www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অফিসকক্ষে ভৌতিক সন্ধ্যা

বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে অফিসের সবাই যখন পাঁচ তারকা হোটেলে আমোদ-ফুর্তিতে মাতোয়ারা, আমি তখন কম্পিউটারের কিবোর্ড আর মাউস নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। কমিটির সদস্য হওয়ায় প্রথম দিন খানিকটা দায়-দায়িত্ব পালন করে এসেছি। প্রফেসর সোবহান সাহেবের পেপার বলে কথা। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। ভুলত্রুটি থাকা যাবে না। তাছাড়া বসের আল্টিমেটামতো আছেই। "আমি ১১ তারিখ দেশের বাইরে উড়াল দেব, সুতরাং ১০ তারিখের মধ্যেই আমার সব পেপার চাই।"

কয়েকটা রেফারেন্স পাওয়া যাচ্ছে না। হাইস্পিডের ইন্টারনেট ব্যবহার করে কয়েকটার বিহিত করলাম। একটা রেফারেন্স প্রফেসর সাহেবের "চ্যালেঞ্জিং পোভার্টি" বইয়ে পাওয়া যাবে বলে ধারণা হল। লাইব্রেরির ক্যাটালগারকে ফোন দিলাম। কেউ ফোন পিক করল না। ওহ! ভুলেই গিয়েছি অফিসে তো কেউ নেই। অগত্যা রবিবারের জন্য রেখে দিতে হল। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। দুচোখ শ্রান্ত। গন্ডদেশ চেয়ারের সাথে মনে হয় সেঁটে গেছে।

কম্পিউটারের স্ক্রিনে কালো অক্ষরগুলোকে কোন আনাড়ি শিল্পীর হাতে পেইন্ট করা সমুদ্রে পালতোলা জাহাজের ঢেউয়ের মত মনে হচ্ছিল। তাই সারাদিন খেটে-খুটে ভুলত্রুটি কতটুকু ঠিক করলাম, তা দেখতে পেপারটির হার্ড কপির প্রয়োজন অনুভব করলাম। প্রিন্ট কমান্ড দিয়ে কাগজ হাতে চার তলায় ছুট দিলাম। লেজার প্রিন্টার। ছ'মিলের করাতে প্রকাণ্ড কাঠের গুঁড়ি ফালি ফালি হয়ে বের হওয়ার মত করে দ্রূত বোথ সাইডে প্রিন্ট হয়ে গেল। প্রিন্টেড কাগজগুলিকে গুছিয়ে পাঁচ তলায় নিজের রুমে ছুটে গেলাম। কাগজগুলিকে স্ট্যাপ্লার দিয়ে পিন আপ করে টেবিলে রেখেই কম্পিউটার ডেস্কে ঘুরলাম। এরপর যা ঘটল, তা মনে হলে এখনও গা হিম হয়ে যায়। কিছুক্ষণ আগে যে প্রিন্ট আউট আমি টেবিলে রাখলাম অবিকল আরেক সেট প্রিন্ট আউট কম্পিউটার টেবিলে পিন-আপ করে রাখা! কোথা থেকে আসল? কে নিয়ে আসল? দুই সেট বার বার মিলিয়ে দেখছি। এ কি করে সম্ভব? হঠাত জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি, বিজাবন জঙ্গলের মাঝে পাঁচ তলা ভবনটির চারিপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কম্পিউটার বন্ধ করার অবকাশ পেলাম না। সরাসরি লাইন ডিসকানেক্ট করে পা চালিয়ে লিফট ধরলাম।

নিচে নেমে হাঁটতে হাঁটতে প্রকাশনা সহকারী বাহার সাহেবের কথা মনে পড়ল। সেদিন সকালে এসেই হুমড়ি খেয়ে আমার কক্ষে ঢুকে, হাঁপাতে হাঁপাতে বলছিল...স্যার স্যার জানেন গত রাতে কি ঘটেছে। কি ঘটেছে, বলেন! জানেন, আমি এক প্যাকেট বিরিয়ানির খানিকটা খেয়ে বাকি অংশ প্যাকেটে রেখে নিচে গেলাম। ১০-১৫ মিনিট পর এসে দেখি আমার বিরিয়ানির প্যাকেট উধাও! অথচ এই রাত ৯.০০টায় কারো এখানে আসার কথা নয়। সেদিন খুব হেসেছিলাম! আবার মেফতা স্যারের কথাও মনে হচ্ছিল। তিনি সেদিন হাসতে হাসতে বলছিলেন, আমানুল্লাহ সাহেব, উপরে একা একা ভয় পান নাতো? সেদিনও খুব হেসেছিলাম!
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৮১৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/১২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • গা ছমছমে ব‍্যাপার
  • ভয় করছেতো
  • আব্দুল হক ০৭/১২/২০১৭
    ভালো করেছেন, ধন্যবাদ!
  • তৌ‌ফিক ০৭/১২/২০১৭
    দূর্বল ম‌নের মানুষ আ‌মি, লেখাটা না পড়াই মঙ্গলজনক ছিল। অভ্যাশবশত: প‌ড়ে ফেললাম। এখন ডর ডর লাগ‌ছে।
 
Quantcast