www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হলুদিয়া পাখি

আজ বাদেই আসছে কুরবানীর ঈদ মুসলমান জীবনে একটি বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ঈদ উপলক্ষে সবাই সবার নিজ নিজ কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামের বাড়ি রওনা দিয়েছে। পিতা মাতা ভাই বোন স্ত্রী সন্তান সন্ততী নিয়ে ঈদ করবে বলে। যথারীতি আমিও গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ন্য করেছি এখন শুধু রওনা দেওয়ার পালা । সকালে এক পাক অফিসে ঢু দিয়ে এসে বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছি বাসের অপেক্ষায় । সঙ্গে তেমন লাগেজ না থাকলেও একবারে কম আছে তাও কিন্তু নয়। ঈদের আগে বাসে অনেক ভিড় কি করে যাবো তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না । কি আর করার যেতে যখন হবেই তখন এত ভেবে লাভ কি ? তাই তো একটা গাড়িতে উঠে পড়লাম এত ভিড় বসবো সেটা তো দুরের কথা দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নাই কোন মতে প্রাণটা হাতে নিয়ে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। কন্ট্রাকটর সাহেব আসলেন তাকে বিনয়ের সুরে বললাম। ভাই আমরা কুষ্টিয়াতে যাবো অনেক দুরের পথ ৪/৫ ঘন্টা কি দাঁড়িয়ে থাকা যায়। তিনি আমাদের কষ্ট দেখে আশস্থ করলেন। একটু কষ্ট করেন যশোর পর্যন্ত চলেন একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে । কোন মতে কষ্ট করে যশোর পর্যন্ত গেলাম । কন্টাকটর সাহেব পিছনে ছিট করে দিলেন । যদিও কখনো দেখে শুনে পিছনের ছিটে বসি না কারণ পিছনে বসলে অনেক ঝাঁকি হয় দরজা দিয়ে ধুলা আসে ইত্যাদি। কিন্তু গতান্তর নেই, নাই মামার চেয়ে এখন কানা মামাটাই বড় হয়ে দাঁড়ালো। দুরের পথে কোথাও গেলে আমার যেমনটি মনে হয় তেমনটি সবার মনে হয় কিনা তা জানি না । প্রয়োজন বোধ হয় একজন মেয়ে সঙ্গিকে আর নইতো বা কোন এক সুন্দর সু-শ্রী যুবতীর পাশে একটি ছিট তাতে আর যায় হোক গল্প করে সময় তো কিল করা যায় তাতে জার্নিটা একঘেয়ামি বলে মনে হবে না বরঞ্চ আনন্দময় হয় । আমাদের বাসটি যখন ঝিনাইদহের চুয়াডাঙ্গা রোড বাস স্টপিচে দাঁড়ালো ঠিক সে সময় আমাদের গাড়িতে একজন অপরূপ রূপবতী সুন্দরী একটি মেয়ে উঠলো সুন্দর পিপাসিত চোখ যেন তার দিকে পড়ে রইলো । অপলক নয়নে কতক্ষন যে তার দিকে চেয়ে ছিলাম তা ঠিক বলতে পারবোনা তবে আমি যে তার রুপ সৌরভ উপভোগ করছি তা তাকে বুঝতে দেইনি । মেয়েটিও আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছিল। চোখে চোখ পড়তেই লাজুক লতার মত নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল। তা দেখে কিছু এলো মেলো কথা মনের মাঝে ঝড় তুলছিল যা কোন একসময় গান হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেল গানটি এরকম_

ভাষা ভরা দুটি চোখে মিটি মিটি চায়
বুঝিনা কি সে ভয় কি যে লজ্জ্বায়
চোখে চোখ পড়লেই মুখটা লুকায়
জানি না কি যেন সে বলতে চায় ।।

## ##
এসেছে ফাগুন দেখ প্রকৃতির গায়
অপ-রুপ রুপে সে যে হবে মধু ময়
গাছে গাছে যার পড়বে সাড়া
ঝির ঝির বায়ু এসে তাই কয়ে যায়।।

## ##
তারায় তারায় দেখ বসেছে মেলা
স্বপ্ন ময়ূর যেথায় খেলিছে খেলা
দুরের বাঁশি যার সুরে শুধু কয়
বলবে যা বল এসো এইতো সময়।

ইচ্ছে করছিল মেয়েটির সাথে কথা বলি ডেকে পাশে বসায় । কিন্তু বসাবো বা কি করে সিট তো সব ব্লক। আমার পাশে যে বসা, সে আমার কলিগ শুধু নই, বন্ধুও বটে । প্রতিবারের ন্যায় ঈদের ছুটিতে দু-জন এক সাথে যায় গ্রামের বাড়িতে। ওর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার, শৈলকুপা থানায়। কাছে অনেক কিছুই থাকে দুজন এক সাথে গেলে অনেকটা নিরাপদ বোধ করি আর জমপেস গল্প গুজোবও বেশ হয়। কিন্তু এখন আর ভাল লাগছেনা ইচ্ছে করছে ওকে তুলে দিই, কিন্তু এটাকি সম্ভব। ঝিনাইদহ শহর ছেড়ে কিছু দুর যেতেই বাসটির গেল পাংচাঁড় হয়ে । চাকা খুলে নতুন চাকা লাগাতে বেশ সময় লাগবে । কুষ্টিয়াতে পৌছতে আজ ঠিক সন্ধ্যা হবে । কুষ্টিয়ায় পৌছালে তো নই আমাকে আবার কুষ্টিয়া থেকে প্রায় ত্রিশ কিঃ মিঃ ভেতরে যেতে হবে। কি যে করি ! ইচ্ছে করলে অন্য বাসে চলে যেতে পারি কিন্তু যেতে মন চাইছে না। কি করে যায় হলুদিয়া পাখিকে ছেড়ে ? পাঠক মেয়েটি হলুদিয়া পাখি বললাম শুধু এই জন্য যে মেয়েটির গায়ের রঙ্গ ফর্সা, হালকা হলুদ বরণ, পরনে ছিল হলুদ জরজেটের উপর হাতের কাজ করা স্যালোয়ার কামিজ। দেখে ঠিক হলুদিয়া পাখি বলেই মনে হচ্ছিল । এক সময় চিন্তা করলাম আমান ভাইকে কোন মতে বিদায় করা যাই কিনা । লেগে গেলাম মন ভোলাবার কাজে। বুঝিয়ে সুঝিয়ে অন্য এক বাসে তুলে দিয়ে হায় ছেড়ে বাঁচলাম। ছিট টা খালি হয়ে গেল অনেকেই বসতে চেয়েছিল কিন্তু আমি কাউকে বসতে দেয়নি হলুদিয়া পাখিটি বসবে বলে । কিন্তু তাকে কি করে বলি আমার পাশে এসে শূণ্য ছিট খানায় বসতে যদি কিনা আমার প্রস্তাবটি সে রিফিউজ করে। লজ্জা সরম ভয় ভীতি সব মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে তাকে বসতে বললাম মেয়েটি আমার কথায় সম্মতি প্রকাশ করে আমার পাশে শূণ্য আসনটিতে এসে বসলো । এমন এক অপরূপ রূপবতী সুন্দরী মেয়েকে কাছে এবং পাশে পাওয়ায় যে রকম মন আনন্দে উদবেলিত হওয়ার কথা ছিল। তা না হয়ে অজানা এক ভয় শংকা মনকে গ্রাস করলো। এমনটি কেন হলো তা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি । আগে পরে এরুপ কখনো হয়নি। তবে পরে যা বুঝলাম অজানা অচেনা এমন কোন এক মেয়ের কাছে আমার মন, মনের অজান্তেই এতটা কাছে চলে গিয়েছিল যে সেটাই ছিল তার প্রভাব মাত্র । আমি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। হলুদিয়া পাখিটি বার বার ঘুরে ফিরে আমার দিকে তাকাচ্ছিল। তার ঐ দৃষ্টি দেখে আমার কাছে মনে হলো চোখ যুগল যেন আমাকে আলতো করে ছুয়ে গেল । তার মায়া ময়ি মুখ অবয়ব দেখেই আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম সে আমাকে কিছু একটা বলতে চাই । আমরা একে অপরকে কেউ কাউকে চিনি না। তার আর আমার মাঝে দূরত্ব আকাশ সমান যদিও পাখিটি আমারে পাশে বসা। দূরত্বটা কমানো দরকার । নিজেদের ভিতর ভাব বিনিময় হলে নিশ্চয় দূরত্বটা কমে যেত, কিন্তু কিভাবে শুরু করবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমার হাতে আমারি লেখা একটি কবিতা ছিল যা উপযাচোক হয়ে তাকে পড়তে দিলাম । আমার কবিতা তাকে পড়তে দেওয়ার উদ্দেশ্য এই নয় যে, আমি এক জন অখ্যাত লেখক তা তাকে জানানো। শুধু মাত্র নিজেদের মাঝে দূরত্ব কমানোর জন্যই তাকে আমার সে কবিতাটি পড়তে দেওয়া। কবিতাটি বেশ মনোযোগ সহকারে পড়লো তার পড়ার মনোযোগিতা দেখেই ঢের বুঝলাম পাখিটি বেশ সাহিত্য সাংস্কৃতি পিপাসু । লেখাটি পড়ে বেশ প্রশংসা করল । লেখালেখি অনেকেই হয়তো করে কিন্তু এমন একটা বিষয় যা আমি বেছে নিয়েছি তা মেয়ে হয়ে তার কাছে ভীষণ ভালো লাগে। লেখার হাত তততোটা পাকা না হলেও লেখার জন্য প্রশংসা একবারে কম কুড়ায়নি। তবে সেদিন তার মুখ থেকে লেখার প্রশংসা শুনে কেন যেন একটা আলাদা আনন্দ অনুভব করলাম। মনের বনে ফাগুণের হাওয়া দোলা দিল, কিন্তু কেন ? তার উত্তর আজ পর্যন্ত খুজে পায়নি । কবিতাটির রেশ ধরে তার সাথে অনেক কথাই হলো হলুদিয়া পাখিটির নাম ববি। সে এবার এস.এস. সি পরীক্ষার্থী, বাড়ি ঝিনাইদহে, বাবা একজন গাড়ী ব্যবসায়ী কিন্তু সঙ্গত কারণে ব্যবসাটা ছেড়ে দিয়েছেন । বোনের বাড়ি যাচ্ছে ঈদ করতে সামনে স্টপপিচে নামতে হবে । আর যে বেশি ক্ষন সে আমার পাশে থাকবে না একথা ভাবতেই খারাপ লাগছিল। খারাপ যে শুধু আমার লাগছিল তা কিন্তু নয় খারাপ তারও লাগছিল তা তার চোখের ভাষায় ছিল স্পষ্ট । সে যে আমাকে কিছু একটা বলতে চাই তা ঠিক বুঝতে পারছিলাম কিন্তুু বুঝেও না বুঝার ভান করে বসে রইলাম । যে যেটা চাই সে সেটা যদি মুখ ফুটে বলতে না পারে তবে তার সেটা নেবার/পাবার অধিকার নাই । কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়েটি না বলে আর পারলোনা চেয়েই বসলো আমার কন্টাক্ট নাম্বারটি। পকেটে কলম নেই কি করে দেই । আমার কাছে কলম না থাকাই মেয়েটি তার ভেনিটি ব্যাগ খুঁজতে থাকলো মেয়েটিও কলম খুজে পেলনা । এই কলমের জন্য তাকে আমার মোবাইল নাম্বারটি দিতে পারবোনা একথা ভাবতেই নিজেকে খুব ছোট বলে মনে হচ্ছিল। যে মানুষটি স্বপ্ন দেখে একজন কবি হবার সেই মানুষের কাছে লেখার জন্য নাই কিনা একটি কলম। এভেবে নিজেকে অনেকবার ধিক্ষার দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত পকেট থেকে মানিব্যাগ খুলে একটি অর্ডিনারি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়েছিলাম । তথি মধ্যে বাসটি এসে পড়েছে তার গন্তব্য স্থলে এবার তাকে বিদায় দিতে হবে। বিদায় দিতে গিয়ে রবি ঠাকুরের প্রখ্যাত কবিতাটি মনে পড়ে গেল। যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যাই । অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বিদায় দিতে হলো আমাকে ছেড়ে যেতে তার ও যে মন চাই ছিলনা। কিন্তু কি আর করার! ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছুই সম্ভব নয় । মেয়েটি আমার পাশ থেকে চলে গেলেও চলে যায়নি আমার মনের কাছ থেকে সব সময় তার কথা ভেবেছি চোখের আরশি থেকে তাকে একটি বারের জন্য সরাতে পারিনি। একটা ছবির মত মুখ,ঠিক ছায়ার মত, দিনে-রাতে যেখানেই আমি যায় সেখানেই, যা কিছু দেখি তার উপর একটা ছায়া যেন । মাঝে মাঝে এখনো অনুভব করি বাতাসে ওড়ানো তার আলতো চুলের পরশ । প্রতি দিন প্রতি মূহুর্ত কাটে তার ফোনের আসায়। ফোন বাঁজলেই আতকে উঠি। রিসিভ করি, ভাবি এই বুঝি ফোন দিল, এই বুঝি তার মায়া জড়ানো মধুমাখা সেই কন্ঠ ধ্বনি ভেসে আসলো। যখন দেখি না ! চাতকিয়া মন দারুন ব্যথায় ব্যথা হত হয়ে পড়ে। ক্ষত বিক্ষত হৃদয় পড়ে রয় চাতকিয়ার মত তার ফোনের প্রতিক্ষায় । কবে যে সে আমায় ফোন দেয়। ঈদের দিনে অনেকের ফোন পেয়েছি এস এম এস ও পেয়েছি অনেক, কিন্তু কোন কিছুতেই মন ভরেনি ব্যাকুল তৃষাই বসে ছিলাম তার ফোনের প্রতিক্ষায় আজও.......আছি..............থাকবো ।

সে যে সুন্দরী এক রুপবতী হলুদিয়া পাখি
অষ্ট প্রহর তার প্রতিক্ষায় দুচোখ মেলে থাকি।।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৭০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast