www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রেম

রাজকুমার বিজয় আর সুন্দরী মাধুরী একে-অপরের প্রেমে দেওয়ানা । সেই ছোট্টবেলা থেকেই এই মাধুরীর সাথে বিজয়ের পরিচয় । দুজনে একসাথে খেলাধুলা করেছে, লেখাপড়া করেছে এবং একসাথে বরও হয়েছে । সাদা, সুন্দর আর সুঠামদেহী এই বিজয় যেন মাধুরীর জীবনে দেখা একটি মাত্র রাজপুত্র । তার জীবনে যে সে বিজয়ের রানি হওয়া ছাড়া আর কোন সপ্নই দেখে নি । আর মাধুরীর এই সুন্দর রূপ দেখে বিজয়ের যেন চোখ ঝলসে যায় । তবুও তৃষ্ণা মিটে না । এই মাধুরীর রূপ দেখে যেন সে কাটিয়ে দিতে পারে আরো হাজারটি জীবন ।

আজ একটি রৌদ্রদিপ্ত দিন । বিকেলের খোলা বাতাসে নদীর ধারে বসে রয়েছে তারা দুজনে । কি এক অনাবিল শান্তি যেন বিরাজ করছে তাদের দুজনার মাঝে । এ শান্তি যেন প্রকৃতির উদার্যতা থেকে নয় । এ শান্তি তাদের একে অপরের স্পর্শ থেকে । সুন্দরী মাধুরী আজ বিজয়কে ছারা তার কাটানো বিষাদের মূহুর্তগুলোর অবসান ডাকতে চায় । বিজয়কে ছেড়ে তার আর ঘরে যেতে ইচ্ছে করে না । সে আজ বিজয়ের ঘরনী হতে চায় । কিন্ত পোরা কপাল তার । রাজকুমার বিজয় তার কাছে দু সপ্তাহ সময় চায় । তার বাবা মহামান্য রাজা এখন রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাহিরে । বাবা মাকে না জানিয়ে সে এতোবরো কাজ করাটাকে যৌক্তিক মনে করে না ।

রাতের আকাশে আজ উঠেছে পূর্ণিমার চাঁদ । তাঁহাকে ঘিরে রয়েছে অজস্র মুক্তার মতো তারা । বিছানায় শুয়ে নিজ কক্ষের জানালা দিয়ে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করার চেষ্টা করে বিজয় । কিন্তু সে যেনো অনুভব করতে পারে মাধুরীর ওই সুন্দর রূপের কাছে এই পূর্ণিমার চাঁদ একেবারেই কিছু নয় । কিন্তু হটাত করেই আসে তার চিন্তা-ধারায় পরিবর্তন । রাজ্যের সকল সুন্দরী নারীদেরতো সে এখনও দেখে নি । আর সকল সুন্দরী নারীদের না দেখে সে বিয়ে করবার সিদ্ধান্ত কিভাবে নিতে পারে । অনেক ভেবে-চিন্তে সে রাজ্য পরিদর্শনের সিদ্ধান্তে উপনীত হয় ।

পরদিন ভোরেই রাজকুমার বিজয় ঘোরা ছুটিয়ে বেরিয়ে যায় প্রাসাদ থেকে । ধীরে ধীরে পিছনে পরতে থাকে শত শত গ্রাম আর নগর । কিন্তু বিজয় হন্যে হয়ে ছুটতে থাকে সুন্দরী নারীর সন্ধানে । অবশেষে সে দেখা পায় এক পরমা সুন্দরী নারীর । রাজকুমার হলফ করিয়া দেখে কি সুন্দর চেহারা উক্ত রমনীর । কিন্তু তাহার পোশাক-আশাক খুবই অপরিচ্ছন্ন । রাজকুমারকে দেখে যেনো সে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে । সে রাজকুমারকে নিজের ঘরে আমন্ত্রণ করে । নিজ হাতের তৈরি খাদ্য দিয়ে আপ্যায়ন করে । কিন্তু বিজয় দেখতে পায় উক্ত নারীর কন্ঠস্বর অনেক কুৎসিত । তাহা ছাড়া তার ঘরও তার পোশাকের মতোই ময়লা । সে বুঝতে পারে রাজপ্রাসাদে উঠবার জন্য উক্ত নারী অনুপযোগী । আর ঠিক এমনি সময় স্থানীয় রাজ কার্যে নিযুক্ত কর্মকর্তা তাহাকে জানায় উক্ত নারীর ইতিমধ্যেই একবার বিবাহ হইয়াছিল । কিন্তু স্বামীর অমানুষিকতার কারনে সে এখন তালাকপ্রাপ্ত । বিজয় ভেবে দেখে জীবনে প্রথমবার বিয়ে করবে সে । এ মূহুর্তে সে একজন তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিবেচনা করিতে পারিবে কিনা । আর সেখানে রাজপ্রাসাদে উঠবার জন্য উক্ত নারীর অযোগ্যতাগুলোও হয়ে দাড়ায় বাধা । রাজকুমার বিজয় রাজ কর্মকর্তাদের উক্ত নারীর সাবেক অমানুষ স্বামীকে শাস্তি দেবার কথা বলে আবারও ঘোড়া ছোটায় ।

মাঠঘাট নদী-নালা আর জনপদের পর জনপদ পারি দিয়ে সে কেবল হন্যে খুজতে থাকে নতুন কোন সুন্দরীকে । অবশেষে তার আবারও দেখা মেলে অপর এক পরমা সুন্দরী নারীর সাথে । সত্যিই অপরূপা এ নারী । একেবারেই তাকিয়ে থাকার মতো । অনেক মিষ্টি কন্ঠে সে কথাও বলতে পারে । কিন্তু স্থানীয় কর্মকর্তাগন তাকে জানায় রাজকুমার উক্ত নারী একজন চরিত্রহীন । তাহার হাতে ধোকা খেয়েছে উক্ত এলাকার অনেক পুরুষ । বিজয়ও যেন লক্ষ করেছে উক্ত নারীর ভিতরে রয়েছে লাজুকতার যথেষ্ট অভাব । হয়ত তাহার পাপ তাহার নিকট হইতে কেরে নিয়েছে লাজুকতা । প্রকৃতপক্ষে লজ্জাই নারীর প্রধান ভূষন । আর এই লাজুকতার অভাব তাহার সৌন্দর্যকে যেন কমিয়ে এনেছে সুন্দরী মাধুরীর চেয়ে অনেক অনেক নিচে । কিন্ত কেবল রাজ কর্মকর্তাদের কথায় বিজয় সিদ্ধান্ত লইতে পারে না ।তাহার চাই চাক্ষুষ প্রমাণ । অতপর রাজকুমারের নির্দেশে ডেকে আনা হলো স্থানীয় সে সকল পুরুষদেরকে । যাহারা উক্ত নারীর দ্বারা ধোকার স্বীকার হয়েছে । তারপর একে একে সকলের মুখ থেকে ফুটে উঠতে থাকে এক একটি করুন বর্ণনা। বর্ণনা শোনার পর রাজকুমার বিজয় উক্ত নারীকে তাহার কৃত কর্মের শাস্তি স্বরূপ জনসম্মুখে হেনস্থা করেন । এবং উক্ত পুরুষদিগকে যথাযথ শান্তনা প্রদান করেন ।

অতপর আবারও ঘোরা ছোটান রাজকুমার বিজয় নতুন কোনও এক সুন্দরী নারীর সন্ধানে । পারি দেয় আরো কয়েক হাজার মাইল । আর যেন সে পারে না । মাধুরীকে ছেড়ে এতো লম্বা সময় বাহিরে সে যে আর কোন সময় থাকে নি । তবুও সে কষ্ট করে পারি দেয় আর কিছুটা পথ । অত:পর সে দেখতে পায় এক পরমা সুন্দরী নারী বিশালাকার এক বটবৃক্ষের নিচে বসে ক্রন্দন করিতেছে । রাজকুমার তাহার সন্নিকটে যায় । তাহাকে শান্তনা দিতে চেষ্টা করে । জানতে চায় তাহার এই দু:খের কি কারন । অত:পর কন্যা তাহাকে বলে সে এক পুরুষকে ভালোবাসে । কিন্তু আজ প্রভাতে এই বটগাছ তলে তাহার ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে এক লম্পট । এখন সে তার প্রেমিকের বুকে কীভাবে ফেরত যাবে ? বিজয় তাকে শান্ত হতে বলে । এবং উক্ত লম্পটকে তলব করে এনে তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে । রাজকুমার প্রত্যক্ষ করে কি অপরূপ সুন্দর এই নারী । সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে গরেছেন একেবারেই নিজ হাতে । তার এই মিষ্টি রূপের মোহে যেন পাগল হতে পারে হাজারো পুরুষ । কিন্তু একদিকে সে হয়েছে লাঞ্ছিত । অপরদিকে তার রয়েছে প্রেমিক । রাজকুমার বিজয় তাহাকে যথাযথ সম্মানে পৌছে দেয় তাহার প্রেমিকের নিকট ।

বিজয় ভেবে দেখে মাধুরীই তার জীবনে আসা শ্রেষ্ঠ নারী । সে আর পথ চলতে পারবে না । মাধুরীকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না আর একটি মুহূর্তও । সে প্রানপনে ঘোরা ছোটায় মাধুরীর ঘরের উদ্দেশ্যে । ওদিকে বিজয়কে দেখতে না পেয়ে মাধুরীর চোখে নেই ঘুম । হারিয়ে ফেলেছে খাওয়ার রুচি । কোথায় গিয়েছে বিজয় তাকে ছেড়ে । রুমের জানালা দিয়ে সে কেবল চেয়ে থাকে বিজয়ের পথ পানে । বিজয়কে ছাড়া যে সে থাকতে পারে না আর একটি মুহূর্তও ।

সেদিন দিনের শেষভাগে ঘোড়া ছুটিয়ে ফিরে আসে রাজকুমার বিজয় । একে অপরকে জরিয়ে ধরে তারা উপভোগ করে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখটি । আর সে রাতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এ যাবত কালের সবচেয়ে সুখি দম্পতি বিজয় আর মাধুরী ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭২৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৫/০৫/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ০৮/০৫/২০১৭
    চিত্তহারী লেখা উপহার দিলেন
  • শেলি ০৫/০৫/২০১৭
    সুন্দর
  • সুন্দর গল্প। ধন্যবাদ গল্পকারকে।
  • মোনালিসা ০৫/০৫/২০১৭
    ভাই পার্ট পার্ট করে দিতেন
  • Tanju H ০৫/০৫/২০১৭
    শুভেচ্ছা রইল
  • মধু মঙ্গল সিনহা ০৫/০৫/২০১৭
    খুব ভালো।
  • সাঁঝের তারা ০৫/০৫/২০১৭
    মোটামুটি ভাল গল্প। কিন্তু বানানের দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। যেমন - ছারা > ছাড়া, পারি > পাড়ি, জরিয়ে > জড়িয়ে ইত্যাদি ...
 
Quantcast