www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

তুমি সে ও আমির গল্প

- suman
আমি

সেই সকাল থেকে কান্দন আমারে পাইয়ে বইছে, কেনো যে এতো কান্দন আসে কবার পারিনে, এদিকে পেটের শত্রুটা দিনে দিনে বড় হছছে,  খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছি, বাপের জন্যে গরম ভাত রান্না করি,বাপ খুব সকাল সকাল রিকশা নিয়ে বের হয়, ফেরে সে বেলা তিনটের দিকে, চারটে ভাত খেয়ে আবার বের হয় রাতের টিরিপ ধরার জন্যে...
আমরা পাঁচ-পাঁচটা বোন, তারপরে  এই যে আমি  আবার বাপের ঘাড়ের বোঝা হইয়েছি,কিছুদিন আগেও আমি বাপের ঘাড়ের বোঝা ছিলাম না , বাপের একটা ছাওয়ালের সমান ছিলাম আমি, বাপজান আমারে সেই ষোলো বছর বয়সে গারমেন্টস এ ঢুকিয়ে দেয়, তারপর আমি বাবার ছেলে হইয়ে যাই,আড়াই হাজার টেকা পেতাম,তার থেকে বাপকে কিছু পাঠাতাম,আধপেটা খেইয়ে গারমেন্টসে যেতাম...আমরা দল বেধে হৈ হৈ করতে করতে একসাথে এক গাদা ছেলে-মেয়ে সেই সকালে রওনা হতাম আবার সন্ধ্যেবেলা একসাথে ফিরে আসতাম...কি সুন্দর ছেলো সেইসব দিন...তাও কিছু টাকা রোজগার করতাম তখন...বাপকে তো কিছু টাকা দিতি পারতাম ...আমার বাপটার যে বড় ভাতের কষ্ট...কি যে ভূত চ্যাইপলো মাথায়...ভুতই তো... সব স্বপ্ন নিবে গেলো...কবিরের মিষ্টি মিষ্টি কথায় কেডা না ভোলে ?কি সোন্দর কইরে কথা বইলতো কবির,বইলতোঃ আমারো অনেক ভাতের কষ্ট তবু তোমারে এতো ভালোবাসি, দ্যাখো এই গোলাপটা পাঁচ টাকা দিয়ে শুধু তোমার জন্যি কিনে আনিছি, তখন তারে খুব বিশ্বাস করতি ইচ্ছে হোতো...আমার বয়স তখন আর কতো ষোলো বছরের একটু বেশী ...আমি অবিশ্বাস করা কারে বলে জাইনতাম না ...তারে খুব বিশ্বাস কইরেছিলাম ...আর চাইরদিকে এতো বিপদ...মন বইললো, কবির আমারে আইলগে রাখপে ...্সেই তো ভুল হইয়ে গেলো আজ সেই ভুল টেইনে টেইনে বেড়াতিছি...মনে করেছিলাম পেটের শত্রুটাকে পৃথ্থিবীর মুখ দেখাবো না...ততোদিনে পাঁচ-ছয় মাস হইয়ে গেছে বুড়ো  কবিরাজ বইললোঃ রেখে দাও ময়না সে পৃথ্থিবী্তে আসবেই আসবে, তুমি-আমি কি করতি পারি...সবই তেনার ইচ্ছা । মা একটু গাইগুই করছিলো,আবার যদি একটা সম্মন্ধ আসে তাইলে তো ঐ একটা মাঝখানে কাঁটা থেকে যাবে ...কিছু একটা করা যায় না...
মার মুখটা আন্ধার হইয়ে গেলো, বইললো সব দোষ তোর ঐ লোভী বাপের ...মেয়ে আমার নামাযী,বোরকা পরে,ঘর থেকে বের হয় না ,সে মোটে গারমেন্টসে ভর্তি হবে না , তাকে জোর কইরে ঢুকালো...এখন টেনে বেড়াও ডবল বোঝা ...
এইসব কথা মনে পড়লি কেবলি বন্যার মতো পানি চোখ বেয়ে বেয়ে পড়ে...কি যে এক দুশচিন্তা আসে ...আসলে তো সত্যিকথা দুজন মানুষ কেমন কইরে চলবো তখন...

সে

আমি একজন ফটোসাংবাদিক, ফটোগ্রাফী আমার নেশা-পেশা,অফিসের একটা  assignment নিয়ে এসেছি দক্ষিণের এই শেষ প্রান্তে, সকালের আলোটা আমার খুব দরকার ছিলো, কি সৌভাগ্য পেয়েও গেলাম,পারফেক্ট স্টোরি ...তারপর কুমকুম আক্তার ওর স্বামীর আইডি কার্ডটা বার বার আমাকে দেখাতে চায়...আমি জানি এসব ইগনোর করতে হয় না , গুরুত্ব দিতে হয়...পুরো স্টোরিটা সুন্দর করে কিভাবে টাচি করে তুলতে হয় তা আমার এতোদিনে বেশ আয়ত্বে এসে গেছে ...যদিও এ লাইনে এখনো আমি বেশ নতুন... এর মাঝে কইয়েকটা ইন্টারন্যাশনাল assignment পেয়ে গেলাম  ...তানহা শুনলে তো হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যাবে ...তানহা এখনো আমার ভালো বন্ধু...তানহার ব্যাপারে আমি কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনা...আমাদের মাঝখানে ধর্মের একনদী ব্যবধান ...হয়তো আমি একদিন দাদার কাছে আমেরিকাতে চলে যাবো ...তানহা অন্য কোথায়...আমার গায়ের রংটা ঘোর কালো ...তানহা আমাকে বলে ,এই তোমাকে একজন ব্লাক ভদ্রলোকের পাশে দাঁড় করালে ...তারপর একা একা ভীষন হাসে ...ওর এই বাধ ভাঙ্গা হাসির দিকে আমি তাকিয়ে থাকি ...আর কোথায় যেনো হারিয়ে যাই ...আর তানহাকে তখন খুব কাছের মানুষ ভাবতে ভালো লাগে...

আমি

আমার এ মাসের শেষের দিকে বাইচ্চা হবে মা বইল্লো এবারের আমাবইশ্যায় বাইচ্চা হবে ...লক্ষণে বলে ছাওয়াল হবে ...এতো কান্নার মাঝে ছাওয়াল হবে শুনে আমার কি যে ভালো লাগে...আমি আবার স্বপ্ন দেইখতে থাকি ...আমার ছাওয়াল বড় হবে ...আমার সব দূঃখ ঘুঁচে যাবে ...আমি যে মা ...আমার যে আগের কথা কিছুই মনে থাকে না ...আমি শুধু দিন গুনি আর দিন গুনি ...আমার ছোট ভাইটার বয়স সাত মাস ও ্তারস্বরে কেঁদে   উঠে আমার স্বপ্নে চির ধইরে দেয়...সাম্বাদিকের সাথে আরো কইয়েকজন ভদ্র ঘরের মেয়ে আসে ,আসে আমাদের এলাকার ভারতি দিদি, সবাই বলে : ভয়ের কিছু নেই তোমার কিছু ফোটু নেবে এই সাম্বাদিক সাহেব...তুমি একদম ভয় পাবে না...আমি একটু ঘাবড়ে যাই ...তারপর আস্তে আস্তে সাম্বাদিক সাহেবের ব্যবহারে আমি যে কখন ভুলে যাই আমি যে এক জনমদূখি কুমকুম... আমার স্বামী আমারে ফ্যালাইয়ে থুইয়ে আর একটা নিকে কইরে ভাইগেছে ...আমি ভুলে যাই ...সব ভুলে যাই ...সাম্বাদিক সাহেব শেষে বলে আপা আপনার বয়স তো খুব কম ...বিয়ের বয়সও তো বেশিদিন হয়নি, ঘরে সাজার জিনিষ আছে না ...আমি কিছু ছবি তুলবো আপনার...বেশ কিছুদিন হোইলো আমি ঠিকমতো চুল আঁচড়াতি ভুলে গিছি...কিছুতেই মন বসে না আমার... মনে হয় আমি যেনো এক চাবী দেওয়া কলের পুতুল ...আমার জীবনে চাইরদিক শুন্য হইয়ে গেছে ...সাম্বাদিক সাহেব আবার আমারে অনুরোধ করলো ...চাচাত ভাবীরা বললোঃ কি এমন বয়স তোর সবে তো উনিশ ...দেশে তো আইন-আদালত নেই...তোর ভাই বলেছে ঐ হারামজাদারে পালি টুকরো টুকরো কইরে কাইটে গাঙ্গে ভাসাই দেবে ...ওদের কথা শুনে এতো দুখ্যির মদ্দি আমার হাসি পায় ...আমি জানি ওরা ঐ শয়তানের কিছুই করতি পারবেনা...

তুমি

ঠিক আছে কুমকুমরে আমি নিকে করিছিলাম, কুমকুম অবশ্য জাইনতো আমি তারে বিয়ে করিছি...আমার পেটে ভাত নেই...দুজনে মিলে কোনোমতে স্ংসার চালাবো তা না উনার আবার বাপেরে টেকা পাঠানো লাগে ! বাপের জন্যি উনার জান জ্বইলে জ্বইলে উঠে ...টেকা নিয়ে রোজ রোজ ঝগড়া-ঝাটি...আমারো সহ্যের বাধ ভাইঙ্গে গেলো...লাথি কষিয়ে দিয়ে ফিরে এলাম আবার গার্মেন্টসে ...বদলাইয়ে ফেললাম গার্মেন্টস...নিকেও করিছি...পুরুষ মানুষ বেশীদিন একা থাকতি পারে? এবার একটা ভালো মেয়েছেলে পাইয়িছি...না খেয়ে থাকলিও এখনো পর্যন্ত মুখের উপর কথা বলে না ...শুনিছি কুমকুমের নাকি বাইচ্চা হবে ...হোক ...এখন আর ভেজাল বাড়িয়ে লাভ নেই...তবুও মনটা মাঝে মাদ্দ্যি কেমন যেনো খাঁ খাঁ করে...

আমি

বড় সুখের সময় ছেলো কবিরের সাথে আমার ...কতো কথা ...কথা যেনো ফুরোয় না ...সেই কবির কিভাবে আমারে এমন কইরে ভুলে গেলো ...আমি এখনো ঠিকমতো বিশ্বাস করতি পারিনে ...সত্যিই কি সে আমারে ভুলে গেছে ...সে কি আর ফিরে আসবে না ...বাইচ্চাটারে একবার চোখের দেখা দ্যাখার জন্যিও কি সে আইসবে না ? আমার আইজকাল সব কেমন যেনো ভুল হয়ে যায় চোখ বুজলে একবার কবিররে দখি ...আবার যেনো দেখি ঐ ভালো মানুষ সাম্বাদিক সাহেবরে ...কতো বড় শিক্ষিত লোক...দেশ -বিদেশে কতো নাম ...কবিরের থেকেও মিষ্টি করে কতো কি কথা বইললো আমারে ...কতো স্বান্তনা দিলো ...বইললো : কুমকুম তোমার বেবি হলে তোমাকে দেখতে আসবো ...আমি কিছ্যু ভাইবতে পারিনে ...আমার শুধু ভুল হইয়ে যায় ...আমাদের ঘুট্ঘুটে অন্ধকার ঘরে কোথার থ্যিকে একটু সরু আলো ঢুউকে পইড়েছে ...ভোর হইয়ে আইসছে ...আমার এখন উঠতি হবে ...
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৪৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • אולי כולנו טועים ২২/১১/২০১৩
    বেশ গুছানো লেখা।
    আমি, তুমি, সে - কয়েকটি আঙ্গিকে,
    ভিন্ন ভিন্ন পেশার জীবনকে
    এক সুতোয় গাঁথা।

    খুব ভালো লাগলো।
    • suman ২৪/১১/২০১৩
      কবি
      অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা এই গভীর মনোসংযোগের জন্যে ...ভেবেছিলাম কেউ পড়বে না ...কারো চিত্ত স্পর্শ করবে না ...আরো লেখার অনুপ্রেরণা পেলাম ...ভালো থাকবেন...
 
Quantcast