www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সভা

আজকে সকালটা বেশ সুন্দর । না সুন্দর বলাটা মনে হয় যুক্তিযুক্ত হলনা, তবে বেশ অন্যরকম বলা যায় । সূর্য বাবাজী সকাল থেকেই বেশ ফুরফুরে ভাব নিয়ে আকাশের বুকে মুচকি হাসছে । যদিও বাতাসে একটা স্নিগ্ধতা আছে ; পৃথিবীর মানুষগুলো বড় বোকা, এত সুন্দর সকাল দেখতে চায়না, বিছানায় সেই যে শুয়েছে আর উঠতে চাইছে না ; সময়ের মূল্যায়ন জানে না । সে যাকগে, আজকে জরুরী সভা রয়েছে, গত দুদিন আগে থেকে ক্রমাগত প্রচার চলছিল । এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেউ যেন অনুপস্থিত না থাকে কেননা এই সভার আলোচ্য বিষয় বড় জটিল । সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারী সকলেই সভার গুরুত্ব যে অনুধাবন করতে পেরেছে সেটা বুজা গেল সভায় উপস্থিতি দেখে । প্রায় কেউ বাদ নেই, শুধু টিকটিকি আর আরশোলাদের জন্য বরাদ্দ করা বা দিকের আনারস বাগানের ক্যালেন্ডার আনারস গাছটা খালি রয়েছে । যদিও আরশোলা গতকাল জানিয়ে দিয়েছিল, সে আসতে পারবে না কেননা তার ছোট্ট ছেলেটা এই বাড়িতে বাথরুমে অবস্থানকারী তারই প্রতিবেশী মাকড়সার জালে আটকে গেছিল এবং বর্তমানে অসুস্থ তাই সে আসতে পারবে না । এছাড়া সঠিক সময়ে এসে বসে একমাত্র এ বাড়ির সবচাইতে বয়স্ক ও পুরনো গরু , বুধ বারে জন্মেছিল বলে যাকে মালিক আদর করে বুধু বলে ডাকত , যদিও সে নামে এখন আর খুব একটা ডাকে না তবুও বয়সের ভারে ন্যূজ্জ , এক বুক অভিজ্ঞতা নিয়ে এখন সে'ই এই বাড়ির সমস্ত প্রানী কূলের অবিভাবক ।এছাড়াও তিনটে হাঁস, চারটে মুরগ, একটা বিড়াল ও তার একটা ছানা, দুটো নেড়ি কুকুর , একটা ছাগল সবাই আস্তে আস্তে সভায় যোগ দিয়েছে । যদিও পাশের বাড়ির দুটো খরগোশ সভার কথা জানতে পেরে যোগ দিতে চেয়েছিল কিন্তু এ বাড়ির প্রানীকূল (মানুষ ছাড়া) তাদের গ্রাহ্য করল না, শেষ অব্দি বাউন্ডারীর বাইড়ে থেকে শোনার অনুমতি পেয়েছে । পুরুষ নেড়ি কুকুরটা দাঁড়িয়ে "বুধু"কে সভাপতি করার প্রস্তাব জানালে বাকী সবাই হাততালি দিয়ে সমর্থন জানালো । সভার কাজ শুরু করতে গিয়ে সভাপতি শুরুতেই ভুমিকায় জানালেন, "এ সভা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ, কেননা এ সময় বড় বিপদজ্জনক সময়, করোনা নামে এক সংক্রামক ভাইরাস সারা বিশ্বে তান্ডব চালাচ্ছে, যদিও এ ভাইরাস শুধুমাত্র মানুষদের জন্য, ঔষধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি ; আমরা মানব জাতি ছাড়া অন্যান্য প্রানীকূল অনেক রকম মহামারীর সম্মুক্ষীণ হয়েছি, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, চিকন গুনিয়া, নিপা ইত্যাদি আরো কত কি ! কোন কোন সময় আমাদের অনেক প্রজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে আবার তা কাটিয়েও উঠেছি ; এছাড়াও অন্যান্য সময়ের যে কোন মহামারিতে মানুষের সঙ্গে পশুপাখিদের জড়িয়ে দেয়া হতো কিন্তু এবারই প্রথম মানব জাতিই কেবলমাত্র বিপন্ন, আমাদেরকে মুক্ত রেখেছে এই করোনা ভাইরাস, তাই এই সময়ে যেমন আমাদের সকলের উচিত এই করোনা ভাইরাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো তেমনি আমরা যেহেতু পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেনীর জীব অর্থাৎ মানব জাতির সঙ্গে বুদ্ধি আর জ্ঞানে তুলনায় পিছিয়ে থেকে তাদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছি তাই মানব জাতির এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য বলেই মনে করি, বিশেষ করে আমরা যারা পোষা প্রাণী আমাদের তো সবার আগে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ । সে যাই হোক, আমরা যেহেতু আজকে এ নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে সভায় মিলিত হয়েছি, এখন আমাদের সকলের মতামত জানা দরকার, সবাই সুশৃঙ্খল ভাবে নিজের নিজের মতামত রাখবেন, আরেকটি কথা, যেহেতু লক ডাউন চলছে তাই বাড়ির সব মানুষ বাড়িতেই অবসর দিন যাপন করছেন সুতরাং সভায় বেশী দেরী করা যাবে না, খুব তারাতারি আমাদের খোঁজ করবে তাঁরা ।" - এই কথাগুলো দাঁড়িয়ে গুছিয়ে একটানা বলে বুধু তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে 'হাম্বা...' উচ্চারনে ডাক দিয়ে বসে পরলেন । কথা শোনতে শোনতে এ বাড়ির ছাগলটা এদিক ওদিক ছোট ছোট কচি ঘাসে মুখ দিচ্ছিল ; বাড়ির মালিকের এক মাত্র মেয়ের খুব আদরের বলে এমনি বিগরে গেছে, কখন কোথায় যায়, কি খায় তার ঠিক থাকে না, প্রায় রাতেই মেয়েটার সঙ্গে মানুষের বিছানাতেই রাত কাটায় । সবাই জানে তাই মুখ খুলে কেউ কিছু বলল না । তবে তাকেই প্রথম কিছু বলার জন্য ডাকা হল, ছাগল তার পরিচিত কন্ঠে 'ম্যাঁ...ম্যাঁ' করে কিছু বলার চেষ্টা করল কিন্তু তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে নি বলে কেউ তার কথায় তেমন ভ্রুক্ষেপ না করলেও এটা বুজতে পেরেছে, এই সময়ে তার আদরের মালিকটা স্কুল বন্ধ, টিউশান বন্ধ ফলে বেশী বেশী আদর করার কথা কিন্তু সেই আদর পাচ্ছে না বরং অনেকটাই কমে গেছে , কেমন মনমরা হয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বসে থাকে মেয়েটা, এই বিষয়টা তাকে খুব ভাবাচ্ছে । এভাবেই মুরগ-মুরগী ওরাও জানাল , মালিক তাদের মধ্যে দুজনকে এত দিনে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু নিল না ( মালিকের ডাইনিং টেবিলে যাওয়ার মধ্যে দিয়েই এই মুরগ-মুরগী'রা তাদের জীবনের সার্থকতা খোঁজে পায়) । হাঁসগুলি প্যাঁক প্যাঁক করে জানালো, তারা এখন বেশী বেশী খাবার পাচ্ছে , কেননা মালিক মানুষরা খেতে বসে ঠিক ঠাক খেতে পারছে ফলে উচ্ছিষ্ট অনেক বেশী পাওয়া যাচ্ছে । বিড়ালের পালা আসতেই , সভার মধ্যেও বাচ্চাটা বার বার দুধ খেতে চাইছিল বলে আলতো করে একটা চড় মেরে পাশে বসিয়ে রেখে, মিঁয়াও মিঁয়াও করে করুন সুরে বলল," আজ অনেক দিন হল ভাল মতো খেতে পারছি না, শরীরটা শুকিয়ে যাচ্ছে, বাচ্চাটাও আগের মত দুধ পায় না, পুষ্টির অভাবে সে বোধহয় মারা যাবে । কেননা দিন পনের আগে একটা বড় বাড়ির মানুষ এসে আমার বাচ্চাটাকে পছন্দ করেছিল, বলছিল নিয়ে যাবে, মাছ মাংস, দুধে ভাতে রাখবে আমার মন খারাপ হলেও ভেতরে ভেতরে খুশী হয়েছিলাম, সন্তানটা ভালো থাকবে কিন্তু সেই বড়লোক বাড়ির মানুষের আর দেখা নেই । এ বাড়ির মানুষজন কিন্তু বেশ দয়ালু, খাওয়ার পাতে বসলে সবসময় পাশে থাকতাম, মিঁয়াও করলেই ছোট মাছের মাথা, বড় মাছে কাঁটা এট সেটা এবং শেষের দিকে ঐ যে বুড়ো মানুষটা আমাদের সবার মালিকেরও মালিক, উনার কাছ থেকে নিয়মিত একগ্রাস দুধভাত পেতাম । আজকাল এসব স্বপ্ন, বেঁচে থাকার জন্যে খাচ্ছে সবাই, কোন বিলাসিতা নাই, সেদ্ধ-পোড়াতেই চালিয়ে দিচ্ছে দু বেলা । আমাদের কথা ভাবে না, ভাববেই বা কি করে , প্রতিদিন প্রতিক্ষণ টিভিতে নিউজ দেখে দেখে মানুষেরা মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আছে, সবাই মুখে আমাদের বুধু'দার ঠুলির মতো মাস্ক পরে, বার বার হাত ধোয়, এই অবস্থায় আমাদের ভাল মন্দ খাবারের কথা কে ভাববে বুজতে পারছি না, কিছু একটা করা দরকার ।" বিড়াল অনেকক্ষণ বলল, সবাই মন দিয়ে শোনল । এতক্ষণে সভার মধ্যে একটা গাম্ভীর্য ভাব এসেছে, সবাই চুপচাপ । এবার কুকুরের পালা, কুকুর প্রথমেই দাড়িয়ে ঘেঁউ ঘেঁউ করে সকলকে সুন্দর সম্বোধন করলেন, মাননীয় সভাপতি, আমাদের সকলের গুরুজন বুধু'দা এবং উপস্থিত সকলকেই আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই, আপনারা এতক্ষণে আমাদের এই সভার গুরুত্ব নিশ্চয়ই উপলব্দি করতে পেরেছেন, আজকের দিনে আমাদের সামনে সমূহ বিপদ, মানবজাতি বিপন্ন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মানুষ নির্বিচারে বিনাচিকিৎসায় মারা যাচ্ছে, আমাদের দেশেও মৃত্যুর মিছিল লেগে গেছে, যদিও এ রাজ্যে এখনো এই করোনা নামক ভয়ানক ভাইরাসটি প্রবেশ করতে পারেনি তবুও সরকার সতর্কতা মূলক লক ডাউন দিয়ে রেখেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য মানুষকে অনুরোধ করছে, কোথাও কোথাও পুলিশ মানুষকে পেটাচ্ছে, ভাল থাকার জন্য, ভাল রাখার জন্য । কিছু কিছু মানুষ এখন পর্যন্ত ততটা উপলব্ধি করতে না পারলেও আমাদের মালিক খুব সচেতন, এক্কেবারে শুরু থেকেই সরকারের সব নির্দেশাবলী অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে ফলে আমাদের এখন আর কোন কাজ নেই, যদিও ভালমন্দ খাবার নেই তবুও দুবেলা নিয়মিত খাবার পাচ্ছি, সয়াবিন আর নিরামিশ সবজি মুখে লেগে গেছে কিন্তু সারাদিনে একটিও মানুষ আসেনা বলে ঘেঁউ ঘেউঁ করতে হয়না ফলে অলসতা ক্রমশঃ গ্রাস করছে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দিন কাটানো যে কত দুষ্কর তা টের পাচ্ছি এখন হাড়ে হাড়ে । মালিকের সংবাদ পত্রও আসে না , আগে সকালে পত্রিকাটা এলেই মালিক যখন চেয়ার পেতে বাড়ান্দায় বসতেন আমি নীচে ফ্লোরের মধ্যে গাঁ টা এলিয়ে দিতাম, মালিক তার পা দিয়ে আমাকে আদর করতেন, চায়ের সাথে মুড়ি, চিরা, বিস্কিট যা আসতো আমি তার ভাগ পেতাম । আজকে সেসব স্মৃতি মনে আসলেই চোখে জল আসে । মানুষগুলো কেমন সব অলস হয়ে যাচ্ছে, কোন তাড়া নেই , সকালের স্নান বিকালে হয় রাতের খাবার প্রায়ই বারটার পরে হয়, খুব কষ্ট লাগে আমাদের মালিকদের এই অগোছালো জীবন দেখে । আমাকে যে মালিকটা খুব বেশী ভাল বাসত, বাড়ি থেকে বেড়োলেই ফেরার পথে আমার কথা যার বেশী মনে পরত, সেই মানুষটাই আজকে সবচাইতে বেশী ঘরবন্দি হয়ে জীবন যাপন করছে । সারাক্ষণ কম্পিউটার আর খাতা পত্র নিয়ে দড়জা জানালা বন্ধ করে থাকে । এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নাকি বলেছেন গল্প লিখতে, তাই সে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়েই গল্প লিখতে বসেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর জীবনীর মতো লিখছেন,কি করে হঠাৎ করে একটা মানুষ এত বড় হতে পারে ! এ নিয়ে লিখছেন, এটি নাকি সারা বিশ্বের বাঙ্গালীদের অনুপ্রেরণা দেবে, আবার কোথায় কি বলতে কি বলে ফেলেন সেগুলোরও একটা খতিয়ান তৈরী করছে সে । একদিন মায়ের সাথে আমার আদরের মালিক গল্প করছিল, আমি আধবোজা চোখে ঘুমের ভান করে কথাগুলো শোনেছি । সবাই যদি এমন ভাবে গল্প লিখতে শুরু করে এই বিপদ কেটে গেলে এই রাজ্যের প্রতিটি মানুষ লেখক হয়ে যাবে, ইতিহাস তৈরী হবে, মিরাক্যাল হবে । সে যা হউক, মানুষের কথা এত বিশ্লেষণ করে আমাদের লাভ নেই, সুখের কথা এটাই আমাদের প্রজন্ম এই ভয়ঙ্কর মহামারির ছোঁয়াচ মুক্ত । বে আমার যে বিষয়টা নিয়ে সবচাইতে বেশী চিন্তা হয়, এই মহামারি থেমে গেলে সরকার যখন সাধারণ মানুষকে তার সরকারী সাহায্য বন্ধ করে দেবেন , যখন মানুষ নতুন করে দেশের মুখ থুবরে পরা অর্থনীতির মধ্যে বাঁচতে শুরু করবে, নতুন করে কাজকর্মহীন একটা পরিস্থিতির মধ্যে পরবে, তখন কি হবে ! আমাদের এই অলসতা, জড়তা নিয়ে , ভাল মন্দ না খেতে পেরে এই দুর্বল শরীরটাকে নিয়ে তখন কি দেশের চুরি ডাকাতি ইত্যাদি ঠেকাতে পারবো ! জানিনা কি হবে, কিন্তু আমরা যদি শুধুমাত্র বর্তমান সময়টাকে নিয়েই ভাবি তবুও ভাবনার শেষ নেই । মানুষ মুখে তো কোয়ারেন্টাইন কোয়ারেন্টাইন বলছে, মানছে কি ! আমরা কি করতে পারি ? আমরা কি পুলিশের মতো মানুষকে বাড়ির বাইড়ে দেখলেই কামড়ে দিতে পারি ? তাহলেতো আরেক বিপদ ! মানুষজন জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের ইঞ্জেকশানের জন্য হাসপাতালে ভিড় জমাবে । সে পথে না যাওয়াই ভাল, তবুও পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে আমাদের সে পথে যেতে হবে হয়তো, না কামড়ালেও ঘেঁউ ঘেঁউ করে ঘরে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে হবে । সব চাইতে বড় কথা, আমাদেরও সাবধান থাকতে হবে, এই করোনা যাতে কোন ভাবেই আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে না পারে , আমরা তো আর মানুষ নই, আমাদের সরকার নেই, আমাদের সতর্কতা আমরাই পালন করবো । সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, নমস্কার, ঘেঁউ ঘেঁউ । করে বসে গেলেন, পাশে থাকা আরেকটা কুকুর ছোট্ট করে বলল, "লাভের মধ্যে লাভ হয়েছে, লক ডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকে কয়েকদিন ব্রয়লার মুরগী সস্তা হওয়ার কারনে আমরা কিন্তু খুব খেয়েছি, এখন ওদের কি অবস্থা জানিনা, ওদের ক্তহাও ভাবতে হবে, ব্রয়লারের অস্তিত্ব মুছে গেলে আমাদের আর মাংস খেতে হবে না ।" এবার সভাপতি বুধু মহাশয় আবার উঠে দাড়ালেন, সভা শেষ করার কথা, কিন্তু তার আগে বাউন্ডারীর ওপার থেকে খরগোশ দুটো একসঙ্গে বলে উঠল, "আমাদের কথা কেউ ভাবে না, আমাদের মালিক গতকাল তার দোকানের পাশে খাঁচায় বন্দি করে নিয়ে গেছে, বিক্রি করে দেবে, এই সময়ে নাকি আমাদের পোষে রাখার কোন যুক্তি নেই, একজন এসে আমাদের কিভাবে খেতে হয় জেনে গেছে, দামদর করে গেছে, আজকে বোধহয় নিয়ে যাবে, আমাদের কথা তোমরা একটু ভাবো, মালিকের মঙ্গলের জন্য আমরা জীবন বলি দিতে রাজি, কিন্তু ওরা ভাল থাকবে তো !" হুম, হাম্বা বলে গম্ভীর ভাবে সভাপতি এবার আবার উঠে দাঁড়িয়ে সভার সমাপ্তি ভাষন দিতে শুরু করলেন," অনেক দেরী হয়ে গেছে বলে খুব বেশী কিছু বলার অবকাশ নাই, তবুও যেটুকু না বললেই নয় সেটা হচ্ছে, আমাদের সংক্রামণ রোগের ভয় না থাকলেও বড় বিপদগ্রস্থ হয়ে আছি, সকলেই কোন না কোন ভাবে সংকটে আছেন, তবুও আমরা এই দুঃসময়ে আমাদের মালিকপক্ষ তথা মানব জাতির কল্যানের জন্য চিন্তিত, যদিও এ সময়ে ঈশ্বরের স্থানগুলোর দড়জা বন্ধ, মানুষ এখন অদৃশ্য করুণাময়ের কৃপা চায়, আমরাও সেভাবেই প্রার্থনা করি পৃথিবীর সবাই ভাল থাকুক, ভাল থাকার জন্য যা যা করনীয় সবাই যেন তা পালন করে, আশা করি বিপন্ন মানব জাতি আবার ঘুড়ে দাঁড়াবে, আমাদেরকে পাশে নিয়েই করোনাউত্তর একটা যুগ শুরু হবে, মানুষ আবার আরো বেশী সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী একটা যুগের সূচনা করবে, এ সময়ে আমরা আমাদের সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব, যে যার মতো করে সাহায্য করবেন, হাঁস-মুরগীরা বেশী করে ডিম দেবেন, গরু-ছাগল-মহিষেরা বেশী বেশী দুধ দেবেন, বিড়াল ইঁদুর দেখলেই ঝাঁপিয়ে পরবেন, কুকুরতো নিজে থেকেই অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব রেখেছে সেগুলো পালন করবেন , সবাই যার যার অবস্থানে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন, উদ্ভিদকুলকেও আমার অনুরোধ থাকবে, এ সময়ে লক ডাউনের কারনে সারা বিশ্বের পরিবেশ শোধরে যাচ্ছে তাই মানব জাতির জন্য আপনাদের ভূমিকা অপরিসীম , আপনারাও এ সময়ে বেশী বেশী করে ফলন দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন । আর বেশী কিছু না বলে এখানেই শেষ করবো কিন্তু তার আগে আমরা আজকের এই সভা থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করবো তারপরে করোনা আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে এবং আজকের দিনে মানুষের এই জীবন বাঁচানোর মহাযুদ্ধে সৈনিকের মতো সামনে থেকে লড়াই করছেন সেই ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী সহ সকল জরুরী পরিষেবায় যুক্ত মানুষদের অভিনন্দন জানিয়ে লাগাতর তিন মিনিট চিৎকার চেচাম্যাচি করে তবেই সভার কাজ সমাপ্ত করা হবে। আসুন প্রথেমে সকলে মিলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করি ।" সকলেই শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভরে নিরবতা পালন করল তারপর আস্ত বাড়িশুদ্ধ তিন মিনিট যাবত লাগাতর হাম্বা হাম্বা, ঘেঁউ ঘেঁউ, ম্যাঁউ ম্যাঁউ, প্যাঁক প্যাঁক, কক কক, ম্যাঁ ম্যাঁ, চিঁ চিঁ চলল । সবাই যে যার মতো ফিরে গেল । দিন বাড়ছে, দিন চলছে আর পাঁচটা দিনের মতো ।

******************************************
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৮৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০৪/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অনবদ্য।
  • অনবদ্য
  • শাফকাত সাবিল ০৮/০৪/২০২০
    খুবই ভালো।আপনি কোথায় থাকেন বলবেন কি প্লিজ?ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করছি বলে কিছু মনে করবেন না।
  • সাইদুর রহমান ০৬/০৪/২০২০
    সুন্দর। ভালো থাকবেন।
  • ফয়জুল মহী ০৬/০৪/২০২০
    সব কথা অতি সহজ সরল ভাবে চমৎকার উপস্থাপন । আমরা বোকা লতা পাতা খাই ।
  • সুন্দর।
 
Quantcast