www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঢাকা টু সাভার সড়কঃ ছিনতাই এর স্বর্গরাজ্য

ঢাকা থেকে সাভার যাব। শ্যামলী বাস স্টপে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একটা মাইক্রোবাস এসে থামলো একটু দূরে। মােইক্রেবাসে ড্রাইভার একা। ডাকছে.....এই সাভার....এই সাভার...
আমার সঙ্গে আছে স্ত্রী, পুত্র ও বাসার সহায়ক। আমার স্ত্রী বললেন, দেখতো যাওয়া যায় কিনা?
আমি একটু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাবেন?
ড্রাইভার বলল, সাভার...স্যার যাইবেন? উইঠা পড়েন।
আমি ভাড়া জিজ্ঞাসা করলাম। ড্রাইভার বলল, একজন দশ....
অমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভাড়া তো বিশ....পরে ঝামেলা করবা নাতো?
ড্রাইভার বলল, স্যার এইটা লাইনের গাড়ী না, সাভার যাইতাছি, তাই দুইটা প্যাসেঞ্জার পাইলে কিছু পকেটে অাইলো আর কি!

আমরা উঠে পড়লাম। আমাদের পর পরই আরো একটি ফ্যামিলি উঠলো, বিডিআর এর সদস্য ও তাঁর স্ত্রী। সঙ্গে একটি এক বছরের অসুস্থ্য শিশু। এরপর আরো কয়েকজন যাত্রী, যুবক গোছের উঠল। এরা পিছনের দিকের সিটে বসলো। তাদের বসার জায়গা করে দেয়ার জন্য সিট বাঁকিয়ে আমাদের জায়গা করে দিতে হলো। এরপর গাড়ী ছেড়ে দিল।

ঢাকার জ্যাম ছাড়িয়ে গাড়ী আমিন বাজারের পর দ্রুত ছুটে চলছে। হু হু করে হাওয়া আসছে। আহ্‌। হঠাৎ দুর্গন্ধ!
ড্রাইভার বললো, স্যার জানালাটা লাগাইয়া দ্যান, সামনে ময়লার ভাগাড়।
আমরা জানালা লাগয়ে দিলাম। সাভারের ল্যান্ডফিল সাইট পেরিয়ে যাবার পর জানালা খুলে দিলাম। আবার নির্মল বাতাসে মনটা ভালো হয়ে গেল। এরপর হেমায়েতপুরের জ্যাম। সেখানে মিনিট পনের দেরী হলো। গাড়ী এবার ছুটছে সোজা সাভারে দিকে। রাস্তায় বেশ কয়েকটা বড় আকারের লরী। পিছন থেকে একজন হঠাৎ আমার পাশের জানালা আবার বন্ধ করে দিল। আমি এর কারণ জিজ্ঞাসা করায় রূঢ় ভাবে বললো, ব্যাটা চোপ থাক, এক্কেরে ফাইড়া ফালামু। এরপর পিছনের যুবকরা দ্রুত হাতে গাড়ীর সব জানালা বন্ধ করে দিল। আমাকে হঠাড় করে একটি রশি দিয়ে পিছন থেকে সিটের সঙ্গে বেঁধে ফেলল। একটা গামছা দিয়ে গলাটা সিটের সঙ্গে চেফে শ্বাস রোধ করার চেষ্টা করতে লাগল। আর একজন পিছন থেকে আমাদের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনে এসে দমাদম আমার বুকে ঘুষি চালাতে লাগল। আমার দমবন্ধ হাবার জোগাড়, আর বুকের ব্যথায় অস্থির। আমার ফিচনের বিডিআর জওয়ানেরও একই অবস্থা। আর আমার পুত্র, সহায়ক, পিছনের সিটের যাত্রী কানানকাটি শুরু করেছে। শুধু আমার স্ত্রী তাদের থামতে বলছে। কে শোনে কার কথা! গাড়ী হঠাৎ ঘুরয়ে ঢাকার পথ ধরলো। এবং একটু পরেই দেখলাম সেটা হেমায়েতপেুরের পর হতে সাভার পুলিশ সিটির আগ পর্যন্ত স্থানে চক্রাকারে ঘুরছে।

অামি একটু বকাঝকা কললাম, তাদের। বললাম, এই তোরা কি চাস?
ওরা বলে, যা আছে বাইর কর ব্যাটা।
আমি বললাম, নিবি নে তো বুকে ঘুষাইতাছস ক্যান। আমারে মাইরা তোর কি লাভ! যা চাস তা পাইলেই তো হইল। থাম তোরা।
আমার কথায় না অন্য কোন কারণে , জানি না, তারা থামল। আমরা যার যা কিছু ছিল দিয়ে দিলাম।
বললাম, আমার কাছে তো কোন টাকা নাই। কিছু টাকা দে, ঢাকা যাব না?
তারা দয়া পরবশ হয়ে হাতে পাঁচশ টাকা দিল। আমি আমার স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগটাও ফেরত দিতে বললাম। তারা সেটাও দিল। তবে ব্যাগ সার্চ করে মোবাইল, মেয়েদের প্রসাধনীসহ সব কিছু ‍নিয়ে নিল। এরপর পুলিশ সিটির কাছাকাছি এক জায়গায় গাড়ীটা স্লো করে আমাদের একরকম ধাক্কা দিয়েই নামিয়ে দেয়া হলো।
সেখান থেকে রিক্সা করে আমরা সাভার পৌঁছি। রাদে সে পথ দিয়ে ফিরতে ভয় হচ্ছিল। তবে সরকারী প্রক প্রকল্পের পরিচালক আমাকে সেদিন সহায়তা করেছিলেন। তিনি নিজে তাঁর গাড়ী ড্রাইভ করে আমাকে সাভার থেকে ঢাকায় নিয়ে আমার বাসায় পৌঁছিয়ে দেন।

অনেকেই আমাকে থানায় মামলা করতে বলেছিল। আমি করিনি। আরো বড় কোন ক্ষতির মুখোমুখী হওয়ার ভয়ে, শত্রু বাড়িয়ে লাভ কি! আমার এই ঘটনার পরদিনই একই রকম একটি ঘটনায় এটিএন বাংলা টিভি চ্যানেলের এক রিপোর্টার নিহত হন।
এরপর হতে আমি শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড, মেয়ারে মাইক্রোবাস, সন্ধ্যার পরের দূরপাল্লার যাত্রা এবং স্ত্রীর হঠাৎ করে বলা কথায় শঙ্কিত হই, সাবধানে চলি ও কাজ করি। আপনারাও করবেন।

আরশাদ::alien:কাজের বাড়ী:নিজ শহর
১২ নভেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ঢাকা।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৯০২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • যাওয়া হয় না এই পথে, তাই ঠিক জানা নেই বিষয়টি।
  • নির্ঝর ১২/১১/২০১৫
    সহমত!
 
Quantcast