www.tarunyo.com

ফেসবুক প্রজন্মের একজন মানুষ

রিকশায় বসে আছি। সাথে আরিফ।
গন্তব্য স্টেডিয়াম। পরোটা-কাবাব খাবার
দাওয়াত পেয়েছি। এই
শীতে ব্যাপারটা জমবে ভাল। মিনিট
সাতেকের দূরত্বে বসে আছি।
এতক্ষনে পোঁছে যেতাম। জ্যামে পড়েছি। জ্যামে না পড়লেই ভাল হত । দৃশ্যটা দেখতে হত
না। বামপাশে ফুটপাত। দৃশ্যটা ফুটপাতের। বড় বড়
চোখ করে তাকিয়ে ছিলাম প্রথমে। এবার
মাথাটা ঘুরিয়ে নেই ডানপাশে। ডানপাশের
নজর আটকে রেখেছে টেম্পুর হলুদ ছাদ। দেখার
কিছু নাই। সামনে আরেকটা রিকশা।
পেছনে লেখা, আপনার ছেলেকে মাদ্রাসায় পাঠান। কথাটা অভিনব। এই প্রথম দেখলাম।
চোখটা আবার বামদিকে চলে যাচ্ছে। এবার
ফুটপাতটা দেখা গেল না। মোটর সাইকেল
এসে দাঁড়িয়েছে। আরিফ ঘন ঘন ফুটপাতের
দিকে তাকায়। জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে ? আমি উত্তর দেই না। মন দিয়ে মোটর
সাইকেলের আরোহীদের দেখি। চালকের
মাথার হেলমেটটা চমৎকার। লেদার
জ্যাকেট , নীল জিন্স আর কালো কেডস। স্মার্ট
মানুষ। মোবাইলটাও স্মার্ট। চমৎকার
ছবি তোলা যায়। ফুটপাতের দৃশ্যটা ঝটপট করে তুলে ফেলেছেন। এত কাছ থেকে স্পষ্ট
বোঝা যায় ছবিটা এখন ফেসবুকে যুক্ত হচ্ছে।
ফেসবুকে ছবিটা যুক্ত করে নিজের কষ্ট প্রকাশ
করছেন। ফুটপাত দিয়ে যারা হেঁটে যায় , তাদের কেউ
কেউ থমকে দাঁড়ায়।
কি করবে বুঝতে না পেরে হাঁটা দেয়।
বাকীরা চোখ সরিয়ে নিয়ে যেন কিছুই না এমন
ভাব করে হেঁটে যায়। হেলমেট খুলে চালকের
গালে চড় বসিয়ে দেবার ইচ্ছাটা অনেক কষ্টে আটকে রাখলাম। শালা ! খালি ফেসবুকেই
কাঁদবি, বাস্তবে কিছু করবি না। পাশের টেম্পুটা এগিয়ে গেছে। এখন
দাঁড়িয়ে পড়েছে রিকশা। ওতে বসা কপোত-
কপোতী। আলাপের বিষয় শেরওয়ানী।
মুকুটে শেরওয়ানীর ভাড়া তিন হাজার।
উৎসবে ভাড়া নেয় পাঁচ। একদিনের ব্যবহারের
জন্য ভাড়া করলেই যথেষ্ট। তোমার কিনতে হবে না। উত্তরের শীতল বাতাসটা শরীরে কাঁপুনি তুলে।
জ্যাকেটটা চেপে ধরি শরীরে। এমন ঠান্ডায়
গ্রীল ভাল লাগবে না। শিক কাবাব
খেতে হবে। গরম পরোটা আর শিক। ভাবতেই
জিভে জল এসে গেল। একটা স্ট্যাটাস
দিলে মন্দ হয় না। মোবাইল টিপতে থাকলাম। জ্যাম ছুটেছে। মোটরসাইকেল এগিয়ে যায়।
আমাদের রিকশাও এগিয়ে যায়। শেষবারের মত
ফুটপাতে তাকাই। এতগুলো মানুষ গেল। দেখল।
অথচ এমন ঠান্ডায় ফুটপাতের
জমিনে ন্যাংটো হয়ে শুয়ে থাকা ছেলেটার
জন্য কেউ কিছু করল না ! শালারা সব অমানুষ। একজন তো আবার ফেসবুকে ছবি সাপ্লাই
দিয়েছে। নিশ্চয়ই এতক্ষনে ছবিটা হিট।
আচ্ছা, ছেলেটাকে তো নড়তে দেখি নাই।
মরেছে না বেঁচে আছে ? আচ্ছা পাগল না তো?
নাকি ভং ধরেছে ? এ প্রজন্মের আবেগ, ভালবাসা , রাগ , দুঃখ ,
মমতা সব ফেসবুকে। এই ফেসবুক প্রজন্ম
দিয়ে কিচ্ছু হবে না। চোখটা মোবাইলের
পর্দায় চলে যায়। হাশেম আমার
স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেছে। কিরে শালা!
গ্রিল পরোটা কই খাচ্ছিস? আমি আইতাছি! আমি হাসি। কমেন্টের উত্তরে কমেন্ট
লেখতে থাকি। আমিও তো মানুষ। ফেসবুক
প্রজন্মের একজন মানুষ।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৫৯৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০১/২০১৪

 
Quantcast