www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রোযার প্রধান শিক্ষা তাকওয়া

মানুষ পৃথিবীতে মহান আল্লাহর খলিফা। জীবন ও জগতের যাবতীয় কাজ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করবে- এটাই মানবজীবনের মূল লক্ষ্য। কিন্তু এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে শয়তান, তার নিজের প্রবৃত্তি ও পার্থিব মোহ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সব বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে, সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আত্মার যে গুণটি তাকে দুর্বার গতি ও অক্ষত শক্তি জোগায় এর নাম হলো তাকওয়া। আর এই তাকওয়া হলো রোজার প্রধান শিক্ষা। আল্লাহ এ মর্মে ইরশাদ করেছেন, 'হে ইমানদাররা তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।' (সুরা বাকারা : ১৮৩ আয়াত)
তাকওয়া আরবি শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো ভয় করা, আত্মরক্ষা করা, বিরত থাকা ইত্যাদি। তাকওয়া শব্দটির বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ উলামা খোদাভীতি শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া বলতে মুমিন ব্যক্তির হৃদয়ের এমন অবস্থাকে বোঝায়, যা তাঁকে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত রাখে। অর্থাৎ তাকওয়া মুমিন ব্যক্তিকে তাঁর জীবনের প্রতিটি কাজে এ কথা ভাবতে বাধ্য করে, জীবনের ছোট-বড় সব কাজের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে হিসাব দিতে হবে। জীবনের কোনো ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর বিধান লঙ্ঘিত হলে, এর জন্য মৃত্যুর পরে ভীষণ শাস্তি ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ তাকওয়া সব সময় মুমিন ব্যক্তিকে আল্লাহর নির্দেশ পালনে ও নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করে। অন্যভাবে বললে, তাকওয়া হলো আত্মার এমন এক শক্তি, যা ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। মুত্তাকি ব্যক্তি হয় আত্মনিয়ন্ত্রিত। সে সব সময় প্রতিটি পদক্ষেপে নিজের আত্মার শাসনাধীন থাকে। যে কাজটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে সহায়ক হবে বলে তার আত্মা অনুমোদন দেয়, কেবল সে কাজটিই সে করতে পারে। আর যে কাজ দ্বারা মহান মাওলার অসন্তোষ নেমে আসবে, জাহান্নামের শাস্তির কারণ হবে, সে কাজ সে কিছুতেই করতে পারে না। তাই মুত্তাকি ব্যক্তির জন্য জাগতিক অনুশাসন আর বিধিবিধানের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। অতএব বলা যায়, জীবনের পবিত্রতা ও মুক্তি আর সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তির মূল চাবিকাঠি হলো তাকওয়া। কারণ ব্যক্তির আত্মা যদি কলুষিত হয়, তার অভ্যন্তরীণ শক্তি যদি তাকে কুপথে পরিচালিত করে, তাহলে কোনো অনুশাসনই তার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অশান্তিও কোনো উপায়েই বন্ধ করা যায় না।
মহান আল্লাহ মানুষের জীবন ও সমাজকে শান্তিপূর্ণ করতে, সাফল্য ও পূর্ণতার সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত করতে, মহামূল্যবান গুণ তাকওয়ার শক্তি অর্জন করতে রমজানের মাসব্যাপী রোজা পালন ফরজ করে দিয়েছেন। একজন রোজাদারের জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য-পানীয় ও যৌনতা হারাম। তাই সে রমজান মাসের দিনের বেলায় জীবনের সব থেকে হালাল খাদ্য ও পানীয় যদিও তা মদিনার সর্বোৎকৃষ্ট আজওয়া খেজুর বা জমজমের পানিই হোক না কেন এবং বিবাহিত স্ত্রীকেও বর্জন করে। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর ফরমান দ্বারা এসব হালাল বিষয়কে সাময়িকভাবে হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। এভাবে ৩০ দিন রোজার অনুশীলনের মাধ্যমে রোজাদার সত্যিকার মুমিন ভাবতে বাধ্য হয়, যে বিষয়গুলোকে মহান আল্লাহ সারাটি জীবনের জন্য হালাল করেছেন, যে বিষয়গুলোকে আল্লাহর রাসুল সাওয়াবের কারণ বলেছেন, সাময়িক নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলে যদি জাহান্নামের এত কঠিন শাস্তি অবধারিত হতে পারে, তাহলে যে বিষয়গুলো গোটা জীবনের জন্য হারাম, জীবনের কোনো ক্ষেত্রে কোনো সময়ে যা হালাল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, সে বিষয়ে যদি আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা হয়, তা হলে তার শাস্তিটা কত ভয়াবহ হতে পারে! অর্থাৎ এক মাস রোজা পালনের মাধ্যমে প্রত্যেক রোজাদার তাঁর গোটা জীবনে হালাল অর্জন ও হারাম বর্জনের নৈতিক শিক্ষা অর্জন করবে তথা তাকওয়া অর্জন করবে- এটাই রোজার আসল শিক্ষা।
তাকওয়া চারটি বর্ণের সমষ্টি ছোট্ট একটি শব্দ হলেও জড়বাদী, দুনিয়া পূজারির কাছে তা অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। যখন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রঙিন জীবনের হাতছানি দেখা যায়, যখন চরম দারিদ্র্য, জঠরজ্বালা আর চরম উপেক্ষার মধ্যে বিপুল বিত্ত-বৈভব আর নেতৃত্বের আহ্বান শোনা যায়, যখন প্রচণ্ড যৌন উত্তেজনার মধ্যে সুন্দরী ষোড়শীর যৌনাবেগ দুর্বার আকর্ষণ করে, তখন নীতির বিষয়টি ভাববার সাধ্য আছে কার? হ্যাঁ, একজন জড়বাদীর কাছে যে বিষয়টি সব থেকে কঠিন অসম্ভব, একজন খাঁটি ইমানদারের কাছে সেটাই সব থেকে সহজ এবং তাতেই তার তৃপ্তি। কারণ তাকওয়া তাকে শক্তি জোগায় অন্যায়কে এড়িয়ে চলার ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাকে সব সংকট উত্তরণের পথ বের করে দেন। আর তাকে এমনভাবে রিজিকের ব্যবস্থা করেন, যা সে ভাবতেও পারে না। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।' (সুরা আত্-ত্বালাক : ২ ও ৩ আয়াত)। একজন মহিলা সাহাবি ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার পর নিজেকে ইসলামী দণ্ড- প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুর জন্য এগিয়ে দিয়েছিলেন তাকওয়ার কারণেই। কারণ পৃথিবীর মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়ে জাহান্নামের শাস্তি অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক, ভয়াবহ ও চিরস্থায়ী। তবুক অভিযানে অংশগ্রহণ না করার কারণে রাসুল (সা.) প্রদত্ত শাস্তি সামাজিক বয়কট চলাকালে হজরত কাব ইবনে সালেকের পক্ষে গায়সান গোত্রের নেতৃত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হয়েছিল তাকওয়ার কারণে। পূর্ণ যৌবনে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর পক্ষে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী-যুবতী জুলেখার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কারাবরণ করা সম্ভব হয়েছিল তাকওয়ার কারণে।
রোজার আসল শিক্ষা হলো তাকওয়া। আর তাকওয়ার সার কথা হলো ব্যক্তির ওপর তার আত্মার নিয়ন্ত্রণ। রমজানের একটি মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রতিটি রোজাদারের অন্তর ভরে উঠুক তাকওয়ার গুণে, দেশে-দেশে গড়ে উঠুক পাপাচারমুক্ত সুশৃঙ্খল-শান্তিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮৪৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৩/০৬/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast