www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সবুজ বাংলা চাই- উপন্যাস প্রথম পর্ব

সবুজ বাংলা চাই
শাহানাজ সুলতানা
প্রথম পর্ব
**********************
বস্তির একদল ছেলে মেয়ে একটি ফাঁকা মাঠে খেলছে
ওপেনটি বায়াস্কোপ
নাইন টেইন তেইস্কোপ।
চুলটানাবিবি আনা
সাহেব-বিবির বৈঠক খানা।
সাহেব বলেছে যেতে
পান সুপারি খেতে
পানের ভিতর মরিচ বাটা
স্প্রিং-এর চাবি আটা।
যার নাম রেণু বালা
গলায় দিলাম মুক্তার মালা।

হৈ হুল্লোড় চেচামেচিতে মুখোর পরিবেশ। পাতা নামের একটি মেয়ে হঠাৎ মন খারাপ করে ছুটে যায় মাঠের এক প্রান্তে একটা পাকুড় গাছ আছে, তার কাছে।গাছটি জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে পাতা। চোখ মুছে উপরের দিকে তাকায়।গাছের শাখায় শাখায় সারস, বক, পানকৌড়ি, ফিঙে মাছরাঙা সহ শত শত পাখি বসে আছে । শহরের বুকে এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় না বললেই চলে। জায়গাটা গা ঘেষে বয়ে গেছে একটি নদী। নদীটির কিণারে মাঠটি ,তাই হয় তো পাখিগুলো ওদের নিরাপদ আশ্রয় মনে করে সবাই ঠাই করে নিয়েছে এখানে। কিন্তু ওরা কি জানে ওদের এই নিরাপদ আবাসস্থল;বেদখল হতে চলেছে? পাতা গাছটি জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে আর বলতে থাকে
-না না তোমরা কাইটো না আমার বন্ধুরে তোমরা কাইটো না। কেন এত নির্মম তোমরা? কেন বুঝতাছ না এই এই গাছটারে কাইটা ফালাইলে এই পক্ষীগুলান ওগো আশ্রয় হারাইবো। কই যাইবো ওরা? ওদের ও তো থাকোনের জায়গার দরকার আছে, যেমন দরকার আছে তোমাগোর।এই গাছটারে কাইটা ফালাইলে আমরা কোথাই পামু এমন সুশীতল ছায়, এমন সুনির্মল বাসাত। এই শহরের বাসাত তো শুধুই বিষাক্ত।কাইটো না তোমরা কাইটো না আমার বন্ধুরে। আইচ্ছা তোমাগো কি মন বলতে কিছুই নাই? দেহ ওরা ঠোঁট দিয়া একে অন্যরে কেমন কইরা আদর কইরা কইরা গা চুলকাইয়া দিতাছে। শোনো কি সোন্দর ওগের গান, তোমরা কি শুনবার পাইতাছ না ওগের গান? আহ পক্ষীর গানে মন ভইরা যায়। আর সেই গাছটারে তোমরা কাইটা ফালাইবা? না কাইটো না, কাইটো না।
পাপড়ী নামের একটি মেয়ে বলে-আইচ্ছা তোরা 'ক' তো দেই পাতার কি হইলো? পাতা ক্যান অমন কইরা ছুইটা গিয়ে ওই গাছ টারে জড়াইয়া ধরলো?
পরাগ নামের একটি ছেলে বলল- কি জানি, তোরা চল তো দেই ওর জন্য কি আমাগে খেলে থামে থাকবে?
হাসি নামের একটি মেয়ে বলে- হিহি হিহি হিহি এটা তো ওর ঘোড়া রোগ চল চল আমরা খেলি।
মরিয়ম নামে একটা মেয়ে বলে-আমার তো মনে হয় ওর গ্যারামের কথা মনে উঠেছে।নতুন আয়ছে তো। গ্যারাম যে কি সোন্দর ছিলো ক্যান যে আমগে মা বাবারা শহরে আসতি গেলো ভাললাগে না এই শহর। গ্যারামের পুশকনিতে কি সোন্দর সাঁতার কাইটে গা ধুতাম।মাঝে মাঝে তো গাঙ্গে যায়ে সাঁতার কাটতাম। বোশেক মাসে হুড়মুড় করে বাতাস হতো গ্যারামের ছাওয়াল মায়ে মিলে মানষের আম তলায় আম কুড়োতি যাতাম।বাতাসে টুপটাপ টুপটাপ করে আম পড়ত ।টকটক আম কাটে নুন ঝাল দিয়ে মাহায়ে সব্বাই মিলা কি মজা করে না খাতাম আহ কি শান্তি ।
রেদুয়ান নামে একটা ছেলে বলে- থাক থাক আর কস না। তোর কথা শুনে আমার জিবেয় পানি আসে যাচ্ছে।
পরাগ একটু রাগান্নিত গলায় বলে- বলি আমাগো বাপ মায় যদি শহরে না আইতো তো আমরা খাইতামডা কি? গেরামে কি আর কুনো কাম আছে যা তাই কইরা প্যাডের ক্ষুধা মিডাইতো?এই হানে আইসা মহজনের গ্যারেজ থোন রিস্কা ভাড়া লইয়া চালাইলে তাও তো দিনে কিছু টাকা আয় হয়।আমার মায় তো মানষের বাড়ি ছুটা ঝিয়ের কাম করে বড়লোকে্রা কত্ত মজার মজার খাওন রান্দে। মা তো রোজ ওগো ঝুটা খাবার লইয়াসে আমরা প্যাড ভইরা খাওনের পর অনেক সময়বাঁইচা যায় আর গেরামে...গেরামে হইলো সব পায়ে হাঁটা রাস্তা রিস্কা তো গেরামে চলেই না। দু'এটটা ভ্যান তাতেও মানুষ উঠতি চায় না। ঝিয়ের কাম তো দূরের কথা।আমরা তো সব পাতা কুড়ানীর দল শহরে বড় লোকেগের বাড়ির আশপাশ পিছন টুকায়ে তো কত্ত পেলাসটিকের শিশি বতল পাই এইডা সেইডা পাই সেই গুলান দোহানে বেইচ্ছা টাকা পাই। সেই টাহা দিয়ে যা খুশি তাই খাবার পারি বাপ বাপের কাছে মায়ের কাছে চাইয়া তো আর মারধর খাওন লাগেনা।
ফতেমা নামের একটি মেয়ে চোয়ালে আঙ্গুল ঠুকাতে ঠুকাতে বলে- কথাখান তুই ঠিকওই কইছস। এই যে আমি বেয়ান বেলায় আমগো বাড়ি ওয়ালার শিউলী তলায় ফুল কুড়াতি যাই। সেই ফুল দিয়ে মালা গাঁথে বিক্রি করি। মালা বেচে পেরায় ২০/২৫ টেকা পাই। আমি ৫ টেকা রাহে মায়েরে সব দিয়ে দেই। গেরাম হলি তো আর এইডা পারতাম না।
সাব্বির নামের একটি ছেলে ছুটতে ছুটতে এসে বলে- তোরা সব্বাই আইছস? আজ আমার আইতে বড্ড দেরি হইয়া গেলোরে। তোরা কিছু মনে লস নাই তো?
দীপক নামের একটি ছেলে বলে- আরে না আমরা কিছু মনে লই নাই। আমরা তো জানি তুই একখান চারকী করচ।
সাব্বির-এই তোরা কিয়ের মিটিং করতে ছিলি রে?
রাজু নামের একটি ছেলে বলে- আরে মিটিং না মিটিং না।
সাব্বির- মিটিং না তয়ে যে দেখলাম... শোন তোকের আজ একখান ভালা খবর দিমু।.
পরী নামের একটা মেয়ে বলে- শোন তুরা তো সবাই সব কথা কয়া ফালাইছির এই বার চল তো দেই পাতা কি অলো।
সাব্বির- পাতার আমার কি অলো?
পরাগ- কি আবার হইবে এক লগেই তো খেলতেছিলাম ওপেনি বায়াস্কোপ নাইন টেইন তেইস্কোপ। হঠাৎ উনি দৌড়াইয়া চইলা গেলো ওই পাকুড় গাছের কাছে।
সাব্বির- তোরা কি অরে মারছস?
সবাই এক সাথে বলে না।
সাব্বির- বকছস?
সবাই এক সাথে বলে না।
সাব্বির- তাইলে কি হইছে তোরা কি কেউ খোঁজ নিছস? \
সবাই এক সাথে বলে না।
সাব্বির- তোরা না সব আছত গর্ধপ। একটা মাইয়া মন খারাপ কইরা চইলা গেলো আর তোরা তার খোঁজ না নিয়া এই খানে গোল মিটিং করতাছস?
শিমুল নামের একটি ছেলে বলে- তাই তো। আমাগের ওর কাছে এতক্ষণ যা উচিৎ ছিলো। চল চল পাতার কাছে চল।
দল বেঁধে সব ছুটে যায় পাতার কাছে। পাতা তখনো কেঁদেই চলেছে। সাব্বির বলে এই পাতা তোর কি হইচ্ছে রে। তুই কানতাছস ক্যান?
পাতা চোখ মুছতে মুছতে বলে আমাগো বন্ধুরে কাইটা ফালাইবো সাব্বির ভাই।
সাব্বির- বন্ধুরে কাইটা ফালাইবো ক্যাডায় কাইটা ফালাইবো?
পাতা- আমি জানিনা। তয় আমি দেখতে পারতাছি কারা যেন ঘ্যাচং ঘ্যাচং কইরা মেশিংয়ের দিয়া...
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০২৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০৫/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast