www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পটলার অপারেশন বুম বুম - শেষ পর্


গভীর রাত হলেও পটলার হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছিল না,এ তার চেনা রাস্তা। সন্দেহ বেশ কিছুদিন ধরেই হচ্ছিলো। হুথুম প্যাঁচার informations-এ তার সন্দেহ দূর হয়ে গেল। জঙ্গলে ঢুকতেই গাছগুল ফিস ফাস করে কিছু কথা জানালো। শাল গাছ যেহেতু লম্বা গোছের তাই তার সুবিধা বেশী।সে পটলার ভালো বন্ধু,মাথা নাড়িয়ে ইশারা করে দিলো কোন দিকে যেতে হবে জঙ্গলের। কিছুটা যেতেই আম গাছ বলল, “ পটলা বন্ধু!এসেছ। আমার কোলে ওঠ। দ্যাখো একটু সাবধানে ওঠ”।
পটলা দেখল,তার গা দিয়ে রক্ত পড়ছে, ডাল পালা গুলো কাটা- চোখ ছল ছল করে উঠলো।
আম গাছে চাপলো ধীরে সুস্থে। নীচে শেয়াল তার দলবল নিয়ে হাজির। সাপগুলো আজ রান্না করবে না,তারাও এসে গেছে। হুথুম প্যাঁচা সেগুন গাছের মগডালে বসে observation চালাচ্ছে। গাছে উঠে দাঁড়াতেই পটলার দু’গাল বেয়ে জল; তার প্রিয় বন্ধু পেয়ারা গাছকে ফালি করে কেটে স্তূপ করে রাখা। পাশেই আগুন জ্বালিয়েছে কিছু লোক। গন গনে আগুণে জ্বলছে কয়েকটা খরগোশ, দুষ্টু লোকগুলো বিচ্ছিরি ভাবে হাসচ্ছে।পাশেই একটা গাদা বন্ধুক,হাসতে হাসতে নিজিদের মধ্যে টুকটাক কি যেন বলাবলি করছে।
“না, কাদলে চলবে না।এরাই দিনের পর দিন আমার বন্ধুদের লুকিয়ে কেটে-মেরে নিয়ে যাচ্ছে। টিয়া-ময়নাদের অনেকদিন পাত্তা মেলে না এদেরই জন্য – আজ এসপার কি ওসপার!” – তিরতির করে কেঁপে উঠলো পটলার ঠোঁট দুটো, চোখ দপ করে জ্বলে ওঠে; চোয়াল শক্ত করে সে নীচে নেমে দাঁড়াতেই জঙ্গলের বন্ধুরা next কি plan হবে তার জন্য পটলাকে ঘিরে ধরলো।
কি আশ্চর্য! শেয়ালগুলো তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এসেছে! পটলা তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে গম্ভীর গলায় বলল-“ আজ হবে আমাদের ‘Operation BOOM BOOM’, তোরা সব তৈরী তো??”

“আঃ, দারুন টেস্ট! নরম তুলতুলে মাংস- পেট ভরে গেল”, হাসতে হাসতে প্রথম দুষ্টু লোকটা বলল।
“কাল সকালে আর কিছু পাখি ধরতে হবে boss; সাপের ছালের চাহিদা বাজারে বেশ ভালো”- চাপা খনখনে গলায় আর এক বদমাশ লোক বলে ওঠে।
আগুন্টা একটু নিভুনিভু হতেই কিছু পেয়ারা-আম ডাল গুঁজে দিলো আরেক জন।
“নে চল রে, একটু শুয়ে পড়ি,সকাল সকাল উঠতে হবে”, ওদের দলের leader বলে উঠলো।
কিছুক্ষণ পরেই নাক ডাকা। নিস্তব্ধ জঙ্গল। ঝি ঝি পোকা, ব্যাঙ, বাকি সব পোকামাকড় সবাই আজ চুপচাপ। আজ হবে Operation BOOM BOOM। সব এক সাথে চলে এসেছে এদের ধরতে।
পটলার নির্দেশেই হামলা হবে।নাকের ডাক ক্রমশ বাড়ছে, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।এইবার সময়-
সাপগুলো ধীরে ধীরে ওই দুষ্টু লকগুলোর দিকে এগোতে লাগলো। পটলা স্যার বলে দিয়েছে, “খবরদার! ওদের মারবি না।অদের জ্যান্ত রেখে পুলিশ uncle- দের হাতে ধরিয়ে দেব”।
আস্তে আস্তে সাপগুলো লোকগুলোর পা-দুটোকে আচ্ছা করে জড়িয়ে ধরল, যাতে পা না ছাড়াতে পারে।
দ্বিতীয় দল, ঝি ঝি পোকা,ব্যাঙ,পোকামাকড় । ধীরে ধীরে উড়ে উড়ে, লাফাতে লাফাতে লোকগুলোর কাছে এগিয়ে গেল।
ব্যাঙ বাবাজীরা একলাফে লোকগুলোর বুকে বসে পড়ে। পোকারা সোঁ করে হাঁ করা মুখে-নাকে-কানে চালাল আক্রমন। লাল পিঁপড়ে তৈরীই ছিল। ব্যাস আর যায় কোথায়! যেই না মুখে-নাকে-কানে ঢোকা ওমনি দুষ্টু লোকগুলো, “বাবাগো,মাগো, গেলাম গো” বলে চীৎকার জুড়ে দিলো আর তিড়িং বিড়িং করে গড়াগড়ি দিতে লাগলো। লাল পিঁপড়েদের কুটুস কুটুস কামড়ানি। বদমাশগুলোর যা অবস্থা!! পাগুলো তো বেঁধেই রেখেছে সাপেরা।
সারা জঙ্গল জুড়ে শেয়ালেরা-পাখিরা বিচিত্র ভাবে ডাকাডাকি জুড়ে দিলো। লোকগুলোর অবস্থা কাহিল।

কখন যে ভোর পার হয়ে সকাল হয়ে গেছে কারোরই খেয়াল নেই। পটলা বীর বিক্রমে লোকগুলোর জামার কলার চেপে আছে; সঙ্গে যে দড়ি এনেছিল তা দিয়ে আচ্ছা করে সবকটাকে বেঁধে ফেলল।
এদিকে পটলার খবর না পেয়ে পুলিশ তল্লাশি মোটামুটি unofficially চালাচ্ছিল।তার উপর জঙ্গল থেকে এই সকালে এমন হট্টগোল শুনে O.C সাহেব কিছু দলবল নিয়ে সেই দিকেই রওনা দিলেন।
গোবিন্দবাবুর চোখ ছানাবড়া! পটলা করেছে কি? লোকগুলোকে দেখেই তিনি বুঝে গেছেন এরা চোরাশিকারীর দল। ওদের ব্যাগে নানা পশুর ছাল-হাড় পাওয়া গেল।
পুলিশের গাড়িতে পটলার মা-বাবাও জোর করে এসেছিলেন। গোবিন্দবাবু পটলার পিঠ চাপড়ে বললেন,” সাবাস young camp, এই তো চাই”।
মা-বাবার চোখে চিকচিক করছে জল। কিন্তু, পটলার মুখে হাল্কা চাপা হাসি। বাড়ি যেতে যেতে তার বন্ধুদের অজানা ভাষায়-ইশারায় বলল, “ আমি আছি। চিন্তা কি? আবার আসব খেলতে”।।
( সমাপ্ত )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৫৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০৬/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast