, ঠিক সুন্দরভাবে রাসূল (সা.) এর আদর্শেই উজ্জ্বল হবে ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা সকলকে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার ও জীবন গড়ার তৌফিক দান করুক। আমিন।

মো: হাবিবুর রহমান (বাবলু)
বি.এ (অনার্স), এম.এ (ইসলামিক স্টাডিজ)
লেখক ও কবি
[email protected]
মোবাইল: ০১৬৭০১২১৯০৯
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১২৬৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৬/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast