www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভয়ার্ত যাত্রা

======= ভয়ার্ত যাত্রা=======

সবে সন্ধ্যা রাত। পশ্চিম আকাশের রক্তিম আভা প্রায় শেষ। আমাকে পারি দিতে হবে ভয়াল কলাজ্বারা বিল। বিলের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তর প্রান্তে। খুবই ক্ষীণ চাঁদের আলো। সাথে কোন আলোর ব্যবস্থা নেই। ভয়ে ভয়ে এক পা দু পা করে যাত্রা শুরু করলাম।

ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটছি। মাঝে মাঝে আইলগুলো কাটা। কাদায় একাকার। হাঁটার গতি অনেকটাই কমিয়ে দিচ্ছে। আবার সাপের ভয়। সবে মাত্র পাকা ধান উঠেছে। ইঁদুরেরা গর্তে ধান জমা করেছে। এ ইঁদুর খাওয়ার জন্যে আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে প্রচুর সাপ বিলে নেমেছে। অতএব সব দিক খেয়াল রেখে হাঁটতে হচ্ছে। দূরে কিসের যেন অস্পষ্ট কেউকেউ শব্দ পাচ্ছি। যথাসম্ভব শব্দের এলাকাটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কাছাকাছি আসতেই দেখলাম কয়েকটি শেয়াল কিছু একটা মরা খাচ্ছে। আরো একটা নতুন ভয় যোগ হল। আমাকে একা পেয়ে শেয়ালগুলো আক্রমণ করতে পারে। ওগুলোর চরিত্র হায়ানার চরিত্রে রূপ নিতে পারে। এদিক সেদিক খোঁজিখোঁজি করে আত্মরক্ষার্থে একটা লাঠি হাতে নিয়ে নিলাম। ভাগ্য ভাল ওদের দৃষ্টির বাইরে দিয়েই পাশ কাটিয়ে চলে এলাম।

এসব করতে করতে দিক ভুলে গেছি। কলাজ্বারা ঝোপের কোন অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি না। মনে হয় চতুর্দিকের আকাশ দিগন্তে মিশে গেছে। আমি কোন এক জনশুন্য গাছপালহীন দ্বীপে একা। দূরে শেয়ালগুলোর কোলাহল একটু আধটু শোনা যাচ্ছে। এখন মনে হয় শেয়ালগুলোই আমাকে কিছুটা ভরসা দিচ্ছে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে দিক নির্ণয়ের চেষ্টা করলাম। আকাশ আধো আধো মেঘলা। ধ্রুব তারার অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না। এবার প্রকৃত ভয় আমার মনে দানা বাঁধল। কোন দিকে যাব, বুঝে উঠতে পারছি না। অনুমানের ভিত্তিতে এক দিকে হাঁটা আরম্ভ করলাম। কিছুক্ষণ পরে সামনে এক পুকুর। এ কোথায় আসলাম? বোঝলাম যে আমাকে দিক ভুলায় পেয়েছে।

পুকুর পাড় ধরে একটু হাঁটার পর বোধগম্য হল যে, আমি বিলের পূর্ব প্রান্তে চলে এসেছি। এবার দিক ঠিক করে – লক্ষীপুর হাতের ডানে এবং কলাজ্বারা ঝোপ বায়ে রেখে রওয়ানা দিলাম।

চতুর্দিক নিস্তবদ্ধ। ভয়ে ভয়ে হাঁটছি। সামনেই কলাজ্বারার সেই কাল বিড়াল খ্যাত হিজল গাছ। আবার গা ছম ছম করে উঠল। সবগুলো লোম দাঁড়িয়ে গেছে। ভরসা শুধু সেই শেয়াল তাড়ানো লাঠিটা। ভূত প্রেতের সাথে লাঠি দিয়ে মোকাবেলা করা যায় কি না, চিন্তায় আছি। ঝোপের ভিতর গাছের ডালপালা নড়ছে। কি রকম যেন ভয়ার্ত শব্দ হচ্ছে। ভয়ে ভয়ে ভাল করে তাকালাম। দেখলাম বাদুর জাতিয় কি যেন উড়ে যাচ্ছে। কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। এবার খাল পেরিয়ে রাস্তায় উঠে গেছি। ভয়কে পেছনে ফেলে হাঁটছি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার পেছনে কে যেন আসছে। দ্রুত পা চালাচ্ছি। এই এসে গেছি বলে। অবশেষে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। এসে গেছি বাড়ির ঘাটায়। এক ভয়ার্ত যাত্রা শেষ করলাম। হাত মুখ ধুয়ে বাড়ি ঢুকলাম।

কিন্তু তারপরও শেষ হয় নি। সারা রাত স্বপ্নে কলাজ্বারার সেই প্রেতাত্মা আমাকে তাড়া করল। সকালে ফ্রেশ হয়ে যেন প্রকৃতপক্ষে আমার এ যাত্রা শেষ হল।

_____কবির সরদার (১৮/১১/২০১৭))
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৬৭০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/১২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast