www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিরহী জীবনানন্দ(3)

'ক্যাম্পে' কবিতায় ঘাইহরিণীর ডাকে অভিসারে আসা হরিণদের শিকারির গুলিতে মৃত্যুতে জীবনানন্দ বিহ্বল হয়ে যান।মনে মনে তাদের সঙ্গে নিজের সাযুজ্য খোঁজেন-"তাদের মতন নই আমিও কি?/কোনো এক বসন্তের রাতে/জীবনের কোনো এক বিস্ময়ের রাতে/আমারেও ডাকেনি কি কেউ এসে জ্যোৎস্নায়-দখিনা বাতাসে/ওই ঘাইহরিণীর মতো?"।এই ঘাইহরিণীটি মানুষের পোষা,মানুষই তাকে শিখিয়েছে হরিণদের ওইভাবে ডেকে আনার কৌশল।সে ডাকে সমস্ত বিপদ তুচ্ছ করে তারা এসেছিল,কবিও তো এসেছিলেন-"আমার হৃদয়-এক পুরুষহরিণ-/পৃথিবীর সব হিংসা ভুলে গিয়ে/চিতার চোখের ভয়-চমকের কথা সব পিছে ফেলে রেখে/তোমারে কি চাই নাই ধরা দিতে?"।কিন্তু কবির প্রেমও যখন খুন হলো তখনও কি এই ঘাইহরিণীর মতো কবির প্রেমিকা বেঁচে ছিল-"আমার বুকের প্রেম ঐ মৃতমৃগদের মতো/যখন ধূলায় রক্তে মিশে গেছে/এই হরিণীর মতো তুমি বেঁচেছিলে নাকি/জীবনের বিস্ময়ের রাতে/কোনো এক বসন্তের রাতে?"।সেও এক বসন্তের রাত ছিল,প্রণয়ীর ডাক যে বসন্ত নিয়ে আসে।কিন্তু সঙ্গে যে মৃত্যুও আনে তা কবি জানতেন না তাই সেই রাত তাঁর কাছে বিস্ময়ের রাত।এই বিস্ময় প্রকাশ পেয়েছে ঠিক তার পরের বাক্যে,"তুমিও কাহার কাছে শিখেছিলে!";'তুমিও' প্রয়োগটি কবির মানসিক অবস্থা বোঝাতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।এ এক অদ্ভুত প্রেমের গল্প,নাকি বিরহের গল্প যেখানে প্রেম আছে,প্রণয়ীর ডাক আছে,বসন্ত আছে,সমস্ত বিপদ তুচ্ছ করে ছুটে যাওয়া আছে,আছে বিশ্বাসঘাতকতা ও মৃত্যু।বিরহের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি আছে,আসলে এ এক ধরনের জটিল মনস্তাত্ত্বিক খেলা অপ্রাপ্তি যেখানে প্রাপ্তির চেয়ে মহৎ।কিন্তু এই বিরহে তা নেই বরং মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে পড়তে এক ধরনের অবিশ্বাস ও বিস্ময় কাজ করে,'তুমিও'! মৃত্যুর মুহূর্তেও তা আমাদের ব্যথা দেয়,হৃদয়কে কুরে কুরে খায়,বড় যন্ত্রণার এই বিরহ। (সমাপ্ত)
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৫৭০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৫/১১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast