www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৪৪

আস্তিক অথবা নাস্তিক
-------------------

আপনি আস্তিক আমি নাস্তিক। অর্থাৎ আপনি ঈশ্বর/আল্লা/গড বিশ্বাস করেন আমি বিশ্বাস করি না। তার মানে আপনি বিপদে পড়লে কিংবা নিত্যনৈমিত্তভাবে আপনি ঈশ্বর/আল্লা/গডের স্মরণাপন্ন হন। আমি স্মরণাপন্ন হই না।
আপনি এই স্মরণাপন্ন অবস্থানে কোন না কোন রাস্তা খুঁজে পান। যাতে আপনার দৃষ্টি সাপেক্ষে জীবন যাপনে ব্রতী হতে পারেন। আমিও স্মরণাপন্ন হই তবে তা নিজের কাছে। কারণ আমার আর অন্য কোন অবলম্বন নাই।
আপনি বিপদে পড়লে বা বিপথে গেলে আপনি জানেন আপনার বিশ্বাসে ঈশ্বর/আল্লা/গড আপনাকে বিপদ থেকে বা বিপথে যাওয়া থেকে আপনাকে উদ্ধার করবেন। তাই আপনি নিজের ইচ্ছায় অথবা মনের পোষণ করা বিশ্বাসে বিপদে পড়া বা বিপথে যাওয়া নিয়ে বেশি ভাববেন না। কেননা বিপদে পড়লে বা বিপথে গেলেও খুব একটা অসুবিধা নেই।
কিন্তু আমার নিজের কাছে ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার রাস্তা নেই। তাই নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতেই হবে। এবং বিপদে যাতে না পড়ি সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর বিপথে যাওয়ার আগে তো হাজার বার ভাবতে হবে। কেননা আমাকে তো আমাকেই উদ্ধার করতে হবে।
এই বিপদে পড়া যে কোন বিপথে যাওয়া রাস্তা থেকেই শুরু হয়। সরল জীবন যাপনের বিষয়ে সবাই জানেন। তবুও এই সরলের সিঁধ কেটে আমাদের জীবন বিপথে বা নিষিদ্ধ পথে পা বাড়ায়। সিগারেট, বিড়ি, মদ, ড্রাগস, পরকীয়া, অবৈধ, খাদ্য অশুদ্ধতা, খুন জখম, মারামারি, কাড়াকাড়ি ইত্যাদি অসংলগ্ন জীবন যাপন বিপথে যাওয়ার দিক চিহ্ন। আর তার জন্য বিপদ আসে আসছে। যে যত বেশি এই বিপথে বা নিষিদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন ততই সে বিপদে পড়েছে। আপাত দৃষ্টিতে দোষ করেও ছাড়া পেল, মন্দ কাজে মর্যাদা পেল, পাপ বলে যা ভাবছি তাকেই পুণ্য ভেবে নাচানাচি এসব তো আছে। তা বলে জীবন যুদ্ধে তিনি জয়ী তাও বলা যায় না। সেই জীবনে তারও পরে আরো অনেক অবস্থান আছে যা যুগের হিসেবে পরাজয় হিসেবে লিখিত।
আপনার বিশ্বাসে ঈশ্বর/আল্লা/গডের স্মরণাপন্ন হলে বিপথে যাওয়ার জন্য যে বিপদ তার থেকে আপনি সহজেই উদ্ধার পাবেন। তাই হয়তো আপাত দৃষ্টির হিসেব বদলে দিয়ে সহজে আপনি বিপথের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন। তত সহজে আমি পারব না। কারণ বিপদ এলে আপনার ঈশ্বর/আল্লা/গড আছে। কিন্তু আমার যে কেবল আমিই আছি। তাই আমি চাইবে বিপথ এড়িয়ে যতটা সম্ভব সঠিক পথেই এগিয়ে যেতে।
আপনি ভাল থাকেন যেমন রেখেছেন ভেবে আর আমি ভাল থাকি যেমন রাখছি নিজেকে। আপনার ভাল না থাকাকে আপনি স্মরণাপন্ন হিসেব বিবেচনায় বিবেচনা করেন। আমি ভাল না থাকাকে নিজের অবস্থানের ভারসাম্যে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।
আপনার বিশ্বাসে আপনি যা করেন সবই ঈশ্বর/আল্লা/গড করান। তাই আপনার কাজের দায়ভার আপনার নয়। ভাল মন্দ দোষ গুণ পাপ পুণ্য নিয়ে আপনি খুব একটা ভাবেন না। কাজের লক্ষ্যে এগিয়ে যান। কাজের প্রেক্ষিতে আপনার কোন ভয় নেই। আপনার বিশ্বাসের ফলাফল তার নিজস্ব দিশায় ঈশ্বর/আল্লা/গডের আলোকে প্রতিফলিত হবে। তাই যে কোন রকম কাজে আপনার বেশি কিছু ভাবার প্রয়োজন নেই। স্মরণাপন্ন অবস্থান আপনাকে মুক্তির আলো দেখাবে।
কিন্তু আমার কাজের সম্পূর্ণ দায়ভার আমার। তাই কাজ করার আগে ভাল মন্দ দোষ গুণ পাপ পুণ্য বিবেচনা করে আমাকে কাজ করতে হয়। মন্দকে আমি ভয় পাই, দোষকে ভয় পাই, পাপকে আমি ভয় পাই। কেন না এসব আসে বিপথে যাওয়ার ফলে। এখানে আমি কাওকে খুন করলে ওখানে আমার কেউ না কেউ বা আমি এর গ্রাসে পড়বই। একটাকা ঘুষ নিলে একশ পরিশোধ করতে হবে। একে ওকে ছোট করে গালাগাল মারামারি করলে আমাকে যে একদিন তা শুনতে হবে, মার খেতে হবে।
ফলাফলের দায়ভার সম্পূর্ণ আমার। প্রশংসাকে আমি যত সহজে গায় না মেখে থাকতে পারি ঠিক ততটাই মন্দ দোষ পাপ আমাকে কুরে কুরে খায়। কেন না আমি যে কারো স্মরণাপন্ন হই না।
মন্দ দোষ পাপ ইত্যাদিতে আমার মধ্যে একটা অপরাধবোধ তৈরি হয়। এই অপরাধবোধ আমাকে আর কোন অপরাধ করা থেকে রক্ষা করবে কিংবা ভাবাবে ভাবায়। মানুষের জীবনে এই অপরাধবোধ সম্পর্কে ভাবনা কিন্তু অনেক পাওয়া।
কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে অপরাধবোধ নিয়ে আপনি খুব একটা ভাবিত হবেন না। কেন না জীবনের ভয় ভ্রান্তি নিরাশা ইত্যাদি থেকে আলোয় ফিরে আসার জন্য আপনি ঈশ্বর/আল্লা/গডের স্মরণাপন্ন হন।
আপনি এবং আমি সে আস্তিক বা নাস্তিক যাই হই না কেন দুজনকেই চলতে হয়। এগিয়ে যেতে হয়। এই চলা বা এগিয়ে যাওয়ার সময় আপনিও একা আমিও একা। কাজও করতে হয় নিজস্ব বুদ্ধিমত্তায়। আপনি ঈশ্বর/আল্লা/গডকে স্মরণ করে কাজ শুরু করেন আর আমি শুধু আমাকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করে। উভয়ক্ষেত্রে ঘুরে ফিরে শুধু আমিই কাজ করে।
তার মানে স্মরণ লক্ষ্যে আমি কি কেউ না? শুধুই ঈশ্বর/আল্লা/গড। আমি কি সত্যিই নিমিত্তমাত্র। নিজের অভ্যাসে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা কি কিছুই না। তাতে কি কোন শক্তি নেই? মর্যাদায় আত্ম কি কিছুই না? সে কি শূন্য কোন অবলম্বন?
আমার এই আমিকে জাগ্রত করে রাখা, মর্যাদা সম্পন্ন করে রাখা, নিজের লড়াই নিজের কাছে বার বার হিসেবের মধ্যে ধরে রাখা এও কি চাট্টিখানি কথা?
আমি শুধু আপনার মত সকালে উঠে ফুল ফল ধূপ ধুনো নারকেল মোমবাতি প্রদীপ প্রসাদ উপাচার মন্ত্র ধ্বনি উপাসনায় দেখানো কিছু করি না। আপনি যখন কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে বা আরো আপনার আকাঙক্ষার রাস্তা খুঁজে পেতে ঈশ্বর/আল্লা/গডের স্মরণাপন্ন হন।
আমি তখন কোন রাস্তা না পেলে নিজেকে নিজে এগিয়ে নিয়ে যাই। নিজের মধ্যে নিজের কোন এক শক্তি উৎসের দিকে। আপনার কাছে ঈশ্বর/আল্লা/গড। আমার কাছে সে রকম কিছু তো অবশ্যই। যার জোরে আমিও আপনার মত এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের ক্ষুদ্রতম কোন একজন।
আমার জন্য কোথাও কোন উপাসনালয় নেই। উপাসনার আচার আচরণ সংস্কার সৎকার নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই।
কোন শুভ কাজ আপনি ঈশ্বর/আল্লা/গডের নাম স্মরণ করে বা উপাসনালয়ে আচার বিচারে শুরু করেন। আর আমি আমার হিসেবে নিজেই নিজের বুক ঠুকে শুরু করে দিই। সাফল্য আমার ক্ষেত্রেও আসে। সব সময় যে পরাজয়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ তা তো নয়। যেমন আপনার ক্ষেত্রেও সাফল্য অথবা পরাজয় আসেই।
আমি পরাজয় মেনে নিয়ে আবার নতুন উদ্যমে নিজেকে নিজে প্রস্তুত করি। কর্মের বিস্তারে নিজের ভূমিকা যাচাই করি। আর আপনি আরো ঈশ্বর/আল্লা/গডের কাছাকাছি হয়ে পড়েন। স্মরণ আপনাকে চেপে ধরে। আপনার মধ্যে আসা এই ভক্তিভাব জীবনের অন্যতম জীবন লক্ষণ। আমিও এই লক্ষণের দিশারী হতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। তা শুধু নিজের কাছে নিজের আত্মবিশ্লেষণে।
সব পাপ মুক্ত হওয়ার জন্য, জীবনের শুদ্ধিকরণের জন্য, আরো সুন্দরতম জীবন ভাবনার জন্য মন্দিরে/মসজিদে/গীর্জায় কি যেতেই হবে? যেমন আপনি যান। ঘরেও স্থাপন করেন।
কিন্তু আমি নিজেকে বরাবর জাগ্রত করি। নিজেকে শুদ্ধিকরণের চেষ্টা করি। পাপবোধ, অপরাধবোধ যদি এসেই যায় তাহলে আমি তার থেকে বিরত থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি। আমি জানি এই যে পাপবোধ, অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পুণ্য সাগর স্নানে, পবিত্র নদীর জলে বা ঈশ্বর পুকুরের ডুব সাঁতারে নেই। তা আছে শুধু নিজস্ব চেতনায়।
আপনি ঈশ্বর/আল্লা/গডে সমর্পিত হয়ে সেই চেতনা আনার চেষ্টা করেন। নিজের চেতনা জাগ্রত করার চেষ্টা করেন। আর আমি নিজেকে নিজের অবস্থানে সেই চেতনায় অবস্থান করি।
তাহলে কোন অবস্থান সকলের কাম্য। আমার নাকি আপনার?
শুনেছি, আগে ডাকাতরা কালী মায়ের পূজো করে ডাকাতি করতে যেত। তারা জানত ডাকাতি করা অপরাধ বা পাপ। তাই তারা মায়ের পূজো দিয়ে শুদ্ধিকরণ করে হারে রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ত। তারা কেউ নাস্তিক ছিল কি না আমার জানা নেই।
তবে আমি আপনি সে নাস্তিক হই আর আস্তিক হই, আমরা প্রত্যেকে কোন না কোন মতাদর্শে প্রভাবিত। সে আমি আপনি চাই বা না চাই। যেমন দীপঙ্কর বললে হিন্দু বোঝায়, আব্বাস বললে মুসলিম, মাইকেল বললে খ্রীশ্চান ইত্যাদি। জন্মের পরে পরে এই ধাব্বা বা চিহ্ন আমাদের মধ্যে থেকে যায়। বর্তমানে কিছু নাম আসছে যেখানে শুধু নাম শুনে বোঝা মুশকিল তিনি কোন সম্প্রদায়। কিন্তু তার সম্বন্ধে পদবীসহ আর একটু জানলে অবশ্যই তা জানা যায়।
কিন্তু এই মতাদর্শ থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল। যদিও মতাদর্শের অবলম্বনে থেকেও অনেকে নাস্তিক। অর্থাৎ ঈশ্বর/আল্লা/গডে সে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। বেরিয়ে আসা যায় না। চাইলেও বেরিয়ে আসতে পারে না। তাহলে হিসেব করে দেখলে দেখা যায় যারা নাস্তিক তারাও কিন্তু সম্প্রদায়ভুক্ত। তার মানে পৃথিবীজুড়ে এমনভাবে ধর্মীয় বাতাবরণ আছে যে কেউ তার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। কেউ নাস্তিকবাদী নেই। যেটুকু আছে তাহল হিন্দু ধর্মীয় কিন্তু ধর্ম বা ঈশ্বর অস্তিত্বে বিশ্বাস নেই। তসলিমা মুসলীম ধর্মের সঙ্গে যুক্ত কিন্তু উনি ইসলাম ধর্মের অস্তিত্ব মানেন না। এ রকম অনেকেই খ্রীষ্টান হয়ে সেই ধর্ম বা গডে বিশ্বাসী নন।
অর্থাৎ ধর্মীয় বাতাবরণ থেকে কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নাস্তিক নয়। নাস্তিক কথাটার মধ্যে অস্তিত্ব বর্তমান।
ঈশ্বর/আল্লা/গডে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এই ধর্ম ভাবনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদিও প্রতিটি ধর্ম বিশ্বাসে মানবতার উল্লেখ্য আছে। ধর্মাচরন সেই বিশ্বাসের জোরে প্রতিষ্ঠিত। তাই প্রত্যেকে নিজেকে জাগ্রত করতে, সাত্ত্বিক জীবন যাপনের লক্ষ্যে এই ধর্মাচরন করে। এই ধর্মাচরন বিশ্বাসী হল আস্তিক(অস্তি+ক) এবং অবিশ্বাসী হল নাস্তিক (ন+অস্তি+ক)।
হিন্দু /মুসলিম/খ্রীষ্টান এবং সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন মতাবলম্বী সম্প্রদায় যদি থাকতে পারে তাহলে নাস্তিক থাকতেই পারে। তার মানে বিভিন্ন মতভেদে আপনি যদি ঈশ্বর/আল্লা/গডে বিশ্বাসী হয়ে যে যার মত সিদ্ধিলাভ করতে পারেন তাহলে নাস্তিক তার নাস্তিক মতবাদে নিশ্চয় সিদ্ধিলাভ পাবেই পাবে।
তার মানে হল নাস্তিকবাদেও ঈশ্বর/আল্লা/গড না থাকলেও কিছু একটা শক্তি আছে। যার দ্বারা নাস্তিকবাদেও জীবনের পথ পাওয়া যায়। জীবনকে চেনা যায়। পার্থিব অস্তিত্ববিহীন এই ভাবনায় আমার আপনার দুজনের ক্ষেত্রে পথেই পথ আছে। থাকবেই।
তাহলে কোন পথ আপনি বেছে নেবেন। আমার পথে আমি তো আছি। কেন না জীবনের যে কোন সীমানায় আমি বাদ দিয়ে কিছু নয়। আপনিও সেই পথে আসেন আছেন অথবা ছিলেন। শুধু ঈশ্বর/আল্লা/গডে বিশ্বাসী হয়ে। উপাসনালয় গড়ে তাতে নিত্যনৈমিত্তিক আচার আচরণের মাধ্যমে।
আমি নাস্তিক। তাই আমার মনে হয় হ্যাঁ/না দুটো পথই সঠিক। সিদ্ধিলাভ হবে যে যার গরিমায়।
আবার এই সব মতাদর্শে আমিও জড়িত। তাই সাহিত্য মর্যাদায় গীতা/কোরান/বাইবেল পাঠ আমাকেও করতে হয়। আমিও পাঠ করি। জীবন চেনার অতি মূল্যবান অবস্থান গীতা/কোরান/বাইবেল এ আছে। এই তথ্যাবলীর অজস্র বিরূপ বিকৃত গোঁজামিল অবস্থান ধর্ম ধ্বজাধারীদের মধ্যে দেখা যায়।
কেন না কিছু জনের মন্দকাজের উদ্বার করে দেওয়ার পাশা খেলা চলে। এই ঈশ্বর/আল্লা/গডের নাম করে। মন্দ ভাবনা, মন্দ কাজ, মন্দ আশা ইত্যাদি বাড়বাড়ন্তে ঈশ্বর/আল্লা/গডের উপাসনালয় দিন দিন বাড়ছে না তো?
আবার আপনি আস্তিক আপনাকে তাই প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে কিছু কিছু নিয়ম সংস্কার মেনে চলতে হয়। তাও উপাসনালয় চালানো ধর্মধারী শ্রেষ্ঠ গুণী মানুষের বিধান অনুযায়ী। কেন না আপনি বা আপনাদের পক্ষে আস্তিক সম্বলিত সমস্ত মতাদর্শ বা বিধান জানা সম্ভব নয়। তাই যাঁরা জানেন তাদের বিধান অনুযায়ী চলতে হয়। সেখানে কিছু গোঁজামিল, উদ্ভট, দাবিয়ে রাখার ভাবনা থাকে।
তার মানে আপনি আস্তিক হলেও স্বয়ং সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বর/আল্লা/গডের স্মরণাপন্ন হয়ে কিছু করতে পারবেন না। আপনার ভক্তির উপাচার উপাসনালয় পরিচালিত করা ধর্মাচারীদের সাহয্যে আপনি আস্তিক হিসেবে পরিগণিত হবেন। না হলে নয়। আপনি আস্তিক থেকেও যদি ধর্মগত বিধান লঙ্ঘণ করেন তাহলে আপনি আস্তিক থেকে বঞ্চিত তো হবেন। সেই সাথে শুদ্ধিকরণের জন্য আপনার উপর অন্য বিধান বা শাস্তি নেমে আসবে। এই বিধান আপনাকে ঈশ্বর/আল্লা/গড দেয় না। ধর্মভিত্তি দেয়। ঈশ্বর/আল্লা/গড কি বিধান দেবেন সেটা অন্য ব্যাপার।
ঈশ্বর/আল্লা/গড যা বিধান দেবেন তা সবাই মেনে নেবেন। তা কিন্তু হয় না। এই বিধান দেন অন্য মানুষ/মানুষেরা। এবং তাকে ঈশ্বর/আল্লা/গডের বিধান বলে চালিয়ে দেন। এই বিধানের হাত ধরে নরবলি, পশুবলি, সতীদাহ, জেহাদ ইত্যাদি তো আছে সেই সাথে আরো মানুষ মারা মানুষ ফাঁদ সমাজের বুকে গড়ে উঠেছিল এবং উঠছে। শুধুমাত্র ধর্মের হাত ধরে। আস্তিক মতাদর্শের জন্য।
নাস্তিক মতবাদের ক্ষেত্রে এ রকম কিছুই নেই। আসলে সেখানে এক মানুষ অন্য মানুষ থেকে কোন দিক থেকে কোন মাত্রায় আলাদা নয়। প্রত্যেকে শুধু মানুষ। একজন মানুষের যা যা কষ্ট ব্যথা দুঃখ কান্না হাসি কিংবা আনন্দ হয় তা অন্যজনেরও হয়। ফলে নিজে যা আচরণ করবে সেটা অন্যেও করবে। তাই নিজে যতটা ভাল করার চেষ্টায় থাকবে তা অন্যেও করবে। ফলত সবাইয়ের ভালত্ব আপন মর্যাদা খুঁজে পাবে।
আমার ক্ষেত্রে এসব কিছুই লাগে না। আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমি নিজে নিজেই পরিচালিত। অন্য কারও চাপিয়ে দেওয়া (সেসব ভুল কি ঠিক কে বিচার করবে? হয়তো বা পুরোটাই ঠিক। হয়তো বা পুরোটাই ভুল) মত অনুসারে আমি চলি না। কেউ চালাতেও পারবে না।
মানুষ মাত্রেই বিপদে পড়ে। অসুবিধা আসে। সঙ্কট আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আমি নাস্তিক তাই হয়তো আপনার মতে আমি এসবে খুব বেশি জড়িয়ে পড়ি। এবং এর থেকে বাঁচার রেহাই পাওয়ার জন্য আমি আমার স্মরণাপন্ন হওয়ার সাথে সাথে অবশ্যই অন্য কারও স্মরণাপন্ন হই। তা হল অন্য কোন মানুষ অথবা অন্য কোন অদৃশ্য অবস্থানের।
আস্তিক মতাম্বলীতে আছে ঈশ্বর/আল্লা/গড নিজে আসেন না। তাঁর দূত হিসেবে তিনি কোন মানুষকে/কোন অবস্থানকে পাঠিয়ে দেন অথবা অদৃশ্য কোন আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়ে দেন। যাকে ঈশ্বর/আল্লা/গডের চমৎকারিত্ব বলে আপনি মানেন। আমি নাস্তিক হলেও তাই করি। জীবনের দূতকে সাদরে গ্রহণ করি।
ঠিক একই রকমভাবে আমি ঈশ্বর/আল্লা/গডের উদ্দেশ্যে যে সব উৎসব পালিত হয় যেমন ঈদ/দুর্গাপূজা/বড়দিন এবং অন্যান্য সমস্ত উৎসবে যোগ দিয়ে আমি আনন্দ করি। মানুষের মিলন উৎসবে মিশে গিয়ে নিজেকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলি। আমি দেখেছি প্রাণের অনাবিল উচ্ছ্বাস এইসব উৎসবে সবচেয়ে বেশি প্রসারিত হয়। কেন না আমি সবচেয়ে বেশি নিজেকে বিশ্বাস করি। প্রত্যেককে নিজেকে বিশ্বাস করুক। তাহলে আমি যেমন মানুষকে বিশ্বাস করি। তেমনি সবাই সবাইকে বিশ্বাস করবে।
আপনার আস্তিক ভাবনার ফলপ্রসূ এই উৎসব। এই উৎসব আনন্দ মিলনক্ষেত্র আস্তিক ভাবনায় প্রসারিত বলেই আমি নাস্তিক হয়ে তাতে অংশ নিতে পারি। জীবনের মিলনকে উপভোগ করি।
কিন্তু এইসব উৎসবের আচার বিচার নিয়ম নিষ্ঠা বিধান থেকে আমি দূরে থাকি। আড়ম্বরের বাহানায় আস্তিক ভাবনা মনের ভক্তি থেকে যে অনেকটাই দূরে সরে যাচ্ছে সে তো নাস্তিকের চেয়ে আস্তিকরা ভালই বোঝে।
আরো একবার স্পষ্ট করে বলে নেওয়া ভালো যে, এখানে আপনি মানে আপনি নন যিনি আস্তিক তিনি। এবং আমি মানে আমি নয় যিনি নাস্তিক তিনি। অর্থাৎ এ বিষয় আপনাকে নিয়ে নয় এবং আমাকে নিয়েও নয়।
আপনি বলতেই পারেন ঈশ্বর/আল্লা/গডের উপর যেমন ভরসা তেমনি ঈশ্বর/আল্লা/গডের ভয় থাকলে মানুষ নিজেকে সংযত করে চলবে। সমাজ থেকে অনাচার দুরাচার দুর্নীতি অত্যাচার কমবে। তাই তো আস্তিক বলে - ঈশ্বর/আল্লা/গড আপনার ভালো করুক। তাহলে আস্তিক বিধানও ঈশ্বর/আল্লা/গডের উপর ছেড়ে দেওয়া হয় কি? হয় না। তাহলে ঈশ্বর/আল্লা/গডের ভয়ে অনাচার, দুরাচার, অত্যাচার কমবে কি?
বরং উল্টোটা দেখা গেছে হরদম। ধর্মের নামে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা হয়। অনাচার, দুরাচার, দুর্নীতি, অত্যাচার ধর্মের নাম করেই শুরু হয়। তার মানে আস্তিক ভাবনা।
কেন না, লক্ষ্য করে দেখবেন শুধু পার্বণ নয় প্রায় সব সময় বিভিন্ন মন্দিরে/মসজিদে/চার্চে ভক্ত সমাগম বাড়তেই আছে। তাহলে কি ভয় ও ভক্তিতে অন্যায়, অনাচার, দূরাচার, অত্যাচার, দুর্নীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য উপাসনালয়ে ভিড় বাড়ছে। নাকি আবার উল্টো। বেশি বেশি এই সব অন্যায়,অত্যাচার, দুরাচার, দুর্নীতিতে আস্তিক জড়িয়ে পড়ছে তাই ভক্তিভাব বুকের মধ্যে জেগে উঠছে। চলো উপাসনালয়ে অন্যায়, অত্যাচার, দুরাচার কমিয়ে আসি।
অনেকটা সুগার রুগিদের মত। বেশি খাওয়া হয়ে গেছে। চিন্তার কোন কারন নেই। ইনসুলিন/ট্যাবলেটের ডোজ বাড়িয়ে দাও। এই বেশি খাওয়া আর ওষুধের ডোজ বাড়ানোর ফলে ভেতরে ভেতরে সুগার রুগীর কি হয় সুগার রুগী জানে। আর এসব ক্ষেত্রে ভেতরে ভেতরে কি হয় ঈশ্বর/আল্লা/গড জানেন।
সত্যি বলছি আমি জানি না। কেন না, আমি যে নাস্তিক ভাবনায়। আমার যে ভয় শুধু নিজের কাছে নিজের। আমার উপাচার, অর্ঘ্য, ভক্তি কম বেশি ইত্যাদি সবই আমাকে ঘিরে।
আপনি আস্তিক এবং অবশ্যই ধার্মিক। তা বলে আমি নাস্তিক মানে কখনই অধার্মিক নই। কেন না, আস্তিক ভাবনায় ধর্মের নীতি মেনে চলা মানুষ ধার্মিক আর না মেনে চলা অধার্মিক। কিন্তু আমি যে নাস্তিক ভাবনায়। ব্যাপারটার মধ্যেই নেই। কে ভাল কে খারাপ, কে মানবিক কে মানবিক নয়, কোন বিধান শুভ কোনটা অশুভ ইত্যাদি কোন ব্যাপারেই আমি নেই তাই আমি এসব মানামানির ঊর্ধ্বে। আমার কাছে সবাই সমান। চলন্ত জীবন। কার্য ও কারণে আবর্তিত।
আপনি যে কোন কাজ করার আগে অবশ্যই ঈশ্বর/আল্লা/গডের স্মরণাপন্ন হন। কেন না ওই কাজ আপনার দৃষ্টিতে অবশ্যই শুভ কাজ। তাই আপনি বলেন - শুভ কাজ করার আগে ঈশ্বর/আল্লা/গডকে স্মরণ করে নিই।
আপনার 'নিজের দৃষ্টি'তে কাজটিকে যদি শুভ মনে করেন তাহলে কাজের বিচার আপনার হাত ধরে শুভ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। এই 'নিজের দৃষ্টিকে' শুভ করার জন্য আপনাকে নিজেকে আরো শুদ্ধ করতে হবে। তার মানে নিজের চেতনার উন্মেষ ঘটাতে হবে। উন্মেষ যতটা সুদূরপ্রসারী ততটাই আগামী চেতনা সমৃদ্ধ।
আমি নাস্তিক হয়ে যা করি। অর্থাৎ আমি যা করি আপনিও তাই করেন সাথে শুধু আস্তিক ভাবনা যুক্ত করে নেন।
এখন এই 'নিজের দৃষ্টি' ঈশ্বর/আল্লা/গডের নামে যদি বেসামাল হয় তাহলে সব কিছু পণ্ড হয়ে যায়। আমরা যা কিছু করি পরের জন্যই করি। নিজের দিকে মুখ করে করি বলে অন্যরা ভাবে লোকটা নিজের জন্য করছে। আসলে কোন কাজ নিজের জন্য নয়। যে বাড়ি গাড়ির সাথে সাথে আমরা সংসার সম্পর্ক গড়ে তুলি তা পৃথিবীর বুকে কিছু নির্দিষ্ট অথবা অনির্দিষ্ট পরিমণ্ডলের মধ্যে বিদ্যমান। আমার কাজ কর্ম সেই পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। একে অপরের হাত ধরে অবস্থান বিন্যাস করে।
আমি যদি এই পরিমণ্ডল শুদ্ধ ভাবনায় গড়ার চেষ্টা করি তা শুদ্ধ থাকবে। অশুদ্ধ ভাবনায় গড়লে অশুদ্ধ হবে। আজকে যে সব কাজ আমার আমার কালকে সেটা পাশের জনের। তারপর তার পাশে। এই স্রোত সব সময় উভয়মুখী।
যেমন এক অঞ্চলে হোমে গোটা নারকেল দেওয়া হয় আবার অন্য অঞ্চলে হোমে কলা দেওয়া হয়। আর এক অঞ্চলে হোমে কচি ডাব। এইবার অঞ্চল পাল্টে গেলে হোমের সামগ্রী পাল্টে যায়। আবার হোমও পাল্টাতে শুরু করেছে। কোন অঞ্চলে হয়তো শুরু হবে পূজোও কোন হোম হবে না। তাহলে সেই অঞ্চলে কোন এক আমি দিয়ে হোম শুরু হয়েছিল আবার কোন এক অঞ্চলে কোন এক আমি দিয়ে হোম করব না ছড়িয়ে পড়বে।
আবার ছেলে মেয়ে মানুষ করতে একই অঞ্চলের যেমন ছেলে মেয়ের সাথে তাকে মিশতে দেবেন সেই রকম ছেলে মেয়ে সংস্কার গড়ে তুলবে। হয় আপনার ভালটা/মন্দটা নিজের ছেলে মেয়ের মাধ্যমে অন্যের ছেলে মেয়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। কিংবা অন্যের ভাল/মন্দটা আপনার ছেলে মেয়ের মধ্যে চলে আসবে।
কিন্তু আস্তিক ভাবনার সাথে নিজের ভাল, নিজের মন্দ জুড়ে দিয়ে ভরসার মাপকাঠি ঈশ্বর/আল্লা/গডের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। নিজের শুদ্ধতা নিজের ভেতর থেকে গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়।
কেন না, আস্তিক হয়ে আপনি কি কি বেশি পেলেন, আর আমি নাস্তিক হয়ে কি কি কম পেলাম। সেই বিচার করার ভার কারও উপরে নেই। চোখের সামনে কাওকে দেখে হয়তো বলা যেতে পারে ইনি হিন্দু, ইনি মুসলিম, ইনি খৃষ্টান ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বলতে পারবেন না ইনি আস্তিক না নাস্তিক। আসলে বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য বা জীবনের শেষ বয়সে নীরোগে, অধিক যন্ত্রণায় কষ্ট যাতে না পেতে হয় সেই জন্য অনেকেই আস্তিক। এছাড়াও আরো কিছু বিস্তার আছে।
এই ভাবনাতেও দেখা গেছে আস্তিক অধিক লাভবান, নাস্তিক কম লাভবান তাও বলা যায় না। শুধুমাত্র বিশ্বাসের বশবর্তীতে হয়ে আস্তিক সব সময় অন্য আর একজনকে আস্তিক করার চেষ্টায় অনবরত থাকে। কোন অবস্থানকে সামনে রেখে, দূরের কোন উদাহরণ দিয়ে, কোন পুণ্য গ্রন্থের অনুসারী দেখিয়ে আস্তিক অন্যকেও আস্তিক করতে থাকে।
নাস্তিক কিন্তু অন্য কাওকে নাস্তিক হওয়ার জন্য নিজের দিকে টানে না। সে কিছু তর্কে যায়, কিছু বোঝায়, কিছু যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কখনই জোর করে না। কিংবা তার নাস্তিকবাদের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে না।
কিন্তু আস্তিক তার মতাদর্শের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় যারপরনাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে যার ফলে সমাজের বুকে অনেক কিছু ঘটছে, ঘটতে আছে। তাহলে কোন ভাবনায় কোথায় গিয়ে কি পাওয়া যায় আর কি পাওয়া যায় না। কোন লাভ বা কোন বিনা স্বার্থে আমি নাস্তিক আপনি আস্তিক। দুজনেই চলেছি অনন্তে।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৭৬৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/১০/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আপনি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ লিখতে পারেন।লেখার হাত ভাল আছে।
  • আজাদ আলী ০৮/১০/২০১৭
    Nice subject
  • মধু মঙ্গল সিনহা ০৮/১০/২০১৭
    ভালো লেখার প্রতীক।
 
Quantcast