ট্রেন ভ্রমনের তিক্ত অভিজ্ঞতা
২৬ অক্টোবর, ২০১১ রাজশাহী টু ঢাকা। টিকেট পাওয়া গেল না। আমরা ৬ বন্ধু, ৫ জন একসাথে পড়তাম আর একজন আমাদের চেয়ে ১ বছরের সিনিয়র। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স সম্মান ভর্তি পরীক্ষা ২০১১-১২ দেওয়ার জন্য আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম। আগেই বলে রাখি আমরা যাওয়ার সময় আলাদা আলাদা ভাবে গিয়েছিলাম কিন্তু আসার সময় সবাই একসাথে ট্রেনে আসব বলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবাই একত্রিত হলাম। আর একটা কথা আপনাদের বলে রাখি, আমার আপন চাটাতো বোন ও ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সেখানে আমার চাচার সাথে গিয়েছিল। তারা তাদের এক নিকটাত্মীয় এর হলে উঠেছিল। সে রাজশাহী মেডিকেলে পড়ত। তা পরীক্ষা দেওয়ার পরপরই চাচা আমার নিকট মোবাইল করল, চাচার সাথে যোগাযোগ করে কাজলা গেটে একত্রিত হয়। আমার ৪ জন বন্ধু আগে থেকেই রাজশাহী ট্রেন স্টেশনে হাজির হয়েছিল। সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হলো আমরা কেউই ১ জনের সাথে যোগাযোগ করতে পারতেছিলাম না কারণ তার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিলনা। পরে যখন একত্রিত হলাম তখন জানতে পারলাম তার মোবাইলে চার্জ ছিলনা তাই সুইচ অফ ছিল।
তো ট্রেনের টিকেট কেউ পেলাম না।
চাচা আর চাচাতো বোন, তারা এর আগে কখনো ট্রেন ভ্রমন করে নি। সেজন্য তারা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিল ট্রেন ভ্রমন করার জন্য। আমার চাচার একটা পায়ের সমস্যা ছিল তাই আমরা তাকে ট্রেনে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। আর বিশেষ করে ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা ছেলে মানুষ যে কোন সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবো কিন্তু মেয়ে মানুষ তো আর সেটা পারবে না। আপনাদের আগাম জানাই রাখি যে এর পূর্বে আমি একবার ট্রেন ভ্রমণ করেছিলাম। তাতেও মোটামুটি হেনস্থা হয়েছিলাম। তিন জন যাব বলে অগ্রিম টিকেট কাটলাম। ঢাকা টু রাজশাহী । যাওয়ার আগের দিন শুনলাম একজন যাবে না। তারপর আর একজনের বাড়িও অনেক দুর সে ৬ টার ভিতর পৌছাতে পারবে কিনা তার ও নিশ্চয়তা নেই। তো আমি যথাসময়ে স্টেশনে উপস্থিত হলাম। এর আগে আমি একটা টিকেট রাজশাহীর এক অপরিচিত ভাইয়ের কাছে যথামূল্যে বিক্রি করে দিলাম। ৫টা বেজে ৪৫ মিনিট আমার এক বন্ধু নাম তার সাঈদ, গ্রামের বাড়ি-শরীয়তপুর। তার ও কোনো খোজ নেই। ৫ মিনিট পরে সে আমার কাছে মোবাইলে বলল, দোস্ত তুমি কই। আমি বললাম তুমি কই, ট্রেন ছাড়ার আর ১০ মিনিট বাকি। সে বলল আমি স্টেশনে ভিতরে আসছি। একটু সস্তি পেলাম, ৫ মিনিট বাকি ট্রেন ছাড়ার। আমি নির্দিষ্ট আসন দেখে বসে গেলাম। পরে আবার মোবাইল বেজে উঠল, ওপর পার্শ্ব থেকে তাড়াতাড়ি প্রবেশ গেটে আসো আমার ঢুকতে দিচ্ছে না। আমি তড়িঘড়ি করে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকেট সাথে নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। প্রবেশ গেটে গেলাম গেট রক্ষি বলল টিকেট কই আমি বললাম, অ্যাঙ্কেল আছে, দেখাচ্ছি। তো টিকেট তো ট্রেনে আমি গেট রক্ষিকে বললাম আ্যাঙ্কেল আর ১ মিনিট বাকি ট্রেন ছাড়তে আপনি আমাদের ছেড়ে দিন, কারণ আজ বিকাল চারটায় আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে (খ.খ.ই) ভর্তি পরীক্ষা। তার দয়া হল ছেড়ে দিল। তারপূর্বে বলে দিল, এমন ভুল যেন আর কখনো না হয়। আমরা তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার মত সময়ও পেলাম না। ট্রেন ছেড়ে দিল। দৌড়াতে দৌড়াতে ট্রেনে উঠলাম। আর সাথে সাথে সস্তির নিশ্বাসটা বোধহয় ফেলতে পারলাম।
যথা সময়ে যমুনা সেতু পাড়ি দিয়ে রাজশাহী স্টেশনে পৌছালাম। ভালভাবে পরীক্ষা দিলাম রাতে থাকার যায়গা হল এক মসজিদে। কারণ, আমার এক পাড়া-প্রতিবেশি ভাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ে। তার সাথে যোগাযোগ ছিল কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারলাম না কারণ, আমার মোবইলে চার্জ ছিল না। রাত্রে তীব্র মশার কামড় উপেক্ষা করে ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ ত্যাগ করলাম। সেই দিন সকালে যোগাযোগ করলাম আমার সেই বড় ভাইয়ের সাথে। সে আসল এবং আমাদের দুজনকে তার মেসে নিয়ে গেল। সেখানে ভালভাবে দিনটা পার করলাম।
আবার গল্পে ফিরে আসি, তো ভিড়ের ভিতর চাচা আর আমার সেই বোনকে ট্রেনে না ওঠার জন্য বললাম।
কারণ, আমাদের মত হাজার ও পরীক্ষার্থী ভাই-বোনেরা ট্রেনে যাওয়ার জন্য টিকেটহীন ভাবে ঘোরা ফেরা করছে। আমার চাচা আর বোন ওখান থেকে আবার মেডিকেলের হলে চলে গেল।
রাত ১১ টায় ট্রেন ছাড়বে, সূচিতে দেখলাম। তো আমরা ৬ জন পরিস্থিতি দেখে হালকা নাস্তা করে রাত ৯ টার দিকে ট্রেনে উঠে পড়লাম। অবশ্যই লোকজন উঠতেছিল তাই। ভালমত আসন দেখে আমার ৫ বন্ধু বসে পড়ল। আমি বসলাম না, কারণ, কার আসন তার তো কোন ঠিক নেই। সে যদি আমাকে উঠিয়ে দেয়। তার আগে থেকে দাড়ানোর মত একটা জায়গা ঠিক করে নিই, এই ভেবে। পরপর লোকজনের সরাগম ট্রেনের ভিতর আসতে লাগল। যে যেভাবে পারে দ্রুতগতিতে ট্রেনে ওঠার জন্য ব্যস্ত। আমার এক বন্ধু নাম-আতায়ূর। আমরা তাকে সবাই আতা বলে ডাকতাম। সে আমাকে বসার জন্য অনুরোধ করল কিন্তু আমি তার কথায় কর্ণপাত না করে তালগাছের ন্যায় দাড়িয়েই থাকলাম।
আপনাদেরকে আর একটা তথ্য দিয়ে রাখি আমরা যে বগিতে (রুম) এ উঠেছিলাম তার আসন সংখ্যা ছিল ৯২ টি। ১০ টা বেজে ৩০ মিনিট, মুহূর্তের ভিতর দেখলাম আমাদের বগিতে কোন ফাঁকা জায়গা নেই পা দেওয়ার জন্য। নানা দিক থেকে নান রকম গুঞ্জন। কেউ বলে টিকেট লাগবে না, কেউ বলে টিকেট চেকার ( যে ব্যক্তি টিকেট দেখে) সে ঢুকতে পারবে না, কেই বলে ঢুকতে দিলে তো ঢুকবে, আবার কেই কেই জোরে স্বরে স্লোগান তোলে “ আজকের দিনে টিকেট লাগবে না, লাগবে না, লাগবে না।”
চারিদিকে গিজির মিজির একটা শব্দ কারো কথা স্পষ্ট করে বোঝা যাই না। ট্রেনের ক্ষুদ্রাকৃতির জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি ৫০ বছর বয়সী এক চাচা আমাকে বলল খোকা ৮৭, ৮৮, ৮৯ ছিট তিনটা কোন দিখে আমি তাকিয়ে দেখলাম আমার বন্ধুরা যে ছিটগুলোই বসে আছে সেগুলোই মূলত চাচার সেই কাঙ্খিত আসন। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার এক বন্ধু নাম রেজয়ান কবির সংগ্রাম, আমারা তাকে সবাই সংগ্রাম বলেই ডাকতাম। সে বলে উঠল অ্যাঙ্কেল সামনের দিকে সে আসন গুলো। চাচা দ্রুত সামনের দিকে ছুটে গেল। এর ভিতর আমার দু পা সরাবার মত এতটুকু জায়গাও সেখানে নাই। আমার বন্ধুদের আসনে এক বৃদ্ধ দাদা বয়সী ব্যক্তিকে বসতে দিলাম। সেই টিকেট আলা চাচা আবার আসল, তার পূর্বে এক অপরিচিত সমসবয়সী ভাই আমাদের বলল জানালা বন্ধ করে দাও। তাই করা হল। টিকেট আলা চাচা আমাদের কে বাইরে থেকে বলছে এই আসনগুলো তো ৮৭,৮৮,৮৯। আমরা আবছা আবছা শুনেও না শোনার ভাব করছি। বাইরে তাকিয়ে দেখলঅম কয়েকজন পুলিশ লাঠি হাতে দাড়িয়ে আর কয়েকজন এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছে। ঘড়ির কাটা ১১ টার কোটায়। ট্রেন ছাড়ছে না। দেখলাম কয়েকজন মেয়ে ট্রেনের ক্ষুদ্রাকৃতির সেই জানালা দিয়ে ট্রেনে ওঠার জন্য ব্যস্ত। আমাদের ধারে যে জানালা ছিল তার মুখে দেখি একজন ওঠার জন্য টেষ্টা করছে তারপরও সে উঠতে পারছে না।। আমার এক বন্ধু তাকে ভিতরে আসার জন্য সাহায্য করল। রাত ১১ টা বেজে ১৫ মিনিট ট্রেন ছেড়ে দিল। সাথে সাথে এক আকস্মিক চিৎকার। হুম……………..ট্রেন ছাড়ছে। একটা দুঃখের কথা বলি, তোমরা ভেব না এটা আমাদের দুঃখ। এটা তাদের দুঃখ যারা টাকা দিয়ে কষ্টকরে লাইনে দাড়িয়ে থেকে টিকেট সংগ্রহ করছে কিন্তু টিকেট হাতে পেয়েও থাকতে হল ট্রেনের বাইরে।
নানা রকম ইসলামী সংগীত, কবিতা, গান নানান রকম অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে এক এক জন বের করছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেল ৯২ জনের আসনের বগিতে প্রায় ৪০০ জন। প্রথমে ট্রেন আস্তে আস্তে চলছিল বলে, অনেকে (যারা এর পূর্বে ট্রেন ভ্রমণ করেনি) মন্তব্য করে বসল যে, এই ট্রেন আর চলবে না। ট্রেনের গতি পরপর বৃদ্ধি পেতে লাগল, তাদের ধারণা মিথ্যা প্রমানিত হল। বিভিন্ন স্টেশন পার করে এয়ারপোর্ট নামক স্টেশনে এসে ট্রেন থামল। আমি আমার বন্ধুদের বললাম এখানে নামলে টিকেট চেক হবে না কিন্তু কমলপুর স্টেশনে নামলে টিকেট চেক হবে। কি করবা? ওরা বলল আমরা কমলাপুর দেখিনি। আতএব সেখানে যাব। কমলাপুর এসে ট্রেন থামল। ট্রেন থেকে সবাই নামলাম। সেখানে অঢল লোকজন নানান রকম ব্যক্তির আনাগোনা হকার, বাদামওয়ালাসহ আরো কত ব্যক্তি। তো বাহির হওয়ার জন্য গেটের দিকে অগ্রসর হলাম, দেখি গেটে টিকেট চেক করছে। আমি আমার বন্ধুদের বললাম, এখন কি হবে। দুর থেকে তাকিয়ে দেখি সেখানকার গার্ডেরা লোকদের ধরে নিয়ে যাত্রীদের বিশ্রাম জন্য যে রুম ব্যবহৃত হয় ঐ রুমে বসাচ্ছে আর কিছক্ষণ পরপর ছেড়ে দিচ্ছে। এরই ভিতর আমার দুই বন্ধু গার্ডদের চোখে পা দিয়ে পার হয়ে গেল। এখনো চারজন আমরা স্টেশনের ভিতরে। আমি আগে একবার এসেছি বলে এতটুকু জানি যে আর একটা গেট আছে সেখানে কোন গার্ড থাকে না। তো আমি সেদি দিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে দেখি সেদিকেও গার্ড। আমি প্রসাব করার ভান করে সেই গেট দিয়ে বাইরে চলে এলাম। আসার কিছুক্ষণ পর সংগাম আমাকে ফোন করে জানাল, আবু-বক্করকে পুলিশে ধরছে। তাকেও ঐ বিশ্রামাগারে ভিতরে রাখছে, তুমি কিছু কর। কি আর করার, আমি প্রবেশ দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকবো গার্ড বলে কই কোথাই যাও? আমি বললাম আমার এক বন্ধু ভিতরে আছে তাকে আনার জন্য যাচ্ছি। আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিল। অনেক কাকুতি মিনতি করে ১২০ টাকার বিনিময়ে আমি সেখান থেকে তাকে বের করলাম। কি আর করার তার পর সবাই সবার নির্দিষ্ট স্থানে চলে যাবে। আমার সাথে আমার ২ জন বন্ধু আসার জন্য সম্মতি দিল। এই আর কি। এইভাবে শেষ হলো টিকেটহীন ট্রেন ভ্রমনের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
২১/১০/২০১১ইং।
তো ট্রেনের টিকেট কেউ পেলাম না।
চাচা আর চাচাতো বোন, তারা এর আগে কখনো ট্রেন ভ্রমন করে নি। সেজন্য তারা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিল ট্রেন ভ্রমন করার জন্য। আমার চাচার একটা পায়ের সমস্যা ছিল তাই আমরা তাকে ট্রেনে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। আর বিশেষ করে ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা ছেলে মানুষ যে কোন সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবো কিন্তু মেয়ে মানুষ তো আর সেটা পারবে না। আপনাদের আগাম জানাই রাখি যে এর পূর্বে আমি একবার ট্রেন ভ্রমণ করেছিলাম। তাতেও মোটামুটি হেনস্থা হয়েছিলাম। তিন জন যাব বলে অগ্রিম টিকেট কাটলাম। ঢাকা টু রাজশাহী । যাওয়ার আগের দিন শুনলাম একজন যাবে না। তারপর আর একজনের বাড়িও অনেক দুর সে ৬ টার ভিতর পৌছাতে পারবে কিনা তার ও নিশ্চয়তা নেই। তো আমি যথাসময়ে স্টেশনে উপস্থিত হলাম। এর আগে আমি একটা টিকেট রাজশাহীর এক অপরিচিত ভাইয়ের কাছে যথামূল্যে বিক্রি করে দিলাম। ৫টা বেজে ৪৫ মিনিট আমার এক বন্ধু নাম তার সাঈদ, গ্রামের বাড়ি-শরীয়তপুর। তার ও কোনো খোজ নেই। ৫ মিনিট পরে সে আমার কাছে মোবাইলে বলল, দোস্ত তুমি কই। আমি বললাম তুমি কই, ট্রেন ছাড়ার আর ১০ মিনিট বাকি। সে বলল আমি স্টেশনে ভিতরে আসছি। একটু সস্তি পেলাম, ৫ মিনিট বাকি ট্রেন ছাড়ার। আমি নির্দিষ্ট আসন দেখে বসে গেলাম। পরে আবার মোবাইল বেজে উঠল, ওপর পার্শ্ব থেকে তাড়াতাড়ি প্রবেশ গেটে আসো আমার ঢুকতে দিচ্ছে না। আমি তড়িঘড়ি করে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকেট সাথে নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। প্রবেশ গেটে গেলাম গেট রক্ষি বলল টিকেট কই আমি বললাম, অ্যাঙ্কেল আছে, দেখাচ্ছি। তো টিকেট তো ট্রেনে আমি গেট রক্ষিকে বললাম আ্যাঙ্কেল আর ১ মিনিট বাকি ট্রেন ছাড়তে আপনি আমাদের ছেড়ে দিন, কারণ আজ বিকাল চারটায় আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে (খ.খ.ই) ভর্তি পরীক্ষা। তার দয়া হল ছেড়ে দিল। তারপূর্বে বলে দিল, এমন ভুল যেন আর কখনো না হয়। আমরা তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার মত সময়ও পেলাম না। ট্রেন ছেড়ে দিল। দৌড়াতে দৌড়াতে ট্রেনে উঠলাম। আর সাথে সাথে সস্তির নিশ্বাসটা বোধহয় ফেলতে পারলাম।
যথা সময়ে যমুনা সেতু পাড়ি দিয়ে রাজশাহী স্টেশনে পৌছালাম। ভালভাবে পরীক্ষা দিলাম রাতে থাকার যায়গা হল এক মসজিদে। কারণ, আমার এক পাড়া-প্রতিবেশি ভাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ে। তার সাথে যোগাযোগ ছিল কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারলাম না কারণ, আমার মোবইলে চার্জ ছিল না। রাত্রে তীব্র মশার কামড় উপেক্ষা করে ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ ত্যাগ করলাম। সেই দিন সকালে যোগাযোগ করলাম আমার সেই বড় ভাইয়ের সাথে। সে আসল এবং আমাদের দুজনকে তার মেসে নিয়ে গেল। সেখানে ভালভাবে দিনটা পার করলাম।
আবার গল্পে ফিরে আসি, তো ভিড়ের ভিতর চাচা আর আমার সেই বোনকে ট্রেনে না ওঠার জন্য বললাম।
কারণ, আমাদের মত হাজার ও পরীক্ষার্থী ভাই-বোনেরা ট্রেনে যাওয়ার জন্য টিকেটহীন ভাবে ঘোরা ফেরা করছে। আমার চাচা আর বোন ওখান থেকে আবার মেডিকেলের হলে চলে গেল।
রাত ১১ টায় ট্রেন ছাড়বে, সূচিতে দেখলাম। তো আমরা ৬ জন পরিস্থিতি দেখে হালকা নাস্তা করে রাত ৯ টার দিকে ট্রেনে উঠে পড়লাম। অবশ্যই লোকজন উঠতেছিল তাই। ভালমত আসন দেখে আমার ৫ বন্ধু বসে পড়ল। আমি বসলাম না, কারণ, কার আসন তার তো কোন ঠিক নেই। সে যদি আমাকে উঠিয়ে দেয়। তার আগে থেকে দাড়ানোর মত একটা জায়গা ঠিক করে নিই, এই ভেবে। পরপর লোকজনের সরাগম ট্রেনের ভিতর আসতে লাগল। যে যেভাবে পারে দ্রুতগতিতে ট্রেনে ওঠার জন্য ব্যস্ত। আমার এক বন্ধু নাম-আতায়ূর। আমরা তাকে সবাই আতা বলে ডাকতাম। সে আমাকে বসার জন্য অনুরোধ করল কিন্তু আমি তার কথায় কর্ণপাত না করে তালগাছের ন্যায় দাড়িয়েই থাকলাম।
আপনাদেরকে আর একটা তথ্য দিয়ে রাখি আমরা যে বগিতে (রুম) এ উঠেছিলাম তার আসন সংখ্যা ছিল ৯২ টি। ১০ টা বেজে ৩০ মিনিট, মুহূর্তের ভিতর দেখলাম আমাদের বগিতে কোন ফাঁকা জায়গা নেই পা দেওয়ার জন্য। নানা দিক থেকে নান রকম গুঞ্জন। কেউ বলে টিকেট লাগবে না, কেউ বলে টিকেট চেকার ( যে ব্যক্তি টিকেট দেখে) সে ঢুকতে পারবে না, কেই বলে ঢুকতে দিলে তো ঢুকবে, আবার কেই কেই জোরে স্বরে স্লোগান তোলে “ আজকের দিনে টিকেট লাগবে না, লাগবে না, লাগবে না।”
চারিদিকে গিজির মিজির একটা শব্দ কারো কথা স্পষ্ট করে বোঝা যাই না। ট্রেনের ক্ষুদ্রাকৃতির জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি ৫০ বছর বয়সী এক চাচা আমাকে বলল খোকা ৮৭, ৮৮, ৮৯ ছিট তিনটা কোন দিখে আমি তাকিয়ে দেখলাম আমার বন্ধুরা যে ছিটগুলোই বসে আছে সেগুলোই মূলত চাচার সেই কাঙ্খিত আসন। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার এক বন্ধু নাম রেজয়ান কবির সংগ্রাম, আমারা তাকে সবাই সংগ্রাম বলেই ডাকতাম। সে বলে উঠল অ্যাঙ্কেল সামনের দিকে সে আসন গুলো। চাচা দ্রুত সামনের দিকে ছুটে গেল। এর ভিতর আমার দু পা সরাবার মত এতটুকু জায়গাও সেখানে নাই। আমার বন্ধুদের আসনে এক বৃদ্ধ দাদা বয়সী ব্যক্তিকে বসতে দিলাম। সেই টিকেট আলা চাচা আবার আসল, তার পূর্বে এক অপরিচিত সমসবয়সী ভাই আমাদের বলল জানালা বন্ধ করে দাও। তাই করা হল। টিকেট আলা চাচা আমাদের কে বাইরে থেকে বলছে এই আসনগুলো তো ৮৭,৮৮,৮৯। আমরা আবছা আবছা শুনেও না শোনার ভাব করছি। বাইরে তাকিয়ে দেখলঅম কয়েকজন পুলিশ লাঠি হাতে দাড়িয়ে আর কয়েকজন এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছে। ঘড়ির কাটা ১১ টার কোটায়। ট্রেন ছাড়ছে না। দেখলাম কয়েকজন মেয়ে ট্রেনের ক্ষুদ্রাকৃতির সেই জানালা দিয়ে ট্রেনে ওঠার জন্য ব্যস্ত। আমাদের ধারে যে জানালা ছিল তার মুখে দেখি একজন ওঠার জন্য টেষ্টা করছে তারপরও সে উঠতে পারছে না।। আমার এক বন্ধু তাকে ভিতরে আসার জন্য সাহায্য করল। রাত ১১ টা বেজে ১৫ মিনিট ট্রেন ছেড়ে দিল। সাথে সাথে এক আকস্মিক চিৎকার। হুম……………..ট্রেন ছাড়ছে। একটা দুঃখের কথা বলি, তোমরা ভেব না এটা আমাদের দুঃখ। এটা তাদের দুঃখ যারা টাকা দিয়ে কষ্টকরে লাইনে দাড়িয়ে থেকে টিকেট সংগ্রহ করছে কিন্তু টিকেট হাতে পেয়েও থাকতে হল ট্রেনের বাইরে।
নানা রকম ইসলামী সংগীত, কবিতা, গান নানান রকম অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে এক এক জন বের করছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেল ৯২ জনের আসনের বগিতে প্রায় ৪০০ জন। প্রথমে ট্রেন আস্তে আস্তে চলছিল বলে, অনেকে (যারা এর পূর্বে ট্রেন ভ্রমণ করেনি) মন্তব্য করে বসল যে, এই ট্রেন আর চলবে না। ট্রেনের গতি পরপর বৃদ্ধি পেতে লাগল, তাদের ধারণা মিথ্যা প্রমানিত হল। বিভিন্ন স্টেশন পার করে এয়ারপোর্ট নামক স্টেশনে এসে ট্রেন থামল। আমি আমার বন্ধুদের বললাম এখানে নামলে টিকেট চেক হবে না কিন্তু কমলপুর স্টেশনে নামলে টিকেট চেক হবে। কি করবা? ওরা বলল আমরা কমলাপুর দেখিনি। আতএব সেখানে যাব। কমলাপুর এসে ট্রেন থামল। ট্রেন থেকে সবাই নামলাম। সেখানে অঢল লোকজন নানান রকম ব্যক্তির আনাগোনা হকার, বাদামওয়ালাসহ আরো কত ব্যক্তি। তো বাহির হওয়ার জন্য গেটের দিকে অগ্রসর হলাম, দেখি গেটে টিকেট চেক করছে। আমি আমার বন্ধুদের বললাম, এখন কি হবে। দুর থেকে তাকিয়ে দেখি সেখানকার গার্ডেরা লোকদের ধরে নিয়ে যাত্রীদের বিশ্রাম জন্য যে রুম ব্যবহৃত হয় ঐ রুমে বসাচ্ছে আর কিছক্ষণ পরপর ছেড়ে দিচ্ছে। এরই ভিতর আমার দুই বন্ধু গার্ডদের চোখে পা দিয়ে পার হয়ে গেল। এখনো চারজন আমরা স্টেশনের ভিতরে। আমি আগে একবার এসেছি বলে এতটুকু জানি যে আর একটা গেট আছে সেখানে কোন গার্ড থাকে না। তো আমি সেদি দিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে দেখি সেদিকেও গার্ড। আমি প্রসাব করার ভান করে সেই গেট দিয়ে বাইরে চলে এলাম। আসার কিছুক্ষণ পর সংগাম আমাকে ফোন করে জানাল, আবু-বক্করকে পুলিশে ধরছে। তাকেও ঐ বিশ্রামাগারে ভিতরে রাখছে, তুমি কিছু কর। কি আর করার, আমি প্রবেশ দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকবো গার্ড বলে কই কোথাই যাও? আমি বললাম আমার এক বন্ধু ভিতরে আছে তাকে আনার জন্য যাচ্ছি। আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিল। অনেক কাকুতি মিনতি করে ১২০ টাকার বিনিময়ে আমি সেখান থেকে তাকে বের করলাম। কি আর করার তার পর সবাই সবার নির্দিষ্ট স্থানে চলে যাবে। আমার সাথে আমার ২ জন বন্ধু আসার জন্য সম্মতি দিল। এই আর কি। এইভাবে শেষ হলো টিকেটহীন ট্রেন ভ্রমনের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
২১/১০/২০১১ইং।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১৪/০৫/২০১৭ভবিষ্যত যাত্রীরা অভিজ্ঞতা নেবেন।
-
আলম সারওয়ার ১৩/০৫/২০১৭নিরন্তর সুভেচছা
-
সাঁঝের তারা ১৩/০৫/২০১৭ভাল